এখন কেমন আছেন সাবিনা ইয়াসমিন

বিনোদন ডেস্ক প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১, ২০২৫, ০৫:৩৪ পিএম

দীর্ঘদিন পর সংগীতের মঞ্চে ফিরেছিলেন বাংলাদেশের কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন। শ্রোতারাও মুগ্ধ হয়ে তার গান শুনছিলেন। এমন সময় হঠাৎ মঞ্চেই অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। দ্রুত তাঁকে গুলশানের একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়।

শনিবার সকালে সাবিনা ইয়াসমিনের মেয়ে সংগীতশিল্পী ইয়াসমিন ফায়রুজ বাঁধন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সাবিনা ইয়াসমীনকে চিকিৎসকেরা এখনো পর্যবেক্ষণে রেখেছেন। তাকে আরও কয়েক দিন হাসপাতালে থাকতে হবে।’

ফায়রুজ বাঁধন জানান, আজ একই মঞ্চে গাওয়ার কথা ছিল সাবিনা ইয়াসমীনের। ১৮ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের মঞ্চে গাওয়ার কথা রয়েছে বরেণ্য এই শিল্পীর। তবে হাসপাতালে ভর্তি থাকা ও চিকিৎসকের পরামর্শে আপাতত কোনো অনুষ্ঠানে গাওয়া হবে না।

গতকাল রাতে সংগীতশিল্পী জাহাঙ্গীর সাইদ বলেছিলেন, ‘সাবিনা আপার ভার্টিগো সমস্যা রয়েছে। হঠাৎ গাইতে গাইতে তিনি ভার্টিগো সমস্যায় পড়েন। এরপর মাইক্রোফোন স্ট্যান্ড ধরতে গিয়ে ভারসাম্য রাখতে পারেননি। পড়ে যান। তারপর দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসকেরা প্রাথমিক সব চিকিৎসা করেন।’

প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন ধরে ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করছেন বরেণ্য এই শিল্পী। অসুস্থতার কারণেই গান থেকে দূরে ছিলেন। এখন খানিকটা সুস্থ বোধ করায় আবারও স্টেজ শোয়ে ফিরেছিলেন তিনি।

সাবিনার জন্ম ১৯৫৪ সালের ৪ সেপ্টেম্বর, ঢাকায়। পৈতৃক নিবাস সাতক্ষীরায়। বেড়ে উঠেছেন সংস্কৃতিমনা পরিবারে। বাবা লুতফর রহমান ও মা মৌলুদা খাতুনও গানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সাবিনার পাঁচ বোনের মধ্যে ফরিদা ইয়াসমিন, ফওজিয়া খান, নীলুফার ইয়াসমিনও গানের জগতের মানুষ।

সংগীতের সঙ্গে সাবিনার বসবাস ছয় দশকের বেশি সময় ধরে। মাত্র সাত বছর বয়সে প্রথমবার স্টেজে গান করেছেন সাবিনা; ১৯৬২ সালে এহতেশাম পরিচালিত ‘নতুন সুর’ সিনেমায় শিশুশিল্পী হিসেবে প্রথম গান করেন। ১৯৬৭ সালে প্রথম প্লেব্যাক করেন আমজাদ হোসেন ও নুরুল হক বাচ্চু পরিচালিত ‘আগুন নিয়ে খেলা’ সিনেমায়। এরপরের ইতিহাস কবেল জয় এবং সাফল্যের।

ভারতের প্রখ্যাত সুরকার আর ডি বর্মণ, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, সত্য সাহা, সুবল দাস, আলম খান, বাপ্পি লাহিড়ী, আলী হোসেন, খন্দকার নুরুল আলম, আলাউদ্দিন আলী, আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের মত সুরকারদের সুরে অসংখ্য চলচ্চিত্রের গান কণ্ঠে তুলেছেন তিনি।

সহশিল্পী হিসেবে, শ্যামল মিত্র, মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়, কুমার শানু, আশা ভোঁসলের মত শিল্পীকে পেয়েছেন তিনি।

দশ হাজারেও বেশি গান কণ্ঠে তুলেছেন সাবিনা ইয়াসমিন। গীতিকার নয়ীম গহরের লেখা ও সুরকার আজাদ রহমানের সুরে সাবিনা ইয়াসমিনের গাওয়া দেশাত্মবোধক গান ‘জন্ম আমার ধন্য হলো মাগো’ একাত্তরের রণাঙ্গনে মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রাণিত করেছিল।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা গানের পাশাপাশি চলচ্চিত্রের গানে কণ্ঠ দিয়ে সব শ্রেণির শ্রোতাদের মাঝে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন সাবিনা ইয়াসমিন। শিক্ষাজীবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন সাবিনা ইয়াসমিন।

সংগীতে অবদানের জন্য ১৯৮৪ সালে একুশে পদক, ১৯৯৬ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার ও ১৪ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।

আরএস