আওয়ামী লীগের দোসরদের পুর্নবাসনের লক্ষ্যে গোপন সিন্ডিকেট সভা আহ্বানের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদকে উপেক্ষা করেই জরুরি সিন্ডিকেট সভা সম্পন্ন করেছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিন। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. গোলাম রব্বানী, ট্রেজারার অধ্যাপক ড. মামুন অর রশিদ ও অধ্যাপক ড. মুহসিন উদ্দিন উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতিতে সিন্ডিকেট সভা প্রত্যাখান করেছেন। এতে একটিমাত্র এজেন্ডা নিয়ে সিন্ডিকেট মিটিংয়ে আলোচনা শেষ হয়েছে।
শুক্রবার (১৪ই ফেব্রুয়ারি) বেলা ৩টার দিকে আন্দোলরত শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদকে উপেক্ষা করে সাধারণ এ সিন্ডিকেট সভাকে জরুরি সিন্ডিকেটে রুপান্তরিত করে একটি এজেন্ডা পাশ করা হয়েছে।
জানা যায়, সিন্ডিকেটে ছয়জন সদস্য সরাসরি অংশগ্রহণ করেন উপাচার্যের বাসভবনে এবং চারজন সদস্য অনলাইনে যুক্ত হয়ে মোট ১০জন সিন্ডিকেট মেম্বার উপস্থিত হয়েছিলেন। এমন অল্প সংখ্যক সিন্ডিকেট সদস্য নিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদের মুখে এই সিন্ডিকেট তার নৈতিকভাবে তার গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে বলে অভিযোগ করছেন একাধিক সিন্ডিকেট সদস্য।
উপাচার্যের বিরুদ্ধে আওয়ামী পূর্নবাসনের গোপন সিন্ডিকেটের অভিযোগ তুলে শুক্রবার বেলা ২টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বাসভবনের সামনে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। বেলা ২ টা ৪৫ এর দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম রব্বানি, ট্রেজারার অধ্যাপক ড. মামুন অর রশিদ ও অধ্যাপক ক্যাটাগরির সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড. মুহসিন উদ্দিন সিন্ডিকেটে যোগদান করতে আসলে শিক্ষার্থীরা তাদেরকে যোগদানের বাধা দেন৷ বাঁধার মুখে তারা ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন।
উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতিতে উপাচার্য তাদেরকে ভার্চুয়ালি সিন্ডিকেটে যোগদানের জন্য বললে তারা অপারগতা দেখিয়ে সিন্ডিকেট সভা বর্জন করেছেন।
বিকেল তিনটায় শিক্ষার্থীরা ভিসি বাসভবনের গেট খুলে ফেলে দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করেন। ভিসি বাংলোর সব গেটের কলাপসিকল গেট তালাবদ্ধ পেলে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন। পরবর্তীতে ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর মারুফা বেগম গেটের ভিতর থেকে শিক্ষার্থীদের সাথে তাদের দাবি জানতে চান।
শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের সাথে দেখা করার দাবি জানান এবং সিন্ডিকেট সভা তাৎক্ষণিক বাতিল করার দাবি জানান। কিন্তু তিনি শিক্ষার্থীদের দাবিতে কর্ণপাত না করে উল্টো শিক্ষার্থীদের দিকে আঙুল তুলেন তারা কাদের ইন্ধনে এমন আন্দোলন করছেন। এসময় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সাথে ভারপ্রাপ্ত প্রক্টরের মধ্য বাকবিতন্ডা হয়।
আন্দোলনকারীরা পরে সংবাদ সম্মেলন করে দশটি দাবি দিয়ে তাদের বিক্ষোভ কর্মসূচির সমাপ্তি ঘোষণা করেন। তাদের দাবিগুলোর উল্লেখযোগ্য দাবিগুলো হলো- রেজিস্ট্রারকে চব্বিশ ঘন্টার মধ্য রেজিস্ট্রারকে অপসারণ, সিন্ডিকেট থেকে মেয়াদ শেষের আগেই নিয়মবহির্ভূতভাবে দুই শিক্ষক প্রতিনিধিদের সিন্ডিকেটে সদস্যপদ পূর্নবহাল করা, স্বৈচারের দোসরদের সাথে সখ্যতার কারণ স্পষ্ট করে শিক্ষার্থীদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করতে হবে উপাচার্যের। ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে আগামী ৭২ ঘন্টার মধ্য রোডম্যাপ নির্ধারণ, সিন্ডিকেটে ছাত্র প্রতিনিধিদের রাখার বিধান, সিন্ডিকেটের আলোচ্যবিষয় সাংবাদিকদের কাছে প্রকাশযোগ্য করতে হবে।
এবিষয়ে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থী শহিদুল ইসলাম বলেন, আমাদের দাবি ছিলো আওয়ামী দোসর রেজিস্ট্রারকে অপসারণ এবং সিন্ডিকেট থেকে নিয়মবহির্ভূতভাবে বাদ দেয়া শিক্ষকদের সদস্যপদ নবায়ন করে তারপর সিন্ডিকেট সভার আহ্বান জানিয়ে আমরা গোপনে পাতানো এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ করি। আমাদের প্রতিবাদের মুখে উপাচার্য জরুরি সিন্ডিকেট আহ্বান করে মিটিং শেষ করেছেন। তিনি আরও বলেন, আমাদের নয় দফা না মেনে নিলে আমরা কঠোর আন্দোলনে যাবো। রবিবার পর্যন্ত আমরা সময় দিচ্ছি এ সময়ের মধ্যে নয় দফা বাস্তবায়ন না হলে আমরা উপাচার্যের পদত্যাগের এক দফায় চলে যাবো।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর মারুফা আক্তারের কাছে জানতে চাইলে বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের বলেছি তারা প্রক্টর অফিসে আসুক তাদের দাবি নিয়ে আমরা কথা বলতে চাই কিন্তু তারা সেখানে না এসে সরাসরি উপাচার্য বাসভবনে চলে এসেছে।
উপাচার্যের সাথে দেখা করতে হলে আগে প্রক্টরের সাথে আলোচনা করতে হবে বলেও জানান তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. গোলাম রব্বানি বলেন, আমরা সিন্ডিকেট মিটিংয়ে যোগদান করতে গিয়েছিলাম কিন্তু আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদের মুখে আমাদেরকে ক্যাম্পাস ত্যাগ করতে হয়। পরবর্তীতে উপাচার্য ভার্চুয়ালি মিটিংয়ে যোগদানের জন্য বললে উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতিতে অনলাইনে যোগদানের মতো সুযোগ না থাকায় আমিসহ তিনজন সিন্ডিকেট মিটিং প্রত্যাখান করেছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের গুটিকয়েক শিক্ষার্থী উদ্দেশ্যে প্রণোদিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছেন। তারা সাধারণ কোন শিক্ষার্থী নন জানিয়ে উপাচার্য বলেন, তারা আজকে যে কাজ করেছে এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। এবং আজকের ঘটনায় পুলিশি তদন্ত হবে বলে জানান তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের মেয়াদ শেষেও এখনো কেন রাখা হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে উপাচার্য বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক দিক বিবেচনায় তাকে রাখা হয়েছে, তাকে চুক্তিভিত্তিক কোন নিয়োগ দেয়া হয়নি।
বিআরইউ