হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলা নিয়ে নির্মিত বলিউডের সিনেমা ‘ফারাজ’ বাংলাদেশে প্রদর্শন বন্ধের নির্দেশনা চাওয়া রিটের শুনানি শেষ হয়েছে। রবিবার বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের দ্বৈত বেঞ্চে রিটটির শুনানি হয়। সোমবার সকালে খাস কামরায় সিনেমাটি দেখে আদালত আদেশ দেবেন বলে জানিয়েছেন রিটকারী পক্ষের আইনজীবী।
২০১৬ সালের ১ জুলাই ঢাকার গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় নিহত ২২ জনের একজন অবিন্তা কবির। যুক্তরাষ্ট্রের এমোরি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি। একই বিশ্ববিদ্যালয়ে তার সদেশি সহপাঠী ফারাজ আইয়াজ হোসেন ও তাদের ভারতীয় বন্ধু তারিশি জৈনের সঙ্গে সেদিন হালি আর্টিজানে গিয়েছিলেন। কমান্ডো অভিযানে রেস্তেরাটি জঙ্গিমুক্ত করার পর তাদের লাশ পাওয়া যায়।
দেশ-বিদেশে আলোড়ন তোলা সাত বছর আগের এই জঙ্গি হামলা নিয়ে ভারতীয় নির্মাতা হানসাল মেহতা বলিউডে ‘ফারাজ’ সিনেমা নির্মাণ করেন। টি-সিরিজের ব্যানারে সিনেমাটি বানিয়েছেন তিনি। গত ১৬ জানুয়ারি সিনেমাটির ট্রেইলার প্রকাশ করার পর ৩ ফেব্রুয়ারি ভারতজুড়ে সিনেমাটি মুক্তি দেওয়া হয়। সিনেমাটির নির্মাণ, প্রদর্শন বন্ধে শুরু থেকেই সরব ছিলেন অবিন্তা কবিরের মা রুবা আহমেদ। এ দাবি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনও করেনি তিনি। সেখানে ফারাজ চলচ্চিত্রে তার আপিত্তির যৌক্তিকতাও তুলে ধরেন।
তাতে কাজ না হওয়ায় নেটফ্লিক্স, আমাজন প্রাইমসহ অন্যান্য অনলাইন প্লাটফর্ম, দেশের কোনো সিনেমা হল, সিনেপ্লেক্স ও কোনো চলচ্চিত্র প্রদর্শনীতে ফারাজ সিনেমার প্রদর্শন বন্ধে গত ৫ ফেব্রুয়ারি সংশ্লিষ্টদের আইনি নোটিস পাঠান তিনি। কিন্তু ওই নোটিসে সাড়া না পাওয়ায় হাইকোর্টে রিট করেন রুবা আহমেদ।
ভিডিও স্ট্রিমিং ফ্লাটফর্ম নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন প্রাইমসহ অন্যান্য অনলাইন প্ল্যাটফর্ম, দেশের কোনো সিনেমা হল, সিনেপ্লেক্স, টেলিভিশন চ্যানেল ও চলচ্চিত্র প্রদর্শনীতে ফারাজ নিসেমার প্রদর্শন বন্ধের নির্দেশনা চাওয়া হয় রিটে।
আর সিনেমাটি প্রদর্শন স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বিবাদীদের ব্যর্থতা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না এবং দেশের কোনো সিনেমা হল, সিনেপ্লেক্স নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন প্রাইমসসহ অন্যান্য অনলাইন প্ল্যাটফর্মে প্রচার বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, জানতে রুল চাওয়া হয়েছে।
তথ্য ও সম্প্রচার সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (বিটিআরসি) ও পুলিশের মহাপরিদর্শককে বিবাদী করা হয় রিটে। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আহসানুল করীম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।
সিনেমাটিতে অবিন্তা চরিত্রের পোশাক নিয়ে আপত্তি তুলে আইনজীবী আহসানুল করীম সাংবাদিকদের বলেন, ‘অবিন্তার পোশাক পরিচ্ছেদ এমনভাবে দেখানো হয়েছে আমাদের সভ্য সমাজে শিক্ষিত মেয়েরা এই পোশাক কখনো পরে না। এই চলচ্চিত্রে মেয়েটিকে চারিত্রিকভাবে অবনমিত করা হয়েছে।’
দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী র্যাব, পুলিশকে ফারাজ সিনেমায় ব্যর্থ দেখানো হয়েছে বলেও দাবি এই আইনজীবীর। আর এসব কারণেই বাংলাদেশে সিনেমাটির প্রদর্শন উচিত না বলে মনে করেন তিনি।
আগামীকাল সোমবার সকাল সাড়ে ৯টায় আদালত খাস কামরায় চলচ্চিত্রটা দেখে মতামত দিবেন বলে জানান আইনজীবী আহসানুল করীম।