জুলাই বিপ্লবের ক্যালেন্ডারে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়

এনামুল হোসেন, ববি প্রকাশিত: অক্টোবর ২১, ২০২৪, ১২:৫৩ পিএম

২০১৮ সালের সরকারি পরিপত্রকে বেআইনি ঘোষণার মাধ্যমে বাংলাদেশ হাইকোর্ট কর্তৃক সরকারি চাকরিতে পূর্বেকার কোটাব্যবস্থা পুনর্বহাল করলে সূচনা হয় ২০২৪ সালের ‍‍`কোটা সংস্কার আন্দোলন‍‍`।

তবে তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দমন-পীড়ন, সশস্ত্র ও সহিংস হামলায় হাজার মানুষের প্রাণহানিতে সে আন্দোলন দীর্ঘ পনেরো বছরের সঞ্চিত ক্ষোভের স্ফুলিঙ্গ দানবীয় শোষণ-শাসনের বিরুদ্ধে গিয়ে বাজিয়ে দেয় একটি ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের ঘণ্টা।

জুলাই-আগস্টে ঘটে যাওয়া বাংলাদেশের দ্বিতীয় এই রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের প্রত্যক্ষ সাক্ষী দক্ষিণবঙ্গের অন্যতম বিদ্যাপীঠ বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি)।

বৃষ্টিতে ভিজে আর রৌদ্দুরে পুড়ে তারুণ্যের এক অস্থির সংগ্রামী সময়ের নানান গল্প মিশে আছে এই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের প্রতিটি কোনা থেকে রাজপথে।

শুরুতেই ৯ জুন প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকুরিতে কোটা পুনর্বহাল নিয়ে হাইকোর্টের আদেশের প্রেক্ষিতে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন ববি শিক্ষার্থীরা।

এদিন প্রধান ফটকে সকাল ১১ টা থেকে এক ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। ঐদিন এক শিক্ষার্থীর পিঠে ‍‍`কোটা নিপাত যাক‍‍` আরেক শিক্ষার্থীর পিঠে ‍‍`মেধাবীরা মুক্তি পাক‍‍` লেখা যেন স্বৈরাচারী এরশাদ শাসনের পতনের আন্দোলনের প্রতিচ্ছবি ভাসিয়ে তুলছিল উপস্থিতদের মাঝে।

১ জুলাই

ঈদুল আজহার দীর্ঘদিনের ছুটির পর সবেমাত্র ক্যাম্পাস খুলেছে তখন। চলছে প্রত্যয় পেনশন স্কিম নিয়ে শিক্ষকদের কর্মবিরতি। এদিন বৈষম্যমূলক কোটা বাতিলের দাবিতে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ পালন করেন ববি শিক্ষার্থীরা।

২ জুলাই

দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এসময় তারা আঠারোর হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার। জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে। লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে। আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম। মুক্তিযুদ্ধের বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই- ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।

৩ জুলাই

সকাল সোয়া ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়ক ধরে অবরোধ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধা-ভিত্তিক নিয়োগ, নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না, কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরিতে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দেওয়া এবং কোটাকে ন্যূনতম পর্যায়ে নিয়ে আসা, দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধা-ভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করাসহ চার দফা দাবি বাস্তবায়িত না হলে লাগাতার আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন তাঁরা।

৪ জুলাই

চতুর্থ দিনের মতো বিক্ষোভ কর্মসূচি অব্যাহত রাখেন শিক্ষার্থীরা। এদিন দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন তাঁরা। এ সময় সেখানে তাঁরা সমাবেশ করেন এবং বই পুড়িয়ে কোটাপদ্ধতি বাতিলের দাবি জানান। দুপুরের দিকে অবরোধ চলাকালীন ববির তৎকালীন উপাচার্য মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভুঁইয়া শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক ছেড়ে ক্যাম্পাসের ভিতর আন্দোলন করতে অনুরোধ জানাতে আসলে শিক্ষার্থীরা তার কথা তার সামনেই প্রত্যাখান করেন এবং মহাসড়কেই আন্দোলন চালিয়ে যান।

তবে, এর কিছুক্ষণের মধ্যে তুচ্ছ একটি ঘটনার জন্ম হয়। যাকে কেন্দ্র করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে নামধারী ছাত্রলীগের এক কর্মীর বাকবিতণ্ডা শুরু হলে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। এসময় নামধারী ছাত্রলীগের কিছু নেতা-কর্মীরা শিক্ষার্থীদের মহাসড়কে অবরোধের জন্য তৈরি বেষ্টনী ছুড়ে ফেলে দিয়ে অবরোধ কর্মসূচি ভন্ডুল করে। এদিন ছাত্রলীগের হামলায় আন্দোলনরত এক শিক্ষার্থী ও ক্যাম্পাস গণমাধ্যমকর্মী আবু উবায়দার ছাত্রলীগ কর্তৃক লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনা ঘটে।

৭-১০ জুলাই

কোটা সংস্কার ও চার দফা দাবিতে সারাদেশের শিক্ষার্থীদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে মহাসড়ক অবরোধ করে টানা চারদিন ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। এসময় সকাল-সন্ধ্যা ব্যাপী ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়কে অবরোধ চলমান ছিল। এর মধ্যে ৯ জুলাই সন্ধ্যায় শিক্ষার্থীরা এ আন্দোলনে প্রথমবারের মত মশাল মিছিল বের করেন।

১১ জুলাই

এদিন দুপুর ২টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনের ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়কে অতিরিক্ত পুলিশের মোতায়েন ঘটে। শিক্ষার্থীরা মহাসড়কে অবরোধ কর্মসূচি পালন করতে চাইলে তাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটক আটকানোর চেষ্টা করে পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে অতিরিক্ত পুলিশের উপস্থিতিতে তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়েন শিক্ষার্থীরা। এরপর আবাসিক হল এবং অন্যান্য স্থান থেকে একে একে বিপুল পরিমাণ শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে মূল ফটকের সামনে থেকে পুলিশ হটিয়ে রাজপথ দখলে নেন। এদিন সন্ধ্যায় শিক্ষার্থীদের মোমবাতি প্রোজ্জ্বলন কর্মসূচিতে জনসমুদ্রে রূপ নেয় ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়ক।

১৪ জুলাই

বৈষম্যমূলক কোটা ব্যবস্থা নিরসনের জন্য সংসদে আইন পাশের লক্ষ্যে জরুরি অধিবেশন আহ্বান এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে নগরীর বেলস পার্ক থেকে পদযাত্রা করে বরিশাল জেলা প্রশাসক শহিদুল ইসলাম বরাবর স্মারকলিপি দেন শিক্ষার্থীরা। এদিন সন্ধ্যায় প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা ও মশাল মিছিল কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা।

১৫ জুলাই

১৪ জুলাই শেখ হাসিনা তার এক বক্তব্যে কোটা আন্দোলনকারীদের পরোক্ষভাবে “রাজাকারের নাতি-পুতি” হিসেবে অভিহিত করলে সেই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া হিসেবে সারাদেশের মতো মাঝরাতে মিছিল-স্লোগানে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ববি ক্যাম্পাস। দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে শিক্ষার্থীরা হল থেকে বেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়কে মিছিল করে গ্রাউন্ড ফ্লোরে জড়ো হন। এসময় তারা শেখ হাসিনাকে ব্যঙ্গ করে, ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার-রাজাকার’, ‘কে বলেছে কে বলেছে, সরকার-সরকার’, ‘চাইলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন। এদিন দুপুরে শেখ হাসিনার বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে দুপুর ৩টার মধ্যে বিক্ষোভ শেষ চলে যেতে থাকেন শিক্ষার্থীরা।

কিন্তু ঐদিন বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা, মারধর ও সংঘর্ষে শতাধিক আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী আহতের ঘটনা শুনে আবারো উত্তাল হয়ে উঠে ববি ক্যাম্পাস। সন্ধ্যার পর থেকেই নিজ ক্যাম্পাসে সম্ভাব্য সন্ত্রাসী হামলা রুখে দিতে লাঠি হাতে জনসমুদ্রে রূপ নেয় অবরুদ্ধ মহাসড়ক।

১৬ জুলাই

রাতভর জাবি, ঢাবিসহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের  শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ ও ছাত্রলীগের নগ্ন হামলার প্রতিবাদে বেলা ৩টায় বরিশাল শহর থেকে মিছিল নিয়ে দপদপিয়া সেতু পার হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন শিক্ষার্থীদের একাংশ এবং আবাসিক হল থেকে আসা শিক্ষার্থীদের একটি মিছিল এসে একত্রিত হয়ে ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করেন।

বিক্ষোভ চলাকালীন মুহূর্তে রংপুরের বেরোবি শিক্ষার্থী আবু সাঈদসহ অন্যান্যদের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে আরো উত্তপ্ত হয়ে উঠে রাজপথ। এদিন প্রায় সাড়ে ৬ ঘণ্টা অবরোধ থাকে মহাসড়ক।

১৭ জুলাই

অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ বন্ধ ঘোষণার পর বেলা ৩টার মধ্যে ববি শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দিলে সকালে হলগুলো থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বের হন শিক্ষার্থীরা। সেদিন হল না ছাড়ার ঘোষণা দিয়ে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নিহত শিক্ষার্থীদের স্মরণে বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে গায়েবানা জানাজা ও কফিন মিছিল পালন করেন। এরপর সন্ধ্যায় সারাদেশে কোটা আন্দোলনে শহীদ শিক্ষার্থীদের স্মরণে ও অধিকার আদায়ের আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের আত্মত্যাগ পরবর্তী প্রজন্মকে জানানোর জন্য ববি শিক্ষার্থীরা একটি শহীদ বেদি নির্মাণ করেন।

এছাড়াও এদিন রাতে ববির আবাসিক হলগুলোতে ছাত্রলীগ ও বহিরাগতদের হামলার শঙ্কায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সেসময় শিক্ষার্থীদের উৎকণ্ঠা কাটাতে উপাচার্য প্রক্টর, সহকারী প্রক্টরসহ আবাসিক শিক্ষার্থীদের সাথে দেখা করতে আসেন এবং শিক্ষার্থীদের সাথে ক্যারাম খেলে আলোচনা-সমালোচনায় আসেন তৎকালীন উপাচার্য।

১৮ জুলাই

ববির ইতিহাসে স্মৃতিবিজড়িত অধ্যায়ের মধ্যে ১৮ জুলাই অন্যান্য দিন হয়ে থাকবে। সারাদেশে ‍‍`কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচির দিনটিতে সকাল ১০টার মধ্যে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, এবিপিএনের উপস্থিতি ঘটতে থাকে ব্যাপক হারে। আর শিক্ষার্থীরা সাড়ে ১০টা থেকে প্রশাসনিক ভবনের নিচে জড়ো হতে থাকে। বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস থেকে মহাসড়কে বের হতে চাইলে, পুলিশ তাদের প্রধান ফটকের ভেতরে আটকে রাখার চেষ্টা চালায়। এরপর শিক্ষার্থী-পুলিশ কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে শুরু হয় সংঘর্ষ।

সংঘর্ষে টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছুড়তে থাকে যৌথবাহিনী। এতে অর্ধশতাধিক এরও বেশি শিক্ষার্থী আহত হলে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করা শুরু করেন। এসময় পুলিশ সদস্যরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পিছু হটে। এর পরপরই শিক্ষার্থীরা হাতে লাঠিসোঁটা নিয়ে ঢাকা-কুয়াকাটা ও বরিশাল-ভোলা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের মাইকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা তাদের পাশে স্থানীয়দের এগিয়ে আসতে অনুরোধ জানান। স্থানীয়রাও একাত্মতা প্রকাশ করে সড়কে নেমে পড়েন।

এদিকে শিক্ষার্থীদের মহাসড়কে অবস্থানের কিছুক্ষণ পর খয়রাবাদ সেতুর প্রান্তে আটকে পড়ে পুলিশ, র‌্যাব, এপিবিএন পুলিশ সদস্যরা। তারা বরিশাল নগরমুখী হতে চাইলে শিক্ষার্থীরা তাদের বাধা দেয়। পরে ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চাইলেই আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ব্যারিকেড দিয়ে তাদের দপদপিয়া সেতু পর্যন্ত এগিয়ে দেয়। ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের এহেন আচরণের জন্য শিক্ষার্থীরা তৎকালীন উপাচার্য ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকেই দায়ী করেন।

এদিন আহত শিক্ষার্থীদের শেরে-ই- বাংলা মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়। ক্যাম্পাসে আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা দিতে ছুটে আসে

বরিশালের সাউথ অ্যাপোলো মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদেরকে দুপুরের খাবার রান্না করে খাওয়ান স্থানীয়রা এবং প্রশংসায় ভাসেন।

১৯ জুলাই

প্রশাসনিক চাপে এদিন রাতে হল ছেড়ে যান শিক্ষার্থীরা। অনেকেই দেশের চলমান কারফিউতে পড়েন বিপদে। বন্ধু কিংবা পরিচিতদের মেসে ঐ রাতে আশ্রয় নেন শিক্ষার্থীরা।

২৭ জুলাই

হল খোলা, বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন সাধারণ জনগণকে হয়রানি না করা, শিক্ষার্থীদের বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক কোন ধরনের হয়রানি না করা, ছাত্র সংসদ নির্বাচন ও ক্যাম্পাসে নিরাপদ ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিতের চার দফাসহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘোষিত নয় দফা দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন শিক্ষার্থীরা।

২৯ জুলাই

কোটা সংস্কার আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী শিক্ষার্থীদের পরবর্তী কর্মপরিকল্পনা নিয়ে চলা মিটিংয়ে ববি ছাত্রলীগের পরিচয়ধারী নেতা আরাফাত, শান্ত, রুমি, তমাল গ্রুপের নেতৃত্বে ২০-৩০ জন লাঠিসোটা দিয়ে হামলা চালিয়ে অন্তত ১০ জন আন্দোলনকারীকে গুরুতরভাবে আহত করে।

১ আগস্ট

দেশব্যাপী ছাত্র হত্যা এবং শিক্ষক লাঞ্ছনার প্রতিবাদে ছাত্র-শিক্ষক সংহতির কর্মসূচিতে যোগ দিতে আসলে সমন্বয়কসহ ১২ শিক্ষার্থীকে আটক করে পুলিশ। পরবর্তীতে কয়েকজন শিক্ষকের জিম্মানামা নিয়ে তাদের মুক্তি দেওয়া হয়। এদিন পরিচয়ধারী ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের নেতা কর্মীরা একত্রিত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় অবস্থান নিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন এবং উপস্থিত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার চেষ্টা চালান। সেসময় পুলিশের প্রেস ব্রিফিংয়ের সামনে থেকে জোর করে সরিয়ে নিয়ে ক্যাম্পাস গণমাধ্যমকর্মী মাসুদ রানাকে হেনস্তা করেন ছাত্রলীগের পরিচয়ধারী নেতা আবুল খায়ের আরাফাত ও তার অনুসারীরা।

৩ আগস্ট

নিপীড়ন বিরোধী শিক্ষকসমাজের পক্ষ থেকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৫ জন শিক্ষক বৈষম্যবিরোধী ছাত্রসমাজের ওপর হত্যা, নিপীড়ন ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়ে এক যৌথ বিবৃতি দেন। এরপর ৪ আগস্ট এক ভার্চুয়াল সভায় তৎকালীন উপাচার্য বদরুজ্জামান ভূঁইয়াসহ আওয়ামী লীগঘেঁষা ও ববি শিক্ষক সমিতির কয়েকজন শিক্ষক এ বিবৃতির বিষয়ে কৈফিয়ত চান এবং তাদের হুমকি দেন বলে অভিযোগ তুলেন ভুক্তভোগী শিক্ষকরা।

সর্বশেষ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জনতার একদফা স্বৈরাচার পতনের আন্দোলনে রূপান্তরিত হলে ববি শিক্ষার্থীরাও মিশে যায় জনস্রোতে। বরিশাল নগরীর নতুল্লাবাদ-চৌমাথা এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে নিজ নিজ অবস্থান থেকে আন্দোলনে যুক্ত থাকেন ববি শিক্ষার্থীরা। এরপর ৫ আগস্ট দেশের নতুন স্বাধীনতার বীজ বপন হলে ক্যাম্পাসে ফিরে আসেন শিক্ষার্থীরা।

ইএইচ