মালয়েশিয়ায় কলিং ভিসায় গিয়ে কেমন আছেন প্রবাসীরা

আশরাফুল মামুন, মালয়েশিয়া প্রকাশিত: জুলাই ৩০, ২০২৩, ০৩:৩৮ পিএম

বাংলাদেশের বাইরে মালয়েশিয়া এখন অন্যতম শ্রমবাজার হিসেবে লাখ লাখ কর্মীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। একদিকে যেমন ক্রমবর্ধমান দেশে উদীয়মান বেকার জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান নিশ্চিত হচ্ছে তেমনি নিয়মিত রেমিট্যান্স পাঠিয়ে অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে প্রবাসীরা।  

২০২২ সালে কলিং ভিসা খোলার পর ধাপে ধাপে শুধু মাত্র বাংলাদেশের জন্য ৪ লাখ ৭০ হাজার কৌটায় অনুমোদন হয়েছে। মালয়েশিয়ার সোর্স কান্ট্রিগুলো থেকে যত জনশক্তি আমদানি করে এই তালিকায় এখন বাংলাদেশ শীর্ষে অবস্থান করছে।  ইতিমধ্যে প্রায় ২ লাখ ৩২ হাজার বাংলাদেশি কর্মী কলিং ভিসায় মালয়েশিয়া পৌঁছেছেন। এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস নিযুক্ত (লেবার উইং) মিনিস্টার মো. নাজমুস সাদাত সেলিম।

সবচেয়ে বেশি প্রবেশ করেছেন কনস্ট্রাকশন সেক্টর। পাশাপাশি রয়েছে ম্যানুফ্যাকচারিং সেক্টর, সার্ভিস সেক্টর, ক্লিনার সেক্টর। তবে সিন্ডিকেট এর কারণে কর্মী প্রতি ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা গুনতে হয়েছে প্রবাসীদের। এই খরচের টাকা তুলতে কর্মীদের কয়েক বছর লেগে যাবে। তাছাড়াও মালয়েশিয়ায় যারা পুরাতন কর্মী রয়েছেন সিক্সপি ভিসা রিনিউ করতে পারেন নি তারাসহ বিভিন্ন দেশের প্রায় ৭ লাখ ২০ হাজার কর্মী বৈধ হওয়ার জন্য আরটিকে২.০ তে আবেদন করেছেন।

কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, প্রতিদিন হাজার হাজার কলিং ভিসায় মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করছেন। বিমানবন্দরে কথা হয় মালয়েশিয়ার অন্যতম কনস্ট্রাকশন কোম্পানি মিজান গ্রান্ড ইন্টারট্রেডার্স এর মাধ্যমে আসা কর্মীর সাথে তারা বললেন, আমরা কোনরকম ইমিগ্রেশন যামেলা ছাড়াই মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করেছি। দাতুক মিজান বস আমাদের বিমানবন্দর থেকে সরাসরি রিসিভ করেছে।

তবে সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করে বলছেন সব কর্মী মালয়েশিয়ায় প্রবেশের পর সাময়িক ভাবে কাজের সংকট তৈরী হতে পারে। বিশেষ করে যে সমস্ত নিয়োগকর্তাদের নিজের কোন কোম্পানি নেই বা আর্থিকভাবে লাভবান হতে কলিং ভিসায় কর্মী এনে অন্যন্যা কোম্পানিতে সাপ্লাই দিচ্ছেন। তবে খোঁজ নিয়ে দেখা যাচ্ছে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মীর চাহিদা সব সময়ই আছে।

বাংলাদশি কর্মীরা যে পরিশ্রম করে মালয়েশিয়ানরা সেভাবে পরিশ্রম করতে পারে না। মালয়েশিয়ান সরকার তাদের নিজ দেশের কর্মীদের সব ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিলেও কনস্ট্রাকশন, পামওয়েল ও প্লানটেশন সেক্টরে তারা কাজ করে না বা এত পরিশ্রম করতে পারেন না। এসব সেক্টরে বাংলাদেশিরা কাজ করে। এজন্য নতুন করে আরো ৫ লাখ কর্মী প্রবেশ করলেও সাময়িক সংকট সৃষ্টি হলেও এটা দীর্ঘস্থায়ী হবে না। কাজের সংকট সৃষ্টি হবে না।  

এদিকে বেশিরভাগ কলিং ভিসার কর্মী তাদের নিজ নিজ কোম্পানিসহ বাইরের কোম্পানিতে কাজ করছেন।  কিন্তু অভিযোগ উঠেছে কিছু কিছু  কোম্পানির নিয়োগ কর্তারা শ্রমিকদের কাজ দিতে পারছেন না, তাদের মাসের পর মাস বসিয়ে রাখছেন, এজন্য তারা মানবেতর জীবন যাপন করছেন, কোম্পানির কথার সাথে বাস্তবে কাজের মিল পাচ্ছে না, তারা এতটা অসহায় কার কাছে কোথায় অভিযোগ করবেন তারা বুঝতে পারছেন না।  

প্রথম দিকে কাজ না পাওয়ার একাধিক অভিযোগ পাওয়া গিয়েছিল কিন্তু এখন কাজ না পাওয়ার অভিযোগ একটু কম। তাছাড়া পাহাড় জঙ্গলে ভরা মালয়েশিয়ার প্রত্যান্ত অঞ্চলের খবর মিডিয়ায় আসে না। এপর্যন্ত কাজ না পাওয়ার যত অভিযোগ কুয়ালালামপুরস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে এসেছে সবগুলো অভিযোগ খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ গ্রহন করেছে দূতাবাস।  

এমনকি দূতাবাসের হস্তক্ষেপে কলিং ভিসার কর্মীদের তৎক্ষনাৎ কাজের ব্যাবস্থা ও করা হয়েছে। কলিং ভিসার শর্ত অনুযায়ী কর্মীরা কাজ পেয়েছেন কি  না বিষয়টি জানতে সরেজমিনে পরিদর্শন করেন প্রতিবেদক,  এসময় কোতাবারু প্রদেশে অবস্থিত মিজান গ্রান্ড ইন্টারট্রেডাসের মাধ্যমে মালয়েশিয়ার সরকারি প্রজেক্টে গেলে কর্মীরা বলেন, আমরা কলিং ভিসায় মালয়েশিয়ায় আসার সাথে সাথে আমাদের কে দাতু মিজান বস থাকার জায়গা সহ চুক্তি অনুযায়ী কাজ দিয়েছে।  আমাদের বেতন ভাতা সঠিক সময়ে পাচ্ছি।  

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. গোলাম সারোয়ার বলেন, মালয়েশিয়ায় নবাগত বাংলাদেশী প্রবাসীরা কর্মীরা ভালো আছেন এবং তারা নতুন কাঠামো অনুযায়ী বেতন/মজুরি পাচ্ছেন। মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিকদের সামাজিক মর্যাদা, কর্ম পরিবেশ ও বেতন কাঠামো নিয়ে বাংলাদেশী কর্মীরা সন্তুষ্ট। তবে অভিবাসন ব্যায় আরও কমানো সম্ভব হলে শ্রমিক-কর্মীরা বেশী বেশী উপকৃত হতেন। এ বিষয়ে উভয় সরকার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

রাষ্ট্রদূত আরো বলেন, খুবই স্বল্প সংখ্যক প্রবাসী মাঝে মাঝে কর্মসংস্থান সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে হাই কমিশনের সহযোগিতার জন্য যোগাযোগ করেন। এ ক্ষেত্রে হাই কমিশন যথাসম্ভব দ্রুততার সাথে মালয়েশিয়ার যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে এ সমস্ত সমস্যা সমাধান করছে। তবে এখন পর্যন্ত এই ধরনের সমস্যাগ্রস্থ কর্মীর সংখ্যা মোট আগত কর্মীর তুলনায় একেবারেই নগন্য।

এইচআর