গণ-অভ্যুত্থান নস্যাৎ হতে পারে এমন আশঙ্কায় গত কয়েক দিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে মাঠের কর্মসূচি দেওয়া হচ্ছে। গত সোমবার সপ্তাহব্যাপী `রেজিস্ট্যান্স উইক` কর্মসূচি ঘোষিত হয়েছে৷ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, চার দফা বাস্তবায়িত না হওয়া পর্যন্ত তারা রাজপথে থাকবেন এবং কোনো ষড়যন্ত্র হলে সেটি ঠেকিয়ে দেবেন। রেজিস্ট্যান্স উইক কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল বৃহস্পতিবার শিক্ষার্থীরা শাহবাগে `সর্বাত্মক অবস্থান কর্মসূচি` পালন করেছেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দেওয়া ‘খুনি হাসিনার বিচারসহ’ চার দফা দাবিগুলো হলো--
১. ফ্যাসিবাদী কাঠামোকে ব্যবহার করে যেসব হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে, সেগুলোর দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হবে।
২. সংখ্যালঘুদের ওপর আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলসহ যারা পরিকল্পিত ডাকাতি ও লুষ্ঠনের মাধ্যমে গণ-অভ্যুত্থানকে বিতর্কিত করার প্রচেষ্টায় অংশগ্রহণ করেছে, তাদের বিচার নিশ্চিত করা।
৩. প্রশাসন ও বিচার বিভাগের যারা ছাত্র-জনতারঅভ্যুত্থানে হামলা, মামলা এবং হত্যাকাণ্ডকে বৈধতা দিয়েছে এবং ফ্যাসিবাদ বারংবার কায়েমের চেষ্টা করেছে, তাদের দ্রুততম সময়ে অপসারণ ও বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
৪. প্রশাসন ও বিচার বিভাগে যারা এতদিন বৈষম্যের শিকার হয়েছে, তাদের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।
শাহবাগের অবস্থান কর্মসূচিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম আওয়ামী লীগের নির্বাচন করার প্রসঙ্গে বলেন, আওয়ামী লীগ বিগত ১৬ বছরে জনগণের ওপর যে অত্যাচার-নির্যাতন করেছে, আগে তার হিসাব দিতে হবে, তার জন্য শাস্তি পেতে হবে। এরপর জনগণ নির্ধারণ করবে, তারা নির্বাচনে দাঁড়াতে পারবে কি না।
সারজিস আলম বলেন, ‘আওয়ামী লীগ তার আমলে এই সৎসাহস দেখায়নি, নিজের যোগ্যতায় অন্য কোনো দল ৫০টি আসন পাক। আওয়ামী লীগ চোরের মতো, ডাকাতের মতো ভোট না করে ভোট চুরি করে ৩০০ আসনে সদস্য বা প্রার্থী দিয়েছে । এরপর আরো ৫০ আসনে সংরক্ষিত মদদপুষ্ট প্রার্থী বসিয়েছে। এই ৩৫০ আসনের সবাই ফ্যাসিস্ট এবং ফ্যাসিস্টের আদর্শ লালনকারী ৷’
তিনি বলেন, শুধু এরাই নয়, পুরো বাংলাদেশে ফ্যাসিস্টদের লালন করে আওয়ামী লীগ-যুবলীগ-ছাত্রলীগের প্রতি ইউনিটে রক্তচোষা মানুষরা বসেছিল, তাদের কীভাবে নির্বাচনে অনুমতি দেওয়া হবে? এটা কোনোভাবে সম্ভব নয়। সবাইকে বিচারের আওতায় আসতে হবে।
আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, আগে বিচার নিশ্চিত হবে৷ দলটিকে স্বীকার করতে হবে সে ভুল করেছে। তারপর গণক্ষমার মধ্য দিয়ে, রাজনৈতিক শুদ্ধাচারের মধ্য দিয়ে মানুষ যদি তাদের গ্রহণ করে সেটি বিবেচনা সাপেক্ষ ৷ সেটি মানুষের বিষয় ।
হাসনাত বলেন, ‘সজীব ওয়াজেদ মোদিকে দ্রুততম সময়ে বাংলাদেশে নির্বাচনের ব্যবস্থা করার জন্য অনুরোধ করেছে। ছাত্র-জনতা থেকে তারা কতটা বিচ্ছিন্ন চিন্তা করেন, যার কারণে মোদিকে এমন অনুরোধ করতে হয়। এটা থেকে প্রমাণ হয় ২০১৪ সাল, ২০১৮ সালে এবং ২০২৪ সালের নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। মোদির ওপরে টেন্ডার দিয়ে যে তারা দেশ চালিয়েছে সেটা প্রমাণ হয়।’
তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে জনগণের কাছে আবেদন না করে মোদির কাছে আবেদন করায় দেশের সার্বভৌমত্ব প্রশ্নবিদ্ধ হয় । আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, আমেরিকায় বসে দেশের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার আপনার নেই।’
জয়কে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘আপনাদের নৌকা অনেক আগেই ফুটা হয়ে গেছে, নৌকার পাটাতন আপনাদের নেই। সুতরাং বৈঠা খুঁজে লাভ নেই। মোদির বৈঠা দিয়ে বাংলাদেশে নৌকা চালানোর আশা করবেন না।’
বিআরইউ