বাকৃবিতে রিকশা-অটোর ভাড়া নির্ধারণের দাবি শিক্ষার্থীদের

বাকৃবি প্রতিনিধি প্রকাশিত: জানুয়ারি ২১, ২০২৫, ০৫:৫১ পিএম

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের দৈনন্দিন যাতায়াতে রিকশা ও অটো অপরিহার্য। তবে অতিরিক্ত ভাড়া দাবি, চালকদের দুর্ব্যবহার এবং নিরাপত্তাহীনতার কারণে শিক্ষার্থীরা প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা না থাকা এবং চালকদের অসদাচরণের ফলে সমস্যা দিন দিন বাড়ছে।

এছাড়া ছাত্রীদের যাতায়াতে নিরাপত্তার অভাব এবং রাতে যাতায়াতের ঝুঁকিও শিক্ষার্থীদের জন্য উদ্বেগের কারণ। বহিরাগত চালকদের কারণে পরিস্থিতি আরও বিশৃঙ্খল হয়ে পড়ছে। এমতাবস্থায় রিকশা ও অটোর ভাড়ার তালিকা নির্ধারণের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খন্দকার নুজহাত তাবাসসুম ঐশী বলেন, ‘রিকশা বা অটোতে ওঠা এখন শিক্ষার্থীদের জন্য অপমানজনক হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিদিন ভাড়া নিয়ে ঝামেলা এবং চালকদের দুর্ব্যবহারের শিকার হতে হচ্ছে। শেষ মোড় থেকে কে-আর মার্কেট পর্যন্ত ৫ টাকার ভাড়া ১০ টাকা দাবি করা হয়। এমনকি তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে চালক টাকা রাস্তায় ফেলে দেন।’

আরেক শিক্ষার্থী নাফি সরকার বলেন, ‘কে-আর মার্কেট থেকে জব্বার মোড় পর্যন্ত ভাড়া ১০ টাকা, কিন্তু চালকরা সেটি নিতে চান না। বরং উচ্চস্বরে কথা বলা এবং অসম্মানজনক আচরণ করা তাদের স্বাভাবিক অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। ছুটির দিনে বহিরাগত চালকদের কারণে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’

জারা তাসনীম আদীবা নামে একজন ছাত্রী জানান, ‘ছাত্রীদের সাথে দুর্ব্যবহার দিন দিন বেড়ে চলেছে। আমরা ভাড়া ঠিকমতো দিতে চাই, কিন্তু চালকরা অহেতুক অশোভন আচরণ করেন। রাতের বেলা যাতায়াতে ভয় কাজ করে। প্রশাসনের উচিত এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া।’

এ সমস্যা সমাধানে ভাড়া ন্যায্যমূল্যে ধার্য করে দেয়াসহ প্রশাসনের কাছে কয়েকটি দাবি জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা টানানো, অসদাচরণকারী চালকদের চিহ্নিত করে তাদের ক্যাম্পাসে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা, শুধুমাত্র নিবন্ধিত চালকদের ক্যাম্পাসে কাজ করার অনুমতি দেওয়া, প্রক্টর এবং ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টার তত্ত্বাবধানে পরিবহণ মনিটরিং টিম গঠন, শিক্ষার্থীদের জন্য হেল্পলাইন এবং অভিযোগ বাক্স স্থাপন করা। দ্রুত প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপের মাধ্যমে ক্যাম্পাসের পরিবহণ ব্যবস্থার শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে শিক্ষার্থীরা আশা করছেন।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল আলিম বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের স্বার্থে আমরা নির্দিষ্ট স্থানে ভাড়ার চার্ট করে দেব। আমরা চাই শিক্ষার্থীদের সুবিধার পাশাপাশি যারা রিকশা বা অটো চালক আছেন, তাদের রুটি-রুজিরও সমস্যা না হয়। এজন্য এমন একটি ভাড়া নির্ধারণ করা হবে, যা শিক্ষার্থীদের জন্য সুবিধাজনক এবং চালকরাও যৌক্তিকভাবে লাভবান হবেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চাইলেও সব রিকশা ও অটো চালকদের আইডি কার্ড দিতে পারছি না, কারণ তারা কেউই শুধু ক্যাম্পাসে রিকশা চালান না। আমাদের ক্যাম্পাস উন্মুক্ত হওয়ায় চালকরা এক-দুজন যাত্রী নিয়েই এখানে চলে আসেন। তবে আমরা একটি সমাধান হিসেবে চালকদের জন্য নির্দিষ্ট পোশাক চালু করার কথা ভাবছি, যাতে তারা সহজেই শনাক্তযোগ্য হন। আমরা চাই শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ভালো থাকুক। তাদের নিরাপত্তা ও স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করতে আমরা সবসময় কাজ করে যাচ্ছি।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল হক বলেন, ‍‍`প্রক্টরিয়াল অফিস, নিরাপত্তা শাখা এবং কমিউনিটি কাউন্সিলের সমন্বয়ে কাজ করতে হবে। আমরা একটি সমাধানের জন্য পরিকল্পনা করেছি, যার মধ্যে চালকদের জন্য নির্দিষ্ট পোশাক এবং ভাড়ার চার্ট তৈরি করা অন্তর্ভুক্ত। এটি নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমরা কাজ করছি চালকদের আচরণ এবং সেবার মান উন্নত করতে, যাতে শিক্ষার্থীরা তাদের ক্যাম্পাস জীবন নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যে কাটাতে পারে। শিক্ষার্থীদের সমস্যাগুলো সমাধানে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

তিনি আরও বলেন, ‘নিরাপত্তার দিক থেকেও আমাদের আরো সতর্ক হতে হবে। বেশিরভাগ রিকশা চালক কোনো আইনকানুন মানে না এবং তাদের অনেকেরই লাইসেন্স বা প্রশিক্ষণ নেই। তবুও আমরা শিক্ষার্থীদের জন্য একটি নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি। উদাহরণস্বরূপ, ক্যাম্পাসের স্পিড ব্রেকারগুলো নতুন করে রঙ করে দৃশ্যমান করা হয়েছে, যাতে পথ চলা আরও নিরাপদ হয়।

ইএইচ