রাবির ৪টি হলে অর্ধ পোড়ানো কোরআন উদ্ধার, তদন্ত কমিটি

রাবি প্রতিনিধি প্রকাশিত: জানুয়ারি ১২, ২০২৫, ০৭:২৮ পিএম

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ৪টি আবাসিক হলে রাতের আঁধারে কোরআন শরীফের কিছু অংশ পুড়িয়ে রেখে গেছে দুর্বৃত্তরা। এ সময় একটি হলের দেয়ালে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) লোগো এঁকে দিয়ে গেছে তারা।

শনিবার মধ্যরাতে কোন এক সময় এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

ঘটনা তদন্তের জন্য ৯ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

পরে দুপুর আড়াইটার দিকে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) ক্রাইম সিন ইউনিট এসে তদন্তের জন্য আলামত সংগ্রহ করেন। এছাড়া ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে শিক্ষার্থীরা ৩টায় বিক্ষোভ মিছিল করেন।

হল প্রশাসন ও আবাসিক শিক্ষার্থী সূত্রে জানা ও সরেজমিন দেখা গেছে, জিয়াউর রহমান হলে আজ ফজরের নামাজের সময় পবিত্র কোরআন শরীফ পড়তে গেলে শিক্ষার্থীরা দেখতে পান গ্রন্থটির প্রথম দিকের কিছু অংশ পোড়ানো। পরে সকাল ১০টার দিকে সৈয়দ আমির আলী হলের মুক্তমঞ্চে অর্ধ পোড়ানো অবস্থায় পবিত্র কোরআন শরীফ দেখতে পান এক শিক্ষার্থী। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে হল প্রাধ্যক্ষ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরকে জানান শিক্ষার্থীরা।

এছাড়াও বেলা ১১টার দিকে শহীদ হবিবুর রহমান হলের মসজিদে খোঁজ নিয়ে পবিত্র কোরআনের কয়েকটি পাতা পোড়ানো দেখতে পায় হল প্রশাসন।

অন্যদিকে দুপুর ১২টার দিকে মতিহার হলের ছাদে অর্ধ পোড়ানো এবং ছিন্নভিন্ন অবস্থায় গ্রন্থটি উদ্ধার করে শিক্ষার্থীরা।

এছাড়া শাহ মখদুম হলে অর্ধ-পোড়ানো কোরআন কয়েকজন শিক্ষার্থী দেখলেও পরে তা আর সেখানে পাওয়া যায়নি।

কে বা কারা কখন এ ঘটনা ঘটিয়েছে তা জানেন না উল্লেখ করে সৈয়দ আমীর আলী হলের নৈশ প্রহরী আব্দুল গফুর বলেন, আমি গতকাল রাতে গার্ডের দায়িত্বে ছিলাম। অনেক শিক্ষার্থীই রাত ১২টার পর হলে প্রবেশ করে। কে বা কারা একাজ কখন করেছে, তা আমি খেয়াল করিনি।

এবিষয়ে সৈয়দ আমির আলী হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ হারুনর রশীদ জানান, ‘বেলা সাড়ে ১০ টার দিকে হল সুপার আমাকে ঘটনা জানায়। কোনো ধর্মের এমন অবমাননা করুক এটা আমরা সহ্য করবো না। হল প্রশাসন একটা তদন্ত কমিটি গঠন করবে। এছাড়া আমি উপাচার্যের সাথে কথা বলেছি তিনি ১২ টায় একটা মিটিং কল করেছেন। কোনো একটা মহল সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরির পাঁয়তারা করছে। যারা এধরণের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির চেষ্টা করছে তাদেরকে শক্ত হাতে দমন করতে হবে।’

আলামত সংগ্রহের বিষয়ে মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল মালেক বলেন, ‍‍`বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন খবর দেওয়ার পর আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিদর্শন করেছি। সেখানে বিভিন্ন আলামত পাওয়া গেছে। যা আমাদের ক্রাইম সিন ইউনিট সংগ্রহ করে নিয়ে গেছে। এগুলোর ফরেনসিক পরীক্ষা শেষে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।‍‍`

এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব জানান, ‍‍`এটা অত্যন্ত ঘৃণিত কাজ। ইতোমধ্যেই তদন্ত শুরু হয়ে গেছে। পুলিশ এবং গোয়েন্দা সংস্থা এটার কাজ করছে। আমি শিক্ষার্থীদের শান্ত থাকার আহ্বান করবো। এধরণের ঘৃণিত কাজ যারা করেছে তাদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আনা হবে।‍‍`

তদন্ত কমিটি গঠন

ঘটনা তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খানকে আহ্বায়ক করে নয় সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কমিটিকে ৩ কার্যদিবসের মধ্যে প্রাথমিক প্রতিবেদন ও ৭ কার্যদিবসের মধ্যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। কমিটি গঠনের আগে উপাচার্য শৃঙ্খলা উপ-কমিটির সাথে এক জরুরি সভায় ঘটনা সম্পর্কে আলোচনা করেন।

শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে হলগুলোতে কুরআন পুড়িয়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার উস্কানির বিরুদ্ধে এবং ষড়যন্ত্রকারীর শাস্তির দাবিতে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার (১২ জানুয়ারি) বেলা ৩টার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে সাধারণ শিক্ষার্থীরা এ কর্মসূচির পালন করেন। প্রতিবাদ কর্মসূচি শেষে ক্যাম্পাসের গুরত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্যারিস রোডে মিলিত হয় সমাবেশটি।

এসময় শিক্ষার্থীরা ‍‍`আল কুরআনে আগুন দাওনি, দিয়েছে মুসলিমদের কলিজায়‍‍`, ‍‍`ছাই চাপা আগুন বুকে নিয়েই রুখে দাঁড়াবো আমরা‍‍`, ‍‍`জান দিবো, কোরআনের অবমাননা সইব না‍‍`, ‍‍`আল কোরআনের অপমান, সইবে নারে মুসলমান‍‍`, ইত্যাদি প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন।

প্রতিবাদ সমাবেশে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র শিবিরের সভাপতি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ বলেন, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানোর জন্য যারা চেষ্টা করছে, তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ স্বরূপ আমরা একত্রিত হয়েছি। কোরআন মাজিদ পৃথিবীর একমাত্র নির্ভুল পবিত্র গ্রন্থ। কোরআন মাজিদে আঘাত করে মুসলমানদের কলিজায় আঘাত করা হয়েছে। ফ্যাসিবাদের দোসর এবং আধিপত্য কায়েমকারীদের তাড়াতে চাই। যারা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানোর মাধ্যমে জুলাই বিপ্লবের স্বাধীনতাকে নস্যাৎ করতে চাই তারা ভুলের মধ্যে রয়েছে। আমরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার মাধ্যমে তাদের ষড়যন্ত্র রুখে দিব।

প্রতিবাদ সমাবেশে শিক্ষার্থীদের সাথে সংহতি প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ইফতেখার আলম মাসউদ ও জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক আখতার হোসেন মজুমদার অংশগ্রহণ করেন। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের প্রায় ৪শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।

ইএইচ