বৈষমবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিগত সময়ে স্বৈরাচার হাসিনার মদদপুষ্ট চাঁদাবাজ, মাদকব্যবসায়ী ও শিক্ষার্থী নির্যাতনকারী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের একাংশের পরিচয় প্রকাশ করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্ট এলাকায় এসব ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ছবিসহ সংক্ষিপ্ত পরিচয় দিয়ে ব্যানার টাঙিয়ে দিয়েছেন তারা। ফটকের পাশে দেওয়ায় জিরো পয়েন্ট দিয়ে যাতায়াতকারী প্রায় সকলের দৃষ্টিগোচর হচ্ছে ব্যানারটি।
ছবি দিয়ে জনসম্মুখে এভাবে পরিচয় প্রকাশ করায় প্রশংসা করছেন অনেকেই।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ক্ষমতায় থাকাবস্থায় ক্যাম্পাসগুলোতে একক আধিপত্য বিস্তার করে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল ছাত্রলীগ। আবাসিক হলগুলোতে প্রায় শিক্ষার্থীকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে করতে হতো ছাত্রলীগের রাজনীতি। হলে থেকে তাদের মিছিল-মিটিংয়ে না গেলে জুটতো কঠিন শাস্তি। ইচ্ছে করলে হল থেকে বেরও করে দিতো তারা। এভাবে নানা নির্যাতনের কারাগার হয়ে উঠেছিল বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।
ব্যানারটিতে উল্লেখ করা হয়েছে শাখা ছাত্রলীগের ৩০ জন নেতাকর্মীর নাম। তারা হলেন-
প্রদীপ চক্রবর্তী দুর্জয় (ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, ২০১০-১১সেশন), আহসান হাবিব সোপান (ইতিহাস বিভাগ, ২০১২-১৩ সেশন), সাদেক হোসেন টিপু (যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ২০১২-১৩ সেশন), মিজান শেখ (আইন বিভাগ, ২০১৩-১৪ সেশন), শরীফ উদ্দীন (ইসলামিক স্টাডিজ, ২০১৩-১৪ সেশন), আবরার শাহরিয়ার (অর্থনীতি বিভাগ, ২০১৩-১৪ সেশন), মীর্জা খবির সাদাফ খান (আইন বিভাগ, ২০১৪-১৫ সেশন), শিবলু চৌধুরী (শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, ২০১৪-১৫ সেশন), মাহফুজুল হুদা লোটাস (নাট্যকলা বিভাগ, ২০১৪-১৫ সেশন), ইয়াসিন আরাফাত (আইন বিভাগ, ২০১৫-১৬ সেশন), সৌমেন দত্ত (স্পোর্টস সায়েন্স বিভাগ, ২০১৫-১৬ সেশন), মাশরুর কামাল অনিক (উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগ, ২০১৫-১৬ সেশন), আরিফুল ইসলাম আরিফ (সমাজতত্ত্ব বিভাগ, ২০১৫-১৬ সেশন), সাখাওয়াত হোসেন (নৃবিজ্ঞান বিভাগ, ২০১৫-১৬ সেশন), ইসহাক আলম ফরহাদ (অর্থনীতি বিভাগ, ২০১৫-১৬ সেশন), ওয়াহিদুল ইসলাম (যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ২০১৬-১৭ সেশন), বখতিয়ার (আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ২০১৬-১৭ সেশন), আফ্রিদি নিটো (মার্কেটিং বিভাগ, ২০১৭-১৮ সেশন), হাবিবুর রহমান সুমন (বাংলা বিভাগ, ২০১৭-১৮ সেশন), খালেদ মাসুদ (আইন বিভাগ, ২০১৭-১৮ সেশন), আবুল মনসুর আবেদীন (ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, ২০১৮-১৯ সেশন), আলফাত রাব্বাকিয়ান মামুন (যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ২০১৮-১৯ সেশন), শফিকুল ইসলাম শাওন (পদার্থবিদ্যা বিভাগ, ২০১৮-১৯ সেশন), সজীব মন্ডল ((ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, ২০১৮-১৯ সেশন) রাকিবুল হাসান দিনার (নাট্যকলা বিভাগ, ২০১৮-১৯ সেশন), হানজালা বিন ইউসুফ (২০১৮-১০ সেশন), আরাফাত রায়হান (সমাজতত্ত্ব বিভাগ, ২০১৮-১৯ সেশন), শাকিল আহমেদ (ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ, ২০১৮-১৯ সেশন), আল আমিন হোসেন তুষার (লোকপ্রশাসন বিভাগ, ২০১৯-২০ সেশন) এবং মমিনুর রহমান আসিফ (আরবি সাহিত্য, ২০১৯-২০ সেশন)।
ব্যানারে প্রকাশিত এসব ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ছাত্রত্ব বাতিল চেয়ে চবির ২০২২-২৩ সেশনের আরবি সাহিত্য বিভাগের মিফতাহুল আবেদীন আশিক জানান, এরা ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর হিসেবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর নির্যাতন চালিয়েছে। অনতিবিলম্বে তাদের ছাত্রত্ব বাতিল করতে হবে এবং সকল সরকারি চাকরি থেকে অব্যাহতি দিয়ে আইনের হাতে তুলে দিতে হবে। এছাড়া, ক্যাম্পাসে যেনো কোনোভাবেই পুনর্বাসিত হতে না পারে সে বিষয় চবি প্রশাসনের সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
চবির আরেক শিক্ষার্থী ২০২২-২৩ সেশনের বাংলা বিভাগের আশিক মিয়া বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এরা প্রকাশ্যে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতো। বিভিন্ন সময় শিক্ষার্থীদের মারধর, হয়রানি, ভয়ভীতি প্রদর্শন, ক্যাম্পাসে চাঁদাবাজিসহ এমন কোনে হীন অপকর্ম নেই যা তারা করেনি। সর্বশেষ জুলাই অভ্যুত্থানে আন্দোলনের সাথে জড়িত শিক্ষার্থীদের উপর হামলা, তাদেরকে মেরে রক্তাক্ত করা, নারী-শিক্ষার্থীসহ এমনকি সাংবাদিকদের উপর হামলাসহ অনেক প্রমাণিত অভিযোগ আছে তাদের বিরুদ্ধে।
এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় ও চট্টগ্রামের প্রধান সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি বলেন, ব্যানারে উল্লেখিতসহ আরও যারা নিপীড়ন এবং অপরাধের সাথে জড়িত ছিল আমরা তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অবগত করছি। এছাড়াও, ভুক্তভোগীদেরকে তিনি চবি প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানাতে ও প্রয়োজনে মামলা দায়ের করতে অনুরোধ জানান তিনি।
ইএইচ