ঈদের আগে এসব দাবি মানা না হলে ঈদের পরে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কমচারীদের নিয়ে কঠোর কর্মসূচি পালন করবেন বলে জানান।
শিক্ষাক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্যে মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণসহ আসন্ন ঈদের আগেই শতভাগ উৎসব ভাতা, বাড়িভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা প্রদান এবং ইএফটি সমস্যার দ্রুত সমাধানসহ ১০ দফা দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বিটিএ)। ঈদের আগে এসব দাবি মানা না হলে ঈদের পরে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কমচারীদের নিয়ে কঠোর কর্মসূচি পালন করবেন বলে জানান।
শনিবার (৮ মার্চ) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সমিতির নেতারা এসব কথা বলেন। সমিতির সভাপতি অধ্যক্ষ শেখ কাওছার আহমেদের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মো. শামীম আল মামুন জুয়েলের সঞ্চালনায় এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
লিখিত বক্তব্যে সমিতির সভাপতি অধ্যক্ষ শেখ কাওছার আহমেদ বলেন, ‘শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড’। আর শিক্ষক হচ্ছেন ‘শিক্ষার মেরুদণ্ড’, সমাজ ও সভ্যতার বিবেক এবং জাতি গঠনের স্থপতি। দেশের সিংহভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালিত হচ্ছে এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী দ্বারা। পরিতাপের বিষয় এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীগণ মাত্র ১,০০০/- টাকা বাড়ি ভাড়া, ২৫% উৎসব ভাতা এবং ৫০০/- টাকা চিকিৎসা ভাতা পান। অথচ একই কারিকুলামের অধীন একই সিলেবাস, একই একাডেমিক সময়সূচি, একইভাবে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও উত্তরপত্র মূল্যায়নের কাজে নিয়োজিত থেকেও আর্থিক সুবিধার ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে রয়েছে পাহাড়সম বৈষম্য। এছাড়াও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠান প্রধানদের বেতন স্কেল সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠান প্রধানদের বেতন স্কেলের একধাপ নিচে প্রদান করা হয় এবং সহকারি প্রধান শিক্ষকদের উচ্চতর স্কেল প্রদান না করার ফলে উচ্চতর স্কেলপ্রাপ্ত সিনিয়র শিক্ষকদের বেতন স্কেল ও সহকারি প্রধান শিক্ষকদের বেতন স্কেল সমান হওয়ায় সহকারি প্রধান শিক্ষকদের মধ্যে দীর্ঘদিনের অসন্তোষ রয়েছে।
তিনি বলেন, এনটিআরসিএ -এর মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করা এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীগণ মাত্র ১২,৫০০/- প্রারম্ভিক বেতনে শত-শত মাইল দূরে শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন। তাদের কোন বদলির ব্যবস্থা না থাকা এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে ইএফটি এর মাধ্যমে সয়ংক্রিয়ভাবে বেতন প্রদান করা হলেও সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের গাফলতির কারণে অনেক এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী ৩ থেকে ৪ মাস যাবৎ বেতন ভাতা না পেয়ে অত্যন্ত মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
তিনি আরও বলেন, বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসরে যাবার পর অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্টের টাকা পেতে বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয়। ফলে অনেক শিক্ষক-কর্মচারী টাকা পাওয়ার পূর্বেই অর্থাভাবে বিনা চিকৎসায় মৃত্যুবরণ করছেন। তাছাড়া বিগত সরকার কোন প্রকার সুবিধা না দিয়েই সম্পূণ অবৈধভাবে অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্ট খাতে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন থেকে প্রতি মাসে অতিরিক্ত ৪% কর্তন করছে যা অত্যন্ত অমানবিক। তাই অতিরিক্ত ৪% কর্তনের প্রতিবাদে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীগণ বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বিটিএ)`র নেতৃত্বে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলসহ অবসর সুবিধা বোর্ড ও কল্যাণ ট্রাস্ট অফিস ঘেরাও করেছিলেন। পরিতাপের বিষয় অদ্যাবধি কোন প্রতিকার পায়নি। সদ্য বিদায়ী শিক্ষা উপদেষ্টা জানিয়েছেন শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসর ও কল্যাণ ট্রাস্টের ৭ থেকে ৮ হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। যার ফলে শিক্ষক-কমচারীদের মাঝে হতাশা বিরজ করছে। বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বিটিএ)`র পক্ষ থেকে এর সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক দোষী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনার জোর দাবি জানান।
বেসরকারি বৈষম্য দূরীকরণের ১০ দফা দাবিগুলো হচ্ছে-
এসব দাবি মানা না হলে আগামী ১২ মার্চ (বুধবার) বেলা ১১টায় কেন্দ্রীয়ভাবে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল ও বিভাগীয় কমিশনারের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা ও শিক্ষা উপদেষ্টা বরাবর স্মারক লিপি প্রদান।
আগামী ১৬ মার্চ (রোববার) বেলা ১১টায় দেশের সকল জেলা ও বিভাগীয় সদরে মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল ও জেলা প্রশাসক/বিভাগীয় কমিশনারের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা ও শিক্ষা উপদেষ্টা বরাবর স্মারক লিপি প্রদান।
এর পরেও যদি দাবি পূরণে সুনিদিষ্ট প্রজ্ঞাপন জারি করা না হয় তাহলে পবিত্র ঈদুল ফিতরের পরে সারা দেশের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কমচারীদের নিয়ে কঠোর থেকে কঠোরতর কর্মসূচি পালনে বাধ্য হবেন।
সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সমিতির প্রধান উপদেষ্টা অধ্যক্ষ মো. বজলুর রহমান মিয়া, উপদেষ্টা মণ্ডলীর অন্যতম সদস্য আলহাজ্ব আলী আহামেদ, অধ্যক্ষ মো. আবুল কাশেম, সহ সভাপতি বেগম নূরুন্নাহার, মো. গোলাম রববানী, মো. মহিউদ্দিন, সুনীল বরন হালদার, মো. জাহাঙ্গীর হোসেন হাওলাদার, মীর মনিরুজ্জামান, এ বি এম আব্দুল আলীম, মো. হারুন অর রশিদ, মো. আব্দুল কাদের, মো. লিয়াকত হোসেন, আব্দুল মালিক রাজু, চাঁন মিয়া, মো. ওসমান গনী, মো. পবারুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আনোয়ার হোসেন, মো. ইকবাল হোসেন, শিমুল কান্তি মহাজন, মো. রফিকুল ইসলাম সাংগঠনিক সম্পাদক মো. নূরুল আমীন রতন, মোহাম্মদ আসাদুল আলম, মো. আনোয়ারুল কবির, মো. ফজলুল হক, অর্থ সম্পাদক প্রবীর রঞ্জন দাস, প্রচার ও প্রকাশন সম্পাদক মো. মহিদুর রহমান মুরাদ, আইন বিষয়ক সম্পাদক মো. ওবায়দুর রহমান, ক্রীড়া ও সংস্কৃতিক সম্পাদক দুলালী বিশ্বাস, মহিলা সম্পাদক তুহিনা আক্তার, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ফারুক হোসেন, সহ অর্থ সম্পাদক মাওলানা মো. জাহিদুর রহমান, সহ প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ইসরাত জাহান আলো, কেন্দ্রীয় সদস্য অধ্যপক আবুজামিল মো. সেলিম, মো. সোহরাব হোসেন শিকদার, আফতাফ হোসেন চৌধুরী, মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন, এস এম নাজমুল হোসেন, মো. আবুল কাশেম, মো. কামাল হোসেন, মো. হাবিবুর রহমান, এস এম মোজাম্মেল কবির টুটুল, শাহ আজিজুর রহমানসহ প্রমুখ শিক্ষক নেতৃবৃন্দ।
আরএস