টানা দুই মাস মৃত্যু যন্ত্রনায় বিছানায় প্রহর গুনছিলাম। এখনও আমার সেই দিনের ঘটনা বারবার চোখে ভেসে ওঠে। আমি যখন শুটিংয়ের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম; কস্টিউম পরার আগে ওয়াশরুমে যাই। সেখানে লাইট চালু করতেই চোখের সামনে বারবার অগ্নিকণা দেখি। এর কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই নীল আগুনের লাভার মতো চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। বিকট শব্দে বিস্ফোরণ হলে আমি হাত দিয়ে মুখ ঢাকি। তখন আমার হাতের চামড়া চটচট করে ফুটছিল। বিস্ফোরণে ওয়াশরুমের দরজা, ভেতরের সবকিছু তছনছ হয়ে যায়। আমি ছিটকে বাইরে এসে পড়ি।
এভাবেই সেদিনের সেই ভয়াবহ বিস্ফোরণের বর্ণনা দিচ্ছেলেন অভিনেত্রী শারমিন আঁখি।
বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট বিস্ফোরণে দগ্ধ হয়ে দুই মাস হাসপাতালে থাকার পর এবার বাসায় ফিরলেন ছোটপর্দার দর্শকপ্রিয় এই অভিনেত্রী। তারআগে দুর্ঘটনার সময় ও পরবর্তী বাস্তবতা নিয়ে বিস্তারিত তুলে ধরলেন সংবাদ সম্মেলন করে।
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে তাকে হাসপাতাল থেকে ছাত্রপড় দেওয়া হয়। সেখানে দুর্ঘটনা ও চিকিৎসা সেবার আদ্যোপান্ত তুলে ধরেন শারমিন আঁখি।
বর্তমান শারীরিক অবস্থার কথা জানিয়ে এই অভিনেত্রী বলেন,‘সামনের ৬ মাস আমার জন্য আরো অনেক ভয়ঙ্কর। কারণ, আগামী ৬ মাস আমি শরীরে রোদ লাগাতে পারব না।’
সংবাদ সম্মেলনে এসময় আরও কথা বলেন বার্ন ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন। তিনি বলেন, ‘শরীরের ৩৫ শতাংশ দগ্ধ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন শারমিন। সঙ্গে শ্বাসনালিও দগ্ধ হয়। তাকে কয়েকদিন আইসিইউতেও রাখা হয়। সব মিলিয়ে দীর্ঘ দুই মাস চিকিৎসাধীন থাকার পর মঙ্গলবার তাকে ছাড়পত্র দেওয়া হলো।’
দুর্ঘটনার বর্ণনা দিয়ে শারমিন আঁখি বলেন, ঘটনার পর নানানভাবে কুৎসা রটানো হচ্ছিল, আমি ওয়াশরুমে ধূমপান করার সময় সেখানে বিস্ফোরণ হয়। যেটা একদমই সত্য নয়। সেখানে জমে থাকা কোনও গ্যাস থেকেই এই বিস্ফোরণ হতে পারে।’
এমন দুর্ঘটনার জন্য শুটিং বাড়ির দায় আছে বলে মনে করেন এই অভিনেত্রী। শিল্পীদের নিরাপত্তা নিয়ে সংগঠনগুলোর ভাবা উচিত বলেও মনে করেন এই অভিনেত্রী।
এই অভিনেত্রী বলেন, শিল্পীদের নিরাপত্তায় এখনি ভুমিকা নেয়া উচিত। তা না হলে আগামীতে আরো খারাপ কিছু ঘটতে পারে। আমাদের শিল্পীদের ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেব। আমরা আমাদের শিল্পীদের জানের নিরাপত্তা দিতে পারছি না। শুধু ওই বাড়িটি নয়, সবার স্বার্থে প্রতিটি বাড়ির মালিকদের সহানুভূতিশীল হওয়ার অনুরোধ করব।
রাজধানীর মিরপুরে গত ২৮ জানুয়ারি শুটিং স্পটে দুর্ঘটনার শিকার হন শারমিন আঁখি। অগ্নিদগ্ধ হয়ে শরীরের ৩৫ শতাংশ পুড়ে যায় অভিনেত্রীর। সেরে উঠা নিয়ে ছিলো আশঙ্কা। দৃঢ় মনোবলই তাকে বাড়ি ফিরতে সহায়তা করেছে।