জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস প্রকল্পের কাজ সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর হওয়ায় আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
আজ সোমবার (২০ জানুয়ারি) দুপুর ২টার পরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার থেকে আনন্দ মিছিলটি শুরু হয়ে পুরো ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ শেষে প্রশাসনিক ভবনের সামনে এসে সমাপ্ত হয়। মিছিলের সময় শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ব্যানার দিয়ে ক্যাম্পাসে উদ্দীপনা ছড়িয়ে দেন।
মিছিল শেষে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম সাথে শুভেচ্ছাবিনিময় করেন। শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাস দেখে উপাচার্য অভিভূত হন এবং তাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে আরও সক্রিয় ভূমিকা রাখতে উৎসাহিত করেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. রইছ্ উদ্দীন, প্রক্টর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক এবং অন্যান্য শিক্ষকবৃন্দ। তারা শিক্ষার্থীদের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে তাদের অব্যাহত সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন।
এর আগে গতকাল দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর বিষয়ে উপাচার্য বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীদের, সবার কাঙ্ক্ষিত ফল আমরা পেয়েছি। আমরা সকলেই খুব খুশি, আশাবাদী। আমাদের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস যেটা হবে কি হবে না এটা নিয়ে চিন্তিত ছিলাম এখন ইনশাআল্লাহ এটা হয়ে যাবে।
এই আনন্দ মিছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছে, এবং তারা একত্রিত হয়ে ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন।
এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী রাশিদুল ইসলাম বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের স্বার্থের ঊর্ধ্বে কিছু দেখি না আসলে। আমরা অনার্স শেষ করেছি মাস্টার্স শেষের দিকে। জবিয়ান কতটা ত্যাগ এবং সীমাবদ্ধতার মধ্য দিয়ে শিক্ষা জীবন শেষ করে সেটা নিজে বুঝতে পেরেছি। তাই চেয়েছিলাম আমাদের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীর মাধ্যমেই বাস্তবায়ন হোক। যাতে করে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতার সাথে কাজটা দ্রুত হয়। যাতে আমার ভাই বোনেরা এর সুফল ভোগ করতে পারে। অনেক আন্দোলন, কর্মসূচি, অনশনের পর আজ আমরা সফল। আজ আমি ব্যক্তিগত ভাবে অনেক খুশি।
মাসুদ রানা নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, অনেক আন্দোলন সংগ্রামের পর দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর হয়েছে।আশা করছি আমরা নতুন ক্যাম্পাসে খুব দ্রুত আবাসন সুবিধা লাভ করতে পারবো।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তরে রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনগুলোরও ছিল যথেষ্ট ভূমিকা। অনশন থেকে শুরু করে সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচিতেও
সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণ ছিল।
এবিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রায়হান হাসান রাব্বি বলেন, ২য় ক্যাম্পাসে আমাদের ছোট ভাই,বোনেরা হলে থাকবে,পড়াশোনা করবে,একটা সুন্দর ক্যাম্পাস হবে এটা আমাদের স্বপ্ন ছিল। এই স্বপ্নের প্রতিফলিত হয়েছে আন্দোলনের মাধ্যমে, এবং আমরা সফল। দীর্ঘ ২ মাস পরে এই সাফল্যকে একটু উদ্যাপন করার জন্যই আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করা হয়। সবকিছু মিলিয়ে আলহামদুলিল্লাহ। জবিয়ানেরা কখনোই খালি হাতে ফেরেনি, এটা তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ। এ সংগঠনের সভাপতি এ কে এম রাকিব বলেন, দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর আন্দোলনে দলমত নির্বিশেষে সবাই অংশগ্রহণ করেছে এবং আমরা সফল। অনেকে চেয়েছে এই কাজ যেন সেনাবাহিনী না পায় কিন্তু আমরা তা হতে দেইনি বরং তাদের দেওয়া সকল বাধা অতিক্রম করেই আন্দোলন চালিয়েছি। আমরা সেনাবাহিনীকে অনুরোধ করবো যদি সম্ভব হয় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যেনো হলগুলোর কাজ আগে সম্পূর্ণ করে, তাতে শিক্ষার্থীদের আবাসনের ব্যবস্থা দ্রুত সম্ভব হবে।
এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি রিয়াজুল ইসলাম বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক গ্রহণ করা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ পরিচালনা করার জন্য প্রজেক্ট ডিরেক্টর নিয়োগ দেওয়া অবশ্যই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য একটি আনন্দের সংবাদ। আমরা প্রত্যাশা করছি অতি দ্রুত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মাধ্যমে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আঠারো হাজার শিক্ষার্থীর দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি পূরণ হবে। তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে এবং আবাসন সংকটসহ ক্লাসরুমে যাবতীয় সংকট থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় মুক্তি পাবে ইনশাল্লাহ।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সর্বদাই দ্বিতীয় ক্যাম্পাস সেনাবাহিনীর হাতে দেওয়ার পক্ষে অবস্থান করেছে এবং প্রত্যাশা করছে অতি দ্রুত সময়ের ভিতর দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ বাস্তবায়ন হোক। আমরা প্রত্যাশা করছি, বর্তমান প্রশাসন বিগত সময়ে সকল দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি যথাযথ তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন এবং আত্মসাৎকৃত অর্থ ফিরিয়ে এনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নের কাজে ব্যয় করবেন।
এবিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান রুমি বলেন, এটা আমাদের জন্য বিশাল এক অর্জন। এটি ছিল আমাদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা। এটি এক ঐতিহাসিক বিজয় যা আমাদের কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ইনশাআল্লাহ সামনে ক্যাম্পাসের সকল যৌক্তিক আন্দোলনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল থাকবে। সকল আন্দোলনে আমরা সম্মুখ সারিতে ছিলাম। সামনেও যে আন্দোলন থাকবে ইনশাআল্লাহ আমরা সম্মুখ সারিতে থাকবো।
আরএস