ইউনিসেফ

তাপপ্রবাহে ‘উচ্চ স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে’ শিশুরা

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: এপ্রিল ২৪, ২০২৪, ০৭:২০ পিএম

বাংলাদেশজুড়ে দুঃসহ তাপপ্রবাহ চলছে। সারাদেশে এই অসহনীয় তামপাত্রায় শিশুদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘের শিশু তহবিল ইউনিসেফ। বাংলাদেশে শিশুরা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ‘অতি উচ্চ ঝুঁকিতে’ রয়েছে জানিয়ে বাড়তি সতর্কতার তাগিদ দিয়েছে সংস্থাটি।

বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায় ইউনিসেফ।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অস্বাভাবিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি শিশুদের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করে, বিশেষ করে নবজাতক, সদ্যোজাত ও অল্পবয়সী শিশুদের জন্য। হিটস্ট্রোক ও পানিশূন্যতাজনিত ডায়রিয়ার মতো, উচ্চ তাপমাত্রার প্রভাবে সৃষ্ট অসুস্থতায় এই বয়সী শিশুরা বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে। এ বিষয়ে প্রতিরোধ ও প্রাথমিক চিকিৎসাসহ তিনটি পরামর্শও তুলে ধরেছে সংস্থাটি।

ইউনিসেফের ২০২১ সালের শিশুদের জন্য জলবায়ু ঝুঁকি সূচক (সিসিআরআই) অনুযায়ী, বাংলাদেশে শিশুরা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ‘অতি উচ্চ ঝুঁকিতে’ রয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।

বলা হয়, ‘শিশুদের ওপর তাপমাত্রা বৃদ্ধির নেতিবাচক প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সারা দেশে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করেছে। এই পরিস্থিতিতে ইউনিসেফ বাবা-মায়েদের প্রতি তাদের সন্তানদের পানি শূন্যতা থেকে রক্ষা ও নিরাপদ রাখার জন্য বাড়তি সতর্কতা অবলম্বনের আহ্বান জানাচ্ছে।’

বলা হয়, ‘চলমান তাপপ্রবাহসহ জলবায়ু পরিবর্তনের আরও ক্ষতিকর প্রভাব থেকে শিশুদের রক্ষা করার জন্য জরুরি পদক্ষেপ নেবার এখনই সময়। অস্বাভাবিকভাবে তাপমাত্রা বাড়তে থাকায়, আমাদেরকে আগে শিশু নিরাপদে রাখার প্রতি নজর দিতে হবে।’

চলমান এই তাপপ্রবাহ থেকে শিশু ও অন্তঃসত্ত্বা নারীদের সুরক্ষার জন্য সম্মুখ সারির কর্মী, বাবা-মা, পরিবার, পরিচর্যাকারী ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষের প্রতি তিনটি পরামর্শ তুলে ধরেছে ইউনিসেফ।

শিশুরা যেখানেই থাকুক না কেন তাদের বসা ও খেলার জন্য ঠাণ্ডা জায়গার ব্যবস্থা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তপ্ত দুপুর ও বিকেলের কয়েক ঘণ্টা তাদের বাড়ির বাইরে শিশুরা যেন না যায় এবং হালকা ও বাতাস চলাচলের উপযোগী পোশাক পরে, তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে সারা দিন তারা যেন প্রচুর পানি পান করে, সেটাও নিশ্চিত করতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

প্রাথমিক চিকিৎসার কয়েকটি বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছে ইউনিসেফ। বলা হয়েছে, যদি কোনো শিশু বা অন্তঃসত্ত্বা নারীর মধ্যে ‘হিট স্ট্রেস’ বা তাপমাত্রাজনিত সমস্যার উপসর্গ দেখা দেয় (যেমন, মাথা ঘোরা, অতিরিক্ত ঘাম হওয়া, বমিবমি ভাব, হালকা জ্বর, নাক দিয়ে রক্ত পড়া, মাংসপেশীতে টান, ডায়াপার পরার জায়গাগুলোতে ফুসকুড়ি) তাহলে তাকে একটি ঠাণ্ডা জায়গায় বা ছায়া এবং পর্যাপ্ত বাতাস চলাচল করে এমন জায়গায় নিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

এরপর ভেজা তোয়ালে দিয়ে তার শরীর মুছে দিয়ে বা গায়ে ঠাণ্ডা পানি দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি বা খাবারস্যালাইন (ওআরএস) পান করতে দিতে হবে। তবে হিট স্ট্রেসের (তাপমাত্রাজনিত অসুস্থতার) উপসর্গ তীব্র হলে (যেমন কনো কিছুতে সাড়া না দিলে, অজ্ঞান হয়ে পড়লে, তীব্র জ্বর, হৃদস্পন্দন বেড়ে গেলে, খিঁচুনি দেখা দিলে এবং অচেতন হয়ে পড়লে) সাথে সাথে হাসপাতালে নিতে হবে।

প্রতিবেশীদের খেয়াল রাখার পরামর্শ দিয়েছে ইউনিসেফ। তাপপ্রবাহ চলাকালে অসহায় পরিবার, প্রতিবন্ধী শিশু, অন্তঃসত্ত্বা নারী ও প্রবীণ ব্যক্তিরাই সবার আগে অসুস্থ হয়ে পড়েন, এমনকি মৃত্যুর উচ্চ ঝুঁকিতেও তারাই বেশি থাকেন। প্রতিবেশী, বিশেষ করে যারা একা থাকেন, তাদের খোঁজ  ও খেয়াল রাখার প্রতি গুরাত্বারোপ করেছে ইউনিসেফ।

আরএস