প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও নির্মাণ কাজে হাত পড়েনি সংশ্লিষ্ট দপ্তরের

বশেমুরবিপ্রবি সংবাদদাতা: প্রকাশিত: জুন ৯, ২০২৪, ০৫:৩৮ পিএম

সময় পরিবর্তনের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয় ক্ষমতার। কিন্তু এই পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে অবকাঠামোগত উন্নয়নে আসেনা আশানুরূপ পরিবর্তন। উদাহরণটা ঠিক কচ্ছপ ও খরগোশের দৌড় প্রতিযোগিতার মত। এমনি বাস্তব চিত্র দেখা যায় ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ এর অধিকতর উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পে’। এখানকার প্রকল্প পাশ হওয়ার পরেও প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। একাধিকবার কনসালটেন্ট নিয়োগ দিতে হয়। একাধিকবার প্রকল্প সংশোধন করতে হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও ওয়ার্কস দপ্তর থেকে প্রাপ্ত সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়নে ‍‍`বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্প‍‍` পাশ হয়। ২০১৪ থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রথম মেয়াদে ১০৫কোটি টাকা বাজেট করা হয়। এসময় শিক্ষা ও প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্তৃক প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়৷

২০১৮ সালে নতুন করে ২৫০ কোটি টাকায় পূর্বের প্রকল্পটির প্রথম সংশোধনী পাশ হয়। এরপর ২০১৯সালে প্রকল্পটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও ওয়ার্কস দপ্তর এবং প্রকৌশল দপ্তরের নিকট হস্তান্তর করা হয়। এসময় নতুন করে পাশ হয় ভারটিক্যাল এক্সটেনশন সহ দুই হাজার আসন বিশিষ্ট একটি অডিটোরিয়াম ভবন নির্মাণ কাজ। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা দপ্তরের মাধ্যমে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত বৃদ্ধি করে। এসময় প্রকল্পের অন্তর্গত ১৪টি অঙ্গের মধ্যে হাতেগোনা কয়েকটি অঙ্গের কাজ শুরু করা হয়েছিলো। যার মধ্যে ছিল সিনিয়র শিক্ষকদের জন্য ৫ম তলা ঊর্ধ্বমুখী আবাসিক ভবনের সম্প্রসারণ কাজ, ৪০০ আসন বিশিষ্ট ছাত্র হল-০৩, ৪০০ আসন বিশিষ্ট ছাত্রী হল-০২ উল্লেখযোগ্য।

তখনও লোকচক্ষুর আড়ালে পড়ে থাকে প্রকল্পের অন্যতম একটি অঙ্গ দুই হাজার আসন বিশিষ্ট ‍‍`অডিটোরিয়াম ভবন‍‍`। প্রকল্পের মেয়াদ উত্তীর্ণ হলেও অডিটরিয়াম ভবন নির্মাণ করার জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়নি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। পরিকল্পনা করা হয়নি এর কার্যাদেশ নিয়ে। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি কীভাবে কাজটি শুরু হবে।

মূল প্রকল্পের মেয়াদ ২০২০সালে শেষ হয়ে যায়। পরে নতুন করে দ্বিতীয় মেয়াদে ২০২২সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের সর্বশেষ জরিপে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪টি অঙ্গের মধ্যে তখন পর্যন্ত ৪টি অঙ্গের কাজ ১০০% সম্পন্ন করা হয়েছে। কিন্তু বাকি ছিল ১০টি অঙ্গের কাজ। যেগুলোর কোনোটিই শতভাগ সম্পন্ন করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও ওয়ার্কস দপ্তর এবং প্রকৌশল দপ্তর। এরপর নতুন করে ২০২৩সালের নভেম্বর মাসে প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধনী পাশ করা হয়। এসময় পূর্বের প্রথম সংশোধনী থেকে মাত্র ২কোটি টাকা বৃদ্ধি করে ২৫২কোটি টাকা করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের জরিপে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পে নতুন করে যুক্ত হওয়া দুই হাজার আসন বিশিষ্ট অডিটোরিয়াম ভবন নির্মাণের জন্য আরডিপিতে বরাদ্দ করা হয় ৩৫কোটি ৭৫লক্ষ টাকা। কিন্তু এই অঙ্গের জন্য ধরা হয়নি প্রাক্কলিত মূল্য। করা হয়নি দরপত্র। কার্যাদেশও জারি করা হয়নি। এমনকি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানও নির্বাচন করা হয়নি ওই বছর। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পে দেখানো হয়েছে ঠিকাদার নির্বাচন প্রক্রিয়াধীন।

প্রকল্পের একটি অঙ্গ(অডিটরিয়াম ভবন) বাস্তবায়নে আরডিপিতে টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, এবং কাজ সমাপ্তির অর্থবছরও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কার্যাদেশ জারি করা হয়নি। এমনকি প্রকল্প বাস্তবায়ন করার জন্য একাধিকবার প্রকল্পে সংশোধন করা হয়েছে। তারপরেও কেন অডিটোরিয়াম ভবন নির্মাণের জন্য  ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়নি? আরডিপিতে বরাদ্দ থাকার পরেও কেন অডিটোরিয়াম ভবনটি নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়নি? এসব প্রশ্নের উত্তর জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও ওয়ার্কস দপ্তরের প্রধান তুহিন মাহমুদের সাথে। কিন্তু তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

একই প্রশ্নের উত্তর জানতে যোগাযোগ করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও ওয়ার্কস দপ্তরের সহকারী পরিচালক মাহবুবুর রহমান সুমনের সাথে। 

সুমন বলেন, প্রজেক্টের মেয়াদ ছিল ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। ওই সময় আমরা প্রথমে দুই হাজার আসন বিশিষ্ট অডিটোরিয়াম ভবন নির্মাণ করার পরিকল্পনা করেছি। যেটি দুই অথবা তিন তলা বিশিষ্ট হতে পারে। এরজন্য আরডিপিতে বরাদ্দ ছিল ৩৫কোটি ৭৫লক্ষ টাকা। কিন্তু আমাদের কনসালটেন্ট হিসেব করে দেখেছে, তৎকালে এই টাকার মধ্যে দুই হাজার আসন বিশিষ্ট অডিটোরিয়াম ভবন নির্মাণ করা সম্ভব না। চাইলে এই টাকার মধ্যে ৮০০ আসান বিশিষ্ট ভবন নির্মাণ করা সম্ভব। আমরা যদি দুই হাজার আসন বিশিষ্ট ভবন তৈরি করতে যাই তাহলে আমাদের প্রয়োজন ১০০কোটি টাকার মত। 

দুই হাজার আসন বিশিষ্ট অডিটোরিয়াম ভবন নির্মাণের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ৩৫কোটি ৭৫লক্ষ টাকা। কিন্তু এত আসন বিশিষ্ট অডিটোরিয়াম ভবন নির্মাণ করতে প্রয়োজন ১০০কোটি টাকা। তাহলে কি প্রকল্পটি আবারো সংশোধন করা হবে কিনা? 

এমন প্রশ্নের জবাবে সুমন বলেন, প্রকল্প সংশোধনের বিষয়টি অনেক সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। কিছু প্রকল্প আছে যেগুলো মন্ত্রণালয় থেকে সংশোধন করে দিতে পারে। আমরাও এই প্রকল্পটি সংশোধন করে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। মন্ত্রণালয় আমাদের এই প্রকল্পটি ২০২৩ সালের নভেম্বরে সংশোধন করে পাশ করে দিয়েছে। আর যদি এটি একেনেকে সংশোধন করা হতো তাহলে প্রকল্পের মেয়াদ আরো বেশি বৃদ্ধি পেয়ে যেত। তাই মন্ত্রণালয় থেকে সংশোধন পাশ করে ৮০০আসন বিশিষ্ট অডিটোরিয়াম ভবন নির্মাণ করার পরিকল্পনা করে দিয়েছে।

তিনি বলেন, প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি হয়ে যাওয়ার কারণে কনসালটেন্টের সাথে আমাদের চুক্তির মেয়াদও শেষ হয়ে গিয়েছিলো। ফলে আমরা নতুন করে কনসালটেন্টের নিয়োগের জন্য বিজ্ঞাপন দিয়েছি। হয়ত এই মাসের মধ্যে কনসালটেন্ট নিয়োগ হয়ে যাবে। এরপর আগামী ৩-৪মাসের মধ্যে আমরা অডিটোরিয়াম ভবনটি দৃশ্যমান করতে পারব বলে জানান তিনি।

অডিটোরিয়াম ভবন নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে অনেক শিক্ষার্থী সমালোচনার ঝড় তুলেছে। কেউ বলছে ৩৫ কোটি টাকার মধ্যে ২ হাজার আসান বিশিষ্ট অডিটোরিয়াম ভবন নির্মাণ সম্ভব না! আবার কেউ বলছে এত অল্প সময়ের মধ্যে কোনোভাবেই ভবনটি দৃশ্যমান করতে পারবেনা।

বিআরইউ