‘বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পাশে বশেমুরকৃবির শিক্ষার্থীরা’

আমার সংবাদ ডেস্ক: প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৪, ১২:৫৯ পিএম

সাম্প্রতিক বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কৃষক ও কৃষি খাত। যার ক্ষতি কাটিয়ে উঠা সময়সাপেক্ষ ও চ্যালেঞ্জিং বিষয়। তবে বন্যা পরবর্তী কৃষিখাতের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় নানামুখী পরিকল্পনা নিয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

বন্যার্তদের কৃষি পুনর্বাসন কার্যক্রমের আওতায় তারা কৃষিতত্ব বিভাগের গবেষণা মাঠে ১ একর জমিতে বিনাধান-১৭ এবং বিআর-২৩ এর প্রায় ৩১০ কেজি বীজ বপন করেন।এসব বীজ আমন ধানের এমন জাত দেরিতে লাগালেও সঠিক মৌসুমেই ফসল দেয়।

এ বিষয়ে এমএস এ অধ্যায়নরত কৃষিতত্ত্বের শিক্ষার্থী মো.নাজিউর রহমান বলেন, ‘বিনা ১৭ হলো ট্রান্সপ্লান্টেড আমন ধান মানে বীজতলায় চারা করে তা মূল জানিয়ে দেয়া হয়, এটা যেহেতু আমন ধানের মৌসুম কিন্তু বন্যার পানিতে বীজ থেকে চারা উৎপন্ন করা যাচ্ছে না তাই আমরা চারা করছি। চারা হতে হতে পানি কমে গেলে তা রোপণ করা যাবে এবং সল্পসময়ের জাত হওয়ায় কৃষক দ্রুতই ফলন পাবে

আর বি আর ২৩ এমন একটি জাত যা পরেও রোপণ করা যায়।বন্যা কবলিত এলাকায় পানি নামার পরে এটি রোপণ করলেও ভালো ফলন আশা করা যায়

আর এই দুজাতেরই ফলন অন্যান্য জাত থেকে বেশি হয়ে থাকে বলে বন্যা কবলিত এলাকায় কৃষকদের মুখে হাসি ফুটবে বলে আমরা আশাবাদী’

এই বীজ থেকে উৎপাদিত চারা ফেনীর পরশুরাম উপজেলায়  প্রায় ৪০ বিঘা জমিতে এবং সোনাগাজী উপজেলায় প্রায় ২০ বিঘা জমিতে চাষাবাদের জন্য কৃষকদের সরবরাহ করার পরিকল্পনা রয়েছে৷ এই উদ্দেশ্যে উপজেলা কৃষি অফিসারের সহযোগিতায় মাঠপর্যায়ে কৃষকদের তালিকা করার জন্য শিক্ষার্থীদের   একটি দল ফেনীতে  অবস্থান করছে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬তম ব্যাচের মোয়াজ্জেম রনি জানান, ‘আমরা ঘুরে ঘুরে দেখছি যেসব জমিতে ধান চাষ করা হয় তাদের কতটুকু জমি রয়েছে এবং চারা রোপণের জন্য কি পরিমাণ লাগবে।উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আমাদের তথ্য সংগ্রহে সহযোগিতা করছেন।’

এছাড়াও গাজীপুর সদর কৃষি অফিস এবং বশেমুরকৃবি উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের যৌথ সহযোগিতায় প্রায় ০৮ ধরনের সবজি বীজ ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মাঝে বিতরণের কথা রয়েছে। এসব সবজির মধ্যে থাকছে লাল শাক,ডাটা শাক,লাউ,বরবটি,মুলা,ফুলকপি, শিম ও বশেমুরকৃবির গবেষণাকৃত বিশেষ তলোয়ার শিম।

বন্যার শুরুতে বন্যার্তদের জন্য ‘বন্যায় সহমর্মিতা তহবিলের আওতায়’ গত ২৯ আগস্ট কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলায় দুইশো এর অধিক পরিবারের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হয়। বন্যার্তদের সহযোগিতায় গঠিত তহবিলের এক চতুর্থাংশ ত্রাণ কার্যক্রমে খরচ হয় এবং বাকি অর্থ বন্যা কবলিত এলাকায় বশেমুরকৃবির ক্ষতিগ্রস্ত ও স্থানীয়দের বিভিন্ন বাস্তবসম্মত পুনর্বাসনে খরচ করার জন্য পরিকল্পনা করেছেন।

এসব নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ত্রয়োদশ ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. সালাহউদ্দিন খন্দকার জানান, ‘বন্যায় পরবর্তী সময়ে কৃষকদের কোন সম্বল থাকে না। নতুন ভাবে কিছু করার তাগিদে আমরা ধান চাষী দের জন্য ধানের চারা, সবজি চাষীদের জন্য সবজির বীজ দেওয়ার চেষ্টা করছি। অনেকের গবাদিপশু নানা রোগে আক্রান্ত,সেখানে আমরা আমাদের নিজস্ব ভেটেরিনারির দল চিকিৎসার জন্য পাঠিয়েছি। অনেকের পুকুরের মাছ বন্যায় পানির সাথে চলে যাচ্ছে, তাদের জন্য মাছের পোনা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

এছাড়াও ত্রাণ দেয়া হয়েছে এবং আমরা চেষ্টা করছি যাতে পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় তাদের সহযোগিতা করতে পারি। এক্ষেত্রে ঐ এলাকার আমাদের কিছু শিক্ষার্থীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের পাশে দাঁড়ানোটা আমরা অগ্রাধিকার দিচ্ছি।’

বশেমুরকৃবির এসব কার্যক্রম বন্যা পরবর্তী সময়ে কৃষকদের ক্ষয়ক্ষতি কিছুটা হলেও কমিয়ে আনবে বলে আশা করছেন শিক্ষার্থীরা।

বিআরইউ