তা’মিরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসা মীরহাজিরবাগ শাখার বরখাস্তকৃত অধ্যক্ষ ড. মুহাম্মদ আবু ইউসুফ খান। বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার উত্তরপত্রে অনৈতিকভাবে ফলাফল পরিবর্তন করে পূর্বচুক্তিবদ্ধ ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ নাম্বার প্রদান করে এনটিআরসিএ সাথে প্রতারণা করেছেন তিনি।
পাশাপাশি মাদরাসা পরিচালনা কমিটি তার বিরুদ্ধে অন্তত ২০টি অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ এনে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় তাকে। তবে সম্প্রতি তিনি পদে ফিরতে মরিয়া হয়ে ওঠেন। নানা মহলকে ম্যানেজ করে মাদরাসা দখল করতেও তৎপর হয়ে ওঠেন।
সূত্র জানায়, তা’মিরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসার পরিচালনা কমিটি তার বিরুদ্ধে ২০টির অধিক বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক অনিয়ম সম্পর্কে অনুসন্ধান করে এবং তদন্তের জন্য একটি কমিটি গঠন করে।
তদন্ত সংস্থাটি দেখতে পায় যে, তিনি তার মনোনীত প্রার্থীকে এনটিআরসিএ এর পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকারের জন্য সর্বোচ্চ নম্বর দিয়েছেন এবং তার জন্য পূর্ব থেকেই একটি পদ তা’মিরুল মিল্লাত মাদরাসাতে শূন্য রেখেছেন।
পরীক্ষা প্রধান নিয়ন্ত্রক অধ্যক্ষ আবু ইউসুফ এনটিআরসিএ এর কাছ থেকে ১৮তম পরীক্ষায় (লিখিত) মূল্যায়নের জন্য ৯৯২টি উত্তরপত্র পেয়েছেন। এর আগে মিল্লাতের আরেকজন শিক্ষক পরীক্ষা মূল্যায়ন কমিটি সদস্য মো. শরিফুল ইসলাম প্রশ্নপত্রটি তৈরি করেছিলেন। অধ্যক্ষের আশীর্বাদপুষ্ট প্রার্থী শরিফ মাহমুদ কৌশলে মো. শরিফুল ইসলাম থেকে মোবাইলে প্রশ্নগুলো ছবি তুলে রাখেন।
উল্লেখ্য, মাওলানা শরীফ মাহমুদ এই জালিয়াতিতে অংশ নেওয়ার সময় মিল্লাতের প্রভাষক (অনার্স) পদে নিযুক্ত ছিলেন। পরবর্তীতে, আবু ইউসুফের খাতা মূল্যায়নের পরে শরিফ মাহমুদ সর্বোচ্চ ৮৬ নম্বর পেয়েছেন।
প্রধান পরীক্ষক হিসেবে তার মাধ্যমে প্রশ্ন সেট তৈরী এবং খাতা মূল্যায়নের দায়িত্ব ছিলো। অধ্যক্ষের আর্শীবাদপুষ্ট প্রার্থী নিজেই তার উত্তরপত্রের মূল্যায়ন করে সর্বোচ্চ নাম্বার প্রদান করেন। চলতি মাসের ৬ তারিখে ভাইভা পরীক্ষা হয়েছে। এগুলো সবই তা’মিরুল মিল্লাত মাদরাসার পরিচালনা কমিটি ও ট্রাস্ট কমিটির যৌথ তদন্তে প্রকাশ হয়েছে।
উল্লেখ্য, মিল্লাত মাদরাসার অধ্যক্ষ আবু ইউসুফ এবং প্রাক্তন প্রভাষক মওলানা শরিফ মাহমুদ উভয়ের জন্মস্থান নেত্রকোনায়। এই পরিস্থিতিতে, তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসার পরিচালনা পর্ষদ গতবছরের ২০ নভেম্বও এক বোর্ড সভায় অধ্যক্ষ আবু ইউসুফকে দোষী শনাক্ত করে এবং চলতি বছরের ২০ মে পর্যন্ত তাকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়।
এ বিষয়ে এনটিআরসিএ-এর উপ-সচিব কাজী কামরুল আহসান বলেন, এনটিআরসিএ কেবল পরীক্ষা পরিচালনা করে, কাউকে শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা আমাদের নেই।
বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিয়া মো. নূরুল হক এ প্রসঙ্গে বলেন, ব্যবস্থাপনা কমিটি ইতিমধ্যেই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে বলে শুনেছি।
মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (প্রশাসন) মোহাম্মদ আরিফুর রহমান মজুমদার বলেন, শিক্ষকদের যেকোনো ধরণের অবৈধ কার্যকলাপের এখতিয়ার আমাদের আছে; এ ধরণের অপরাধ অবশ্যই শাস্তিযোগ্য।
বরখাস্তকৃত অধ্যক্ষ আবু ইউসুফ শনিবার স্থানীয় সন্ত্রাসীদের সহায়তায় ইসলামী আরাবিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার মো. আইয়ুব হোসেনের সাথে মিল্লাত মিরহাজিরবাগ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে অধ্যক্ষের চেয়ারে বসেন এবং অফিসে অবস্থানরত অন্যনো স্টাফদের মাদরাসার ব্যাংক একাউন্টে হিসাব পরিচালনাকারী হিসেবে নিজের নাম দ্রুত বসানো ব্যবস্থা করতে নির্দেশ করেন।
আবু ইউসুফ গভর্নিং বডির সভাপতির কাছে একটি চিঠিতে লিখেন যে “আমি এখানে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ আবু তাহেরের নির্দেশে যোগদান করেছি। যিনি তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসা তদারকি কমিটির আহ্বায়ক।”
তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসার ট্রাস্টি সদস্য ড. ইকবাল হোসেন ভূঁইয়া বলেন, এখানে কোনও তদারকি কমিটি নেই, মাদ্রাসা পরিচালনার সাথে সম্পর্কিত দুটি কমিটি রয়েছে, গভর্নিং বডি এবং ট্রাস্টি কমিটি।
মাদরাসার একজন ট্রাস্টি সদস্য তার নাম প্রকাশে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেন, তিনি একজন স্বঘোষিত শিশু মুক্তিযোদ্ধা, যার জন্ম ১২ মার্চ, ১৯৬৮ সালে এবং বাংলাদেশ জামিয়াতুল মুদার্রেসীন, ঢাকা শহর কমিটির সহ-সভাপতি। তিনি কীভাবে জামায়াত নেতাকে ‘ম্যানেজ’ করলেন সেটি তা রহস্যজনক।
মাদরাসার একজন প্রাক্তন ছাত্র বলেন, এই অধ্যক্ষের কারণে পুলিশী হস্তক্ষেপে আমরা হযরত মওলানা দেলোওয়ার হোসাঈন সাঈদীর নামাজের জানাজা মাদ্রাসার ক্যাম্পাসে পড়তে পারি নাই।
এই প্রতিবেদক যখন আবু ইউসুফকে এই অভিযোগগুলি সম্পর্কে ফোন করেন, তখন তিনি ফোন ধরেন কিন্তু এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান।
ইএইচ