জবি থেকে ভিসি নিয়োগে একাট্টা শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা

জবি প্রতিনিধি: প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৭, ২০২৪, ১১:২৮ এএম
  • বাইরের উপাচার্য আসলে গেট-লক ঘোষণা 
  • বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থেই নিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উপাচার্য চায় শিক্ষকরা
  • বাইরের উপাচার্যরা বিশ্ববিদ্যালয়কে নিজের মনে করেন না

২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) বিশ বছরে পদার্পণ করতে যাচ্ছে। এ পর্যন্ত নিয়োগপ্রাপ্ত ছয় জন উপাচার্যের কেউই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসেনি। এ কারণেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা, গবেষণা ও অবকাঠামো খাতে উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন হয়নি। শুরু হয়েও থমকে আছে দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজসহ অবকাঠামোগত উন্নয়ন।

ছাত্র জনতার গনঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্টে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জবির সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম পদত্যাগ করেন। এরপরই নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের থেকেই উপাচার্য নিয়োগের দাবি তোলে শিক্ষার্থীরা। পরে যোগ দেন শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এক দফা দাবি নিয়ে একই ব্যানারে দাঁড়ায় সকলে।এই দাবিতে উপাচার্য জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) মধ্য হতেই আসতে হবে বলে একাট্টা হয়েছেন সবাই। নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের থেকে উপাচার্যের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে লাগাতার কর্মসূচি।

জানা যায়, গত ১৭ আগস্টে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম প্রথম জবি থেকে ভিসির দাবি জানিয়ে লেখালেখি করেন শিক্ষার্থীরা। পরে ধারাবাহিক ভাবে ২০ আগস্ট  ‍‍‘শিক্ষক-শিক্ষার্থী সমাবেশ‍‍’, ২১ ও ২২ আগস্ট লাগাতার শিক্ষক-শিক্ষার্থীর ‍‍`অবস্থান ও গণস্বাক্ষর কর্মসূচি পালন করা হয়। এতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা কর্মচারীগণের প্রায় পাঁচ হাজার স্বাক্ষর সহ স্মারকলিপি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আবেদনপত্র জমা দেওয়া হয়। 
এছাড়া গত ২৮ আগস্ট উপাচার্য নিয়োগ দেয়ার দাবিতে জমায়েত ও লিফলেট বিতরণ এবং রাতে গেইটলক ঘোষণা করে ব্যানার টানায় শিক্ষার্থীরা। লিফলেটে উপাচার্য নিয়োগের দশটি বড় উদ্দেশ্য উল্লেখ করা হয়। গত পহেলা সেপ্টেম্বর শিক্ষার্থী, ২ সেপ্টেম্বর শিক্ষক এবং ৩ সেপ্টেম্বর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে মতবিনিময় করে আন্দোলনরত শিক্ষকরা।

নিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উপাচার্য নিয়োগের গুরুত্ব উল্লেখ করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাইফুদ্দিন ইসলাম বলেন, আমরা ১৯ বছর ধরে একটি উপনিবেশের মধ্যে রয়েছি। অনেক সময় পার হয়ে গেছে। আমাদের ক্যাম্পাসে যোগ্য শিক্ষক রয়েছেন। তাঁদের মধ্য হতেই আমরা ভিসি চাই। আমি বিশ্বাস করি, জবি থেকে ভিসি হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধান হবে।

পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মাসুদ রানা বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে হতে গত ১৯ বছরে কোন ভিসি নিয়োগ দেওয়া হয়নি। প্রত্যেকবার এই ভিসি নিয়োগের বিষয়ে একটি অপশক্তি কাজ করে। যদি বাহির থেকে ভিসি আসে, তাহলে গেটে তালা ঝুলবে। ছাত্ররা নিজেদের অধিকার আদায় করা শিখে গেছে। এখন আর কোনো ধরনের অন্যায়, অবিচার,জুলুম আর সহ্য করা হবে না। ছাত্র জনগণ রক্ত দিতে শিখে গেছে। এখন আমাদের একটাই দাবি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে থেকে ভিসি চাই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র কর্মকর্তা ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক জহুরুল ইসলাম বলেন, যিনি বাহিরের বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকে উপাচার্য আসেন, তিনি কখনোই জবিকে নিজের মনে করতে পারেন না। তাঁরা নিজেদের সাজসরঞ্জাম গোছাতে ব্যস্ত থাকেন। তিনি নিজের মতো করে আরেকটা বলয় তৈরি করেন। নিজের উদ্দেশ্য হাসিল করেন। এখন সবার মত ও চাওয়া একটাই, এটা অবশ্যই মেনে নেওয়া উচিত।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. নাছির আহমাদ বলেন, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী সবাই ঐক্যবদ্ধ। সকলের দাবি একটাই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভিসি চাই। এ দাবি মেনে নেওয়া না হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মকর্তা- কর্মচারীরা আন্দোলন ছেড়ে যাবে না। 

একই কথা বলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বিলাল হোসাইন। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারীবৃন্দ সবাই আজ ঐক্যবদ্ধ রয়েছেন। সকলের ঐক্যবদ্ধ চেষ্টায় বিশ্ববিদ্যালয়কে গড়ে তুলতে হবে। আর এই কাজে উপাচার্য হিসেবে নেতৃত্ব দিবেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়েরই একজন শিক্ষক। জবির বাইরে থেকে কোনো উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার মেনে নিবে না।

বিআরইউ