বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ১৯ বছরেও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) থেকে হয়নি উপাচার্য নিয়োগ। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পর উপাচার্য পদ থেকে ড. সাদেকা হালিম পদত্যাগ করার পর বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই উপাচার্য নিয়োগের দাবি জানিয়ে আসছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
জবি থেকে উপাচার্য নিয়োগ না দিলে গেটলক কর্মসূচিও (প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না) ঘোষণা করেছেন তারা।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উপাচার্য পদে নিয়োগের জন্য ৩ জন সিনিয়র অধ্যাপক শুরু থেকেই জোরে-সোরে আলোচনায় আছেন।
তারা হলেন— ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. রইছ উদ্দিন, সমাজকর্ম বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম ও গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. পেয়ার আহমেদ।
অধ্যাপক ড. রইছ উদ্দিন কলা অনুষদের ডিন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন।
তিনি বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের সিইও হিসেবে স্বীকৃতি স্বরূপ একাধিক স্বর্ণপদক লাভ করেন। আমেরিকা, লন্ডন, প্যারিস, জেনেভা, কুয়ালালামপুরসহ অসংখ্য দেশের আন্তর্জাতিক সেমিনারে তিনি অংশ নেন। ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত অবস্থায় তিনি প্রভোস্ট, প্রক্টরসহ অসংখ্য প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনে দক্ষতার পরিচয় দেন। ৩০ টির উপরে তার গবেষণা প্রবন্ধ ইতোমধ্যে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
এছাড়া তিনি জবির বিএনপিপন্থি সাদা দলের সাধারণ সম্পাদক ও ‘ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’ (ইউট্যাব)- এর কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব। বিরোধীদলের রাজনীতির সাথে যুক্ত থাকার কারণে সাবেক উপাচার্য ড. মিজানুর রহমানের কাছে হেনস্তার শিকারও হয়েছেন একাধিকবার। এমনকি ২০১৪ সালে তাকে অধ্যাপক থেকে সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্বও কেড়ে নেন ভিসি মিজান। তবে অধ্যাপক ড. রইছ উদ্দিন শিক্ষার্থীদের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিজেকে প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে সরব থাকায় তার নাম সবার কাছে উচ্চ মহলে ও শিক্ষার্থীদের মাঝে জোরালো হচ্ছে।
শিক্ষার্থীদের মাঝে আলোচনায় থাকা অন্যতম ব্যক্তি হিসেবে আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. পেয়ার আহমেদ। তিনি বিজ্ঞান অনুষদের ডীন, সিন্ডিকেট সদস্য, অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল সদস্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের রুলস এন্ড রেগুলেশন প্রণয়ন সদস্যসহ আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। তিনি আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাকা ক্যাম্পাস), আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ইয়ামাগাটা বিশ্ববিদ্যালয় (জাপান) সহ দেশ ও দেশের বাইরে ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছেন। ক্যাম্পাসে তিনি একজন সুবক্তা, স্পষ্টবাদী, সৎ ও ন্যায়পরায়ণ শিক্ষক হিসেবে পরিচিত। দেশী -বিদেশি জার্নালে তাঁর ৪০ টির বেশি গবেষণা পত্র রয়েছে এবং বিভিন্ন পর্যায়ে তাঁর লেখা কয়েকটি পাঠ্যপুস্তক রয়েছে।
এছাড়া সমাজকর্ম বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম ১৯৮৬ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজকর্ম বিভাগের চেয়ারম্যান ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন হিসেবেও কাজ করেছেন। ২০০৮ সালে তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন এবং সমাজকর্ম বিভাগের চেয়ারম্যান ও সামজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এসময় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল রুলস রেগুলেশন তৈরিতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।
ভিসি নিয়োগের বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মাসুদ রানা বলেন, উপাচার্য নিয়োগে অবশ্যই জবির শিক্ষক হতে হবে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে যারা প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে সমর্থন দিয়েছেন, তাদের মধ্য থেকেই আমরা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য হিসেবে দেখতে চাই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন বলেন, সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খলভাবে একটি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হতে হলে ভারসাম্য রক্ষা করতে হয়। দুটি চেয়ারের একজন যদি একাডেমিশিয়ান হয়, অন্যজনের পলিটিক্যাল জ্ঞান থাকতে হবে।
এতে একদিকে গবেষণা, শিক্ষা ও শিক্ষকের মান ঠিক থাকবে, অন্যদিকে রাজনৈতিকভাবে সবাইকে একত্রিত রাখা ও বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা আনা সহজ হবে। এদিকে নিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভিসি নিয়োগের জন্য প্রত্যেক বিভাগে বিভাগে গণসংযোগ চালাচ্ছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
বিআরইউ