ডা. মো. সাইফুল ইসলাম স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদের সহকারি সচিব থেকে উপসচিব হিসেবে পদোন্নতি পেতে একের পর এক পলাতক আওয়ামীলীগের মন্ত্রী এমপিদের লিখিত সুপারিশ নিয়েছেন। সম্প্রতি এসব সুপারিশনামা সামাজিক মাধ্যমগুলোতে ভাইরাল হয়েছে।
এবার দুর্নীতিবাজ, আওয়ামীলীদের সুপারিশে পদ বাগানো ভারতের দালাল ডা. মো. সাইফুল ইসলামকে রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদ থেকে বহিষ্কারের দাবিতে মানববন্ধন করেছে ফ্যাসিবাদ বিরোধী ছাত্র জনতা মঞ্চ নামের একটি সংগঠন।
রবিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত ওই মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন ফ্যাসিবাদ বিরোধি ছাত্র জনতা মঞ্চের সদস্য সচিব ডিকে সোলায়মান, আহ্বায়ক জাকি সুমন এবং যুগ্ম আহ্বায়ক নাসির হোসেন।
ডিকে সোলায়মান তার বক্তব্যে বলেন, আমাদের হাতে বিভিন্ন দালিলিক প্রমাণ এসেছে। যার একটিতে দেখা যায় ডা. সাইফুল ইসলামকে বঙ্গবন্ধুর সৈনিক ও তার পরিবারের সবাইকে আওয়ামীলীগের রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয় হিসেবে প্রত্যায়ন করা হয়েছে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে।
এরপর ডা. সাইফুল ইসলাম সাবেক মৎস্য ও সাকেব প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী আব্দুল লতিফ বিশ্বাস, অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন মজিবুর রহমান ফকির এমপি, সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি অধ্যক্ষ খাদিজা খাতুন শেফালীর সুপারিশ নিয়েছেন। তারা সবাই ডা. সাইফুল ইসলামকে সহকারি সচিব থেকে উপসচিব পদে প্রমোশনের জন্য সুপারিশ করেছেন। তিনি সহকারি সচিব থাকাকালীন সময়ে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী এমপির সুপারিশে অনুষদের সাথে সম্পর্কিত নয় এমন বিষয়ে সার্জারিতে কোর্স করার জন্য প্রেষণে ছুটি নেন কিন্তু তিনি কোর্স সম্পন্ন না করায় অনুষদে অভিজ্ঞতা অর্জিত না হওয়ায় অনুষদের পদোন্নতি কমিটি তার পদোন্নতি প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করে মিটিং রেজুলেশন কারণে এতে ডা: মো. সাইফুল ইসলাম পদোন্নতির জন্য মরিয়া হয়ে যায় তার ফলশ্রুতিতে তিনি ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রভাব খাটিয়ে পদোন্নতির সুপারিশ করান।
সোলায়মান আরও বলেন, এত এত দালিলিক প্রমাণ থাকার পরেও ডা. সাইফুল ইসলাম কী করে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল থাকে? তাকে অবশ্যই রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদ থেকে টেনে হিঁচড়ে বের করে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।
ফ্যাসিবাদ বিরোধি ছাত্র জনতা মঞ্চের আহ্বায়ক জাকি সুমন বলেন, দালালদের একগাদা সুপারিশের ভিত্তিতে ২০১৩ সালে ঠিকই ডা. সাইদুর রহমানকে রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদের উপসচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। দীর্ঘ ১১ বছরের বেশি সময় ধরে তিনি উপসচিবের পদ ধরে রেখেছেন।
জাকি সুমন আরও বলেন, আমরা সময়ক্ষেপণ চাই না। সচিবালয়ে ফ্যাসিস্টদের লাগানো ভয়াবহ আগুনের কথা আমরা জানি। ডা. সাইফুল ইসলামের মতো ভারতের ও আওয়ামী লীগের দালাল যদি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় থাকে, আবার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আগুন লাগবে। তারা সরকারকে বিপদে ফেলার জন্য ওত পেতে আছে। সাইফুল ইসলামকে অপসারণ করা না হলে কঠোর আন্দোলনে যাওয়া হবে।
ফ্যাসিবাদ বিরোধী ছাত্র জনতা মঞ্চের যুগ্ম আহ্বায়ক নাসির হোসেন বলেন, বর্তমানে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে অনুষদের সাবেক সচিব ডা: জাহিদুর রহমান পদত্যাগ করলে ডা: মো: সাইফুল ইসলাম রাতারাতি হয়ে যায় বি এন পি সমর্থিত ডাক্তার নেতা। মোবাইলে রেখেছেন নেতাদের ছবি কেও গেলে তাকে দেখান সে সব ছবি।
তিনি বলেন, আওয়ামীলীগের মন্ত্রী এমপিরা কেউ পালিয়ে গেছেন, কেউ গ্রেফতার হয়েছেন। ডা. মো. সাইফুল ইসলাম থেকে গেছেন নিজ পদে বহায় তবিয়তে। এখন তিনি টাকা দিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় থেকে স্বপদে বহাল আছেন। এবং দ্বায়িত্ব নিয়েছেন সচিব পদের।
সচিব পদে দ্বাযিত্ব নিয়ে হয়ে যান বেপরোয়া অফিস স্টাফদের সাথে করেন দুর্ব্যবহার এমনকি রুমে ডেকে নিয়ে গালাগালি করেন ইচ্ছামতো তার সহযোগী হিসাবে পাশে বসে থাকেন অফিসের হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা গোলাম মাহমুদুল হাসান। এমনকি বাহিরে লোক নিয়ে এসে স্টাফদের দেন হুমকি থামকি সম্প্রতি অফিসের স্টাফ তার এই অত্যাচার থেকে রেহাই পেতে মন্ত্রণালয়ে সচিব বরাবর অনুষদের ১১ জন কর্মচারী অভিযোগ করেন তার বিরুদ্ধে উল্লেখ্য অনুষদের মো স্টাফ ২০ জন।
নাসির হোসেন বলেন, রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদে অনুসন্ধান চালিয়ে তার বিরুদ্ধে আরও বড় বড় দুর্নীতির খবর মিলেছে। স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদকে বানিয়েছেন দুর্নীতির আখড়া। ছাত্রদের থেকে পরীক্ষার অর্থ নিয়ে পরীক্ষা না নেওয়া, একই দিনে রাঙ্গামাটি ও কুমিল্লায় অডিট দেখিয়ে টাকা তোলা, পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে কামিয়েছেন শতকোটি টাকা। এখন সেই টাকা খরচ করছেন বিভিন্ন পেশাদার ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাদের পিছে। এমনকি নামে বেনামে রয়েছে বিঘা বিঘা জমি ও ব্যাংকে রয়েছে কোটি কোটি টাকা।
বক্তব্যে নাসির হোসেন বলেন, এসব বিষয়ে বিভিন্ন সময় তার সহকর্মীরা মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে অভিযোগ জানালেও টাকা দিয়ে সব ম্যানেজ করে নিয়েছেন ডা. মো সাইফুল ইসলাম এখন সাংবাদিক দেখলে তিনি পালিয়ে বেড়ান। অফিসের নিচে তার লোক বসে থাকে, সাংবাদিক যাওয়ার খবর পেলে অফিস থেকে পালিয়ে যান। উল্লেখিত অভিযোগের বিষয়ে তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে সাড়া দেননি সাইফুল ইসলাম। অভিযোগ উঠছে, রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গার সর্বোচ্চ কর্মকর্তা হয়ে বসে আছেন আওয়ামী লীগের এজেন্ট। যে কোনো সময় দলীয় নাশকতার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে মুখিয়ে আছেন তিনি।
বক্তব্যের শেষে নাসির হোসেন হুঁশিয়ার উচ্চারণ করেন বলেন, ‘এক সপ্তাহের ভেতর যদি ডা. সাইফুল ইসলামকে অপসারণ করা না হয় তাহলে প্রয়োজনে আমরা সরকার পতনের ডাক দেব। যে সরকার শহীদদের রক্তের উপর দাঁড়িয়ে তারাই যদি আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের ভরণ পোষণের দায়িত্ব নেয় সেই সরকারকে আমরা চাই না।
আরএস