জুলাই হামলাকারিদের বিচার নিশ্চিতে জাবি ‘প্রশাসনের গড়িমসি’, প্রতিবাদে মানববন্ধন

জাবি প্রতিনিধি: প্রকাশিত: মার্চ ৫, ২০২৫, ০৪:৩৮ পিএম

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকালীদের বিচার নিশ্চিতে গড়িমসি এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক হামলাকরী ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের পুনর্বাসনের প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ।

বুধবার (৫ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে এ মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করে তারা ।

এসময় নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নাজমুল ইসলামের সঞ্চালনায় বক্তারা বক্তব্য রাখেন। এসময় বক্তারা হামলাকারীদের বিচারে প্রশাসনের গড়িমসির সমালোচনা করেন। সেইসাথে ছাত্রলীগের চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা কীভাবে জেলে বসে পরীক্ষা দেয় সেই প্রশ্ন তোলেন।

এসময় সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ৪৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী নাহিদ হাসান ইমন বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি  প্রশাসন জেনে বা নাজেনে ছাত্রলীগ পুনর্বাসনের চেষ্টা করছে। ছাত্রলীগের হামলাকারী এবং অবাঞ্চিতরা এখনো কীভাবে পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে? তিনি লোক প্রশাসন বিভাগের চেয়ারম্যান স্যার কে হুঁশিয়ারি করে বলেন, আপনি যদি ছাত্রলীগকে এভাবে পুনর্বাসিত করতে থাকেন তাহলে আপনার চেয়ারটা বেশিদিন থাকবে না, আমরা আপনাকে টেনে—হিঁচড়ে নামাবো। পুনর্বার এমন চেষ্টা করলে ছাত্রলীগের দোসরদের মতোই আপনার পরিণতি হবে। মবের কারনে মৃত্যু হয় শামীম মোল্লার। এখানে বিপ্লবীদের পরিকল্পিত ভাবে ফাঁসানো হয়েছে। প্রশাসনকে বলতে চাই সঠিক তদন্ত করে বিপ্লবীদের ফিরিয়ে আনুন। জুলাই হামলাকারীদের দ্রুত বিচার করুন।

এসময় অর্থনীতি ৪৯ বিভাগের শিক্ষার্থী নাকিব আল মাহমুদ অর্ণব বলেন, আমরা মনে করি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিচারের নামে কমিটি কমিটি করে যে টালবাহানা করছে। অতিদ্রুত এই নাটকের অবসান ঘটাতে হবে। কিভাবে একজন সন্ত্রাসী ছাত্রলীগের কর্মী হাসপাতালে বসে, জেলে বসে পরীক্ষা দিতে পারে? যেখানে আমাদের বিপ্লবীরা, যারা জাহাঙ্গীরনগর থেকে সম্মুখসারিতে নেতৃত্ব দিয়েছে তাদের জীবন আজ বিপন্ন।

আজকে কেন আমার ভাই আহসান লাবিবকে লুকিয়ে থাকতে হবে, কেন রায়হান আজ জেলে, কেন আমার ভাই হামিদুল্লাহ সালমান ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারে না? আমাদের বিজয় অর্জনের সাত মাস পরেও আমরা এখনো সন্ত্রাসী ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে কোনো মামলা করতে পারলো না, এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত হতাশাজনক। পক্ষান্তরে যারা আমাদের বিপ্লবী, যাদের জন্য এই প্রশাসন বলে তারা এই বিপ্লবের প্রডাক্ট, কিন্তু তারা সেই বিপ্লবীদেরকে তাদের প্রাপ্য সম্মান দিতে পারে নাই। কাজেই অতিদ্রুত হামলাকারী ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অতিদ্রুত মামলা করতে হবে এবং আমাদের বিপ্লবী ভাইদের বিরুদ্ধে যে অপপ্রচারমূলক মামলা করা হয়েছে তা তুলে নিয়ে তাদেরকে ক্যাম্পাসে পুনর্বহাল করতে হবে।

এসময় মার্কেটিং ৪৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী আরিফুজ্জামান উজ্জল বলেন, গণঅভ্যুত্থানের পরে দায়িত্ব নেয়া এই প্রশাসনের প্রধান কাজ ছিলো ১৫ জুলাই হামলাকারী ছাত্রলীগের বিচার নিশ্চিত করা। গণঅভ্যুত্থানের ৭ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো বিচার নিশ্চিত করতে পারেনি এই প্রশাসন। আমরা বিভিন্ন সাংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে দেখেছি হাসপাতালে ও জেলে বসে পরীক্ষা দিচ্ছে হামলাকারী ছাত্রীলীগ নেতারা। গত ১৫  জুলাই উপাচার্যের বাসভবনের সামনে সন্ত্রাসী ছাত্রলীগনেতা শামীম মোল্লা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করেছিল। সেই শামীম মোল্লা যখন গণঅভ্যুত্থানের পর মব জাস্টিসের স্বীকার হলো । এরপর প্রশাসন পুলিশের কাছে হস্তান্তর করার ২ ঘন্টা পর শামীম মোল্লা মারা যাওয়ার সংবাদ আসে।  বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নির্যাতনে নয় পুলিশের হেফাজতেই তার মৃত্যু হয়েছে। যেই বিপ্লবীরা সম্মুখ সারিতে থেকে যুদ্ধ করেছে তাদের বিরুদ্ধে ২৪ ঘন্টার ভিতরে মামলা করেছেন। কিন্তু শিক্ষার্থীদের উপর হামলাকারীদের উপর এখনো মামলা দিতে পারেননি। আপনারা সত্যিকারে যদি গণঅভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তি হয়ে থাকেন তাহলে দ্রুত বিচার নিশ্চিত করুন।

বিআরইউ