সাংবাদিকদের উপর হামলা: সনদ বাতিল-বহিষ্কারসহ ছাত্রলীগের ১৬ নেতাকর্মীকে শাস্তি

শওকত জাহান, নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশিত: জানুয়ারি ২১, ২০২৫, ০৭:৩৯ পিএম

গত বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্নিবীণা হলের সিট দখলকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের মধ্যে একটি সংঘর্ষ চলাকালে সংবাদ সংগ্রহ করার সময় দুই সাংবাদিকের উপর অতর্কিত হামলা চালায় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা আবু নাঈম আব্দুল্লাহর (যাযাবর নাঈম) অনুসারীরা।

এ ঘটনায় সনদ বাতিল, স্থায়ী বহিষ্কার ও সনদ স্থগিতসহ নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের ১৬ নেতাকর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের অনুমোদনক্রমে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. মিজানুর রহমান স্বাক্ষরিত পত্রে এ তথ্য জানানো হয়।

তদন্ত কমিটি ও গত বছরের ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত শৃঙ্খলা বোর্ডের সুপারিশের প্রেক্ষিতে ১৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৭তম সিন্ডিকেট সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

আবাসিক হলের আসন নিয়ে সংঘর্ষ ও দুই সাংবাদিককে মারধরের এ ঘটনায় নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের একজনকে স্থায়ী বহিষ্কার, দুজনের সনদ বাতিল, দুজনের সনদ বাতিল ও স্থায়ী বহিষ্কার, তিনজনকে তিন বছরের জন্য বহিষ্কার, একজনকে দুই বছরের জন্য বহিষ্কার, পাঁচজনকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার এবং দুজনের সনদ এক বছরের জন্য স্থগিত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

শাস্তি পাওয়া নেতাকর্মীদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি আবু নাঈম আব্দুল্লাহকে (যাযাবর নাঈম) (ফোকলোর বিভাগ, ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ) স্থায়ী বহিষ্কার, সাবেক উপ-কর্মসংস্থান বিষয়ক সম্পাদক মো. সাজ্জাদুর রহমান জয় মোড়ল (আইন ও বিচার বিভাগ, ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ) ও ছাত্রলীগ নেতা তানভীর আহমেদ তুহিনকে (লোকপ্রশাসন ও সরকার পরিচালনা বিদ্যা বিভাগ, ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ) স্থায়ী বহিষ্কার ও স্নাতকের সনদ বাতিল করা হয়েছে।

এছাড়াও সাবেক উপ-দপ্তর সম্পাদক লোভন মোখলেছ (ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ, ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষ) ও ছাত্রলীগ কর্মী মোস্তফা ফাহিম সিরাজির (অর্থনীতি বিভাগ, ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ) স্নাতকোত্তর সনদ বাতিল করা হয়েছে।

বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার হওয়া নেতাকর্মীদের মধ্যে ছাত্রলীগ কর্মী রেজওয়ানুল কবীর রাব্বি (ইইই বিভাগ, ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষ), আবু রায়হান (লোকপ্রশাসন ও সরকার পরিচালনা বিদ্যা বিভাগ, ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ) এবং সৌমিক জাহানকে (চারুকলা বিভাগ, ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষ) তিন বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়। অন্যদিকে গালিব ফয়সাল নির্ঝরকে (ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ, ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ) দুই বছর, বর্তমান কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সামিউল হক হিমেল (টিপিএস বিভাগ, স্নাতকোত্তর ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ), সাবেক উপশিক্ষা ও পাঠচক্র বিষয়ক সম্পাদক মাছুম বিল্লাহ (নৃবিজ্ঞান বিভাগ, ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষ), নাঈমুল ইসলাম অনিক (আইন ও বিচার বিভাগ, স্নাতকোত্তর ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষ), পবিত্র মণ্ডল(পপুলেশন সায়েন্স, ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষ) ও আব্দুল্লাহ আল শাহরিয়ারকে (চারুকলা, ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ) এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। ছাত্রলীগ কর্মী হাবিবুল্লাহ (আইন ও বিচার বিভাগ, স্নাতকোত্তর ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষ) স্নাতকোত্তর সনদ ও নয়ন হাসানের (ইএসই, ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ) স্নাতক সনদ এক বছরের জন্য স্থগিত করা হয়েছে।

ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ এবং সংবাদ সংগ্রহকালে দুই সাংবাদিককে মারধরের ঘটনার রাতেই তৎকালীন বঙ্গবন্ধু হলের প্রভোস্ট মাসুম হাওলাদারকে আহ্বায়ক, তৎকালীন ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক ড. মোহাম্মদ মেহেদী উল্লাহকে সদস্য এবং তৎকালীন প্রক্টর সঞ্জয় কুমার মুখার্জিকে সদস্য সচিব করে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠনের প্রায় এক বছর পর সিদ্ধান্তে পৌঁছালো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি পাওয়া একাধিক ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর মন্তব্য মুঠোফোনে জানতে চাওয়ার চেষ্টা করলেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, পূর্বের প্রশাসন যে তদন্ত কমিটি গঠন করেছিলো, সেই তদন্ত কমিটির সুপারিশ এবং যারা হামলার স্বীকার হয়েছিলো তাদের দাবির প্রেক্ষিতে বিষয়গুলো শৃঙ্খলা বোর্ডে আলোচনা পর সিন্ডিকেটে অনুমোদন হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে যেকোনো ধরনের অন্যায় কার্যক্রম সংঘটিত হলে, প্রমাণ সাপেক্ষে আমরা বিধি মোতাবেক যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেবো।

ইএইচ