আলিয়া মাদরাসা শিক্ষা দিবস উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ মাদরাসা ছাত্রকল্যাণ পরিষদের উদ্যোগে সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেমিনারে বর্তমান আলিয়া মাদরাসা শিক্ষার ১০টি সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয়।
মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম হলে সংগঠনের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা অধ্যক্ষ মাওলানা যাইনুল আবেদীনের সভাপতিত্বে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন ঢাকা ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সামিরুল আলম।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ড. আব্দুছ ছবুর মাতব্বর, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের প্রফেসর ড. আকম আবদুল কাদের, ইসলামী চিন্তাবিদ ও গবেষক ড. আবুল কালাম আজাদ বাসার প্রমুখ।
সেমিনারে বক্তারা বলেন, আলিয়া মাদরাসার ছাত্ররা ভবিষ্যতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। মাদরাসার ছাত্ররা তথ্যপ্রযুক্তিতে অনেকটাই এগিয়ে গেছে। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেধা তালিকায় থাকা ছাত্র মাদরাসা থেকে পায়। সুতরাং মাদরাসার ছাত্রদের বাঁকা চোখে দেখার সুযোগ নেই। এখন গ্রামের মাদরাসাগুলোও শিক্ষা দিক্ষায় এগিয়ে গেছে। সামনের দিনে মাদরাসা শিক্ষার্থীরা স্কুলকলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সমানভাবে এগিয়ে যাবে। আলিম হওয়ার জন্য যেমন আরবি জানার বিকল্প নেই তেমনি যুগোপযোগী আলিম হওয়ার জন্য একাধিক ভাষা-জ্ঞানের ওপর কোরআন-হাদিসের আলোকে উপস্থাপনের সক্ষমতা বা দক্ষতা অর্জন করতে হবে।
সেমিনারে আলোচনায় আসা আলিয়া মাদরাসা শিক্ষার ১০টি সমস্যা হলো-
১। আলিয়া মাদরাসা শিক্ষা সংশ্লিষ্ট অফিসে, উইং-মাদরাসা বোর্ড, মাদরাসা শিক্ষা অধিদফতর, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাদরাসা উইং, আরবি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শাখায় মাদরাসা শিক্ষিতদের নিয়োগ প্রেষণে পদায়ন করতে হবে।
২। আলিয়া মাদরাসা শিক্ষার সিলেবাস-কারিকুলাম প্রণয়নে মাদরাসা শিক্ষায় শিক্ষিতদের নিয়ে কমিশন ও কমিটি গঠন করতে হবে।
৩। শিক্ষকদের জন্য প্রশিক্ষণ একটি নিয়মিত কর্মসূচি। প্রশাসনিক ও বিষয় ভিত্তিক সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের আপডেট রাখার জন্য প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই। প্রতিটি জেলার শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে মাদরাসা শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
৪। মাদরাসা শিক্ষা তদারকি করার জন্য সরকারিভাবে জেলা, উপজেলা ও থানা পর্যায়ে মাদরাসা শিক্ষায় শিক্ষিত ডিইটিইও নিয়োগ করতে হবে।
৫। আলিয়া মাদরাসা শিক্ষার রিক্রুটিং সেন্টার নামে খ্যাত ইবতেদায়ী মাদরাসা স্থাপনের বন্ধ পথ খুলে দিতে হবে। স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসাকে জাতীয়করণ করতে হবে। রেজিস্টার্ড ইবতেদায়ী মাদরাসা চালু করতে হবে। বেসরকারিভাবে ভাড়া বাড়িতে প্রাইভেট মাদরাসা চালু করার অনুমতি দিতে হবে।
৬। ক্লাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে প্রশিক্ষিত শিক্ষকের মাধ্যমে শিক্ষাকে শিক্ষার্থীদের কাছে উপভোগ্য ও উপজীব্য করে উপস্থাপন করতে হবে। শ্রেণিকক্ষের পড়া শ্রেণিকক্ষে বা পরেরদিন আদায় করার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করতে হবে।
৭। শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাদরাসার বাইরে ও ভেতরে মুয়া`মালাত ও মুয়া`শারাতের অনুশীলনে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। আলিয়া মাদরাসার উচ্চতর শ্রেণিতে ভর্তিতে অনীহা দূর করতে হবে।
৮। শিক্ষার্থীদের মধ্যে জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ করার জন্য নিয়মিত কাউন্সিলিং করতে হবে। যেমন- জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ, মাদরাসা শিক্ষায় শিক্ষিত হলে তারা কী অর্জন করতে পারবে তা পরিষ্কার করে তাদের সামনে বর্ণনা করা, আন্তর্জাতিক দুটি ভাষা আরবি ও ইংরেজি শেখার পাশাপাশি মাতৃভাষা বাংলা, অঙ্ক ও আইটিতে দক্ষ করা।
৯। আলিয়া মাদরাসা শিক্ষাঙ্গনে সহশিক্ষার বিষবাষ্পে পরিবেশ ভারি হয়ে উঠছে। এই সহশিক্ষার কারণে শিক্ষার্থীরা ঝড়ে যায় বা অভিভাবকেরা তাদের সন্তানকে মাদরাসায় পাঠাতে নিরুৎসাহিত হয়।
১০। সর্বোপরি পাবলিক ইউনিভার্সিটিতে উচ্চশিক্ষার জন্য ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হলেও বা ভালো ফলাফল করলেও তাকে ভালো কোনো সাবজেক্ট দেওয়া হয় না। চাকরির ক্ষেত্রে একই অবস্থা আলিয়া মাদরাসা শিক্ষায় উত্তীর্ণ চাকরিপ্রার্থী লিখিত পরীক্ষায় প্রথম হলেও বা ভালো ফলাফল করলেও প্রতিহিংসুকরা তাদের বাদ দিয়ে দেয়। অবকাঠামো উন্নয়নে সরকার, জনপ্রতিনিধি, আমলারা বিমাতাসুলভ দৃষ্টিতে দেখে। এমন বিমাতাসুলভ আচরণ বন্ধ করতে হবে।
রহিম/ইএইচ