আজ পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবস, দিনটি উপলক্ষে এক দিনের জাতীয় ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে পালিত হচ্ছে দিবসটি। ১৯৪৭ সালের এই দিনে ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভ করে পাকিস্তান বিশ্বের প্রথম ইসলামী প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয়। একটি সার্বভৌম দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
এই দিন ফেডারেলে ৩১টি বন্দুকের স্যালুট এবং প্রাদেশিক রাজধানীতে ২১টি বন্দুকের স্যালুটের মাধ্যমে দিনটি শুরু হয়।
[229863]
ইসলামাবাদে, সকাল ৯.৫৯ মিনিটে একটি সাইরেন বাজানো হয় এবং যান চলাচল এক মিনিটের জন্য স্থবির হয়ে পড়ে। এরপর রাষ্ট্রপতি জাতীয় সঙ্গীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। এরপর দিবসটি উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন রাষ্ট্রপতি।
এই দিনটি দেশপ্রেম এবং জাতীয় ঐক্যের প্রচারের একটি উপলক্ষ এবং পাকিস্তান দিবসের মতো একইভাবে পালন করা হয়।
দক্ষিণ এশিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশগুলো নিয়ে আলাদা রাষ্ট্র গঠন করার জন্য পাকিস্তান আন্দোলনের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের আত্মপ্রকাশ ঘটে। আন্দোলনটি পরিচালনা করে নিখিল ভারত মুসলিম লীগ, যার নেতৃত্বে ছিলেন মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ।
পাকিস্তান ১৮ শতক থেকে ভারতের উপনিবেশের অংশ ছিল, প্রথমে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অংশ হিসেবে এবং তারপর ব্রিটিশ ভারতীয় সাম্রাজ্যের অংশ হিসেবে।
পাকিস্তান গঠনকারী অঞ্চল গুলো উনিশ শতকের অধিকাংশ সময় জুড়ে ব্রিটিশ শাসনের অন্তর্ভুক্ত ছিলো। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ১৭ শতকে দক্ষিণ এশিয়ায় বাণিজ্য শুরু করে এবং ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধ জয়ের মাধ্যমে ভারতে কোম্পানি শাসন শুরু হয়। ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের পরে ভারত শাসন আইন ১৮৫৮ অনুযায়ী ভারতীয় উপমহাদেশের অধিকাংশ অঞ্চলের শাসনভার ব্রিটিশ রাজ পরিবারের হাতে চলে যায়।
১৪ ও ১৫ আগস্ট মধ্যরাতে শাসনক্ষমতা হস্তান্তর করা হয় এবং ভারত স্বাধীন আইন ১৯৪৭ অনুসারে ১৫ আগস্টকে ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশের স্বাধীনতা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। আইনে বলা হয়;
"As from the fifteenth day of August, nineteen hundred and forty-seven, two independent Dominions shall be set up in India, to be known respectively as India and Pakistan."
"August 15 is the birthday of the independent and sovereign state of Pakistan. It marks the fulfilment of the destiny of the Muslim nation which made great sacrifices in the past few years to have its homeland."
১৯৪৮ সালের জুলাইতে দেশটির প্রথম স্মারক ডাকটিকিট উন্মোচন করা হয়, সেখানেও ১৫ আগস্ট ১৯৪৭ তারিখটিকে স্বাধীনতা দিবস হিসেবে উল্ল্যেখ করা হয়। তবে পরবর্তী বছর হতে ১৪ আগস্ট তারিখটি স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালিত হতে থাকে। ১৯৪৭ সালের ১৪-১৫ তারিখ রাতটি ছিলো ২৭ রমজান ১৩৬৬ হিজরি, এই রাতটিকে মুসলমানগন পবিত্র রজনী হিসেবে বিবেচনা করেন।
[229874]
স্বাধীনতা দিবস পাকিস্তানে পালিত ছয়টি ছুটির দিনের মধ্যে একটি এবং এটি সারা দেশব্যাপী উদযাপিত হয়। স্বাধীনতা দিবস উদ্যাপনের প্রস্তুতি এবং পরিকল্পনা চূড়ান্ত করার জন্য প্রাদেশিক সরকার গুলো বিভিন্ন প্রদেশের রাজধানীতে সভা করে। এসকল সভায় সরকারী কর্মকর্তা, কূটনীতিবিদ এবং রাজনৈতিকবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। আগস্ট মাসের শুরু থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ দোকান এবং স্টল গড়ে ওঠে; এসকল দোকানে জাতীয় পতাকা, ব্যানার, পোস্টার, জাতীয় বীরদের ছবি প্রভৃতি বিক্রয় করা হয়। যানবাহন, ব্যক্তিগত ভবন, বাসা-বাড়ি এবং রাস্তাগুলো জাতীয় পতাকা দ্বারা সজ্জিত করা হয়। বিভিন্ন সংগঠন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সরকারী বিভাগ সমূহ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সেমিনার, ক্রীড়াপ্রতিযোগিতা এবং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে। করাচিতে এই দিন উদ্যাপনের জন্য জিন্নাহর সমাধির পথ পরিষ্কার ও প্রস্তুত করা হয়।
দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানি হাই কমিশনার ইমরান আহমেদ সিদ্দিকী পাকিস্তান হাই কমিশনের ফেসবুকে পেইজে একটি বার্তা দিয়েছেন সেখানে তিনি বলেন,
প্রিয়, ভাই/বোন,
আসসালামু আলাইকুম,
আপনাদের সকলকে স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা। আজ, আমাদের প্রবীণ গুরুজনদের আত্মত্যাগকে স্মরণ করার পাশাপাশি, কায়েদে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর বীরত্বপূর্ণ নেতৃত্বকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করতে হবে এবং তাঁর আত্মার জন্য আমাদের সকলকে প্রার্থনা করতে হবে, সেই সাথে, কাশ্মীরি জনগণের প্রতি আমাদের অঙ্গীকার পুনর্নবীকরণ করতে হবে এবং আমাদের দেশকে একটি সত্যিকারের কল্যাণকর রাষ্ট্রে রূপান্তরিত করার লক্ষ্যে নিয়ে আমাদের দৃঢ় সংকল্প পুনর্নবীকরণ করতে হবে। সমস্ত ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে দেশের সকল নাগরিক এবং আমাদের সন্তানদের জানাতে হবে, কেন আমাদের জন্য পাকিস্তান অনিবার্য ছিল। সর্বোপরি ঔপনিবেশিক আধিপত্য এবং সংখ্যাগরিষ্ঠতাবাদী অত্যাচারের বিরুদ্ধে আমাদের স্বাধীনতা দেওয়ার জন্য মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানাই এবং এই দুটি অশুভ শক্তি থেকে ভুক্তভোগী সকলের মুক্তির জন্য মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে প্রার্থনা করি।
ইমরান আহমেদ সিদ্দিকী
হাই কমিশনার
আমারসংবাদ/টিএইচ/ইএফ