চীনের সাথে দীর্ঘদিনের বিরোধপূর্ণ লাদাখ সীমান্তের পূর্বাঞ্চলীয় ৬৫ টহল পয়েন্টের মধ্যে অন্তত ২৬টিতে প্রবেশের অধিকার হারিয়েছে ভারত। ভারতের কেন্দ্রশাসিত লাদাখের জ্যেষ্ঠ একজন পুলিশ কর্মকর্তার এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। ভারতীয় ওই পুলিশ কর্মকর্তা চীনের সাথে ভারতের বিতর্কিত সাড়ে তিন হাজার সীমান্ত এলাকা নিয়ে চলমান উত্তেজনার মাঝে নতুন এই উদ্বেগজনক তথ্য প্রকাশ করেছেন। লাদাখের প্রধান শহর লেহের পুলিশ সুপার পিডি নিত্য গবেষণা প্রতিবেদনে চাঞ্চল্যকর এ তথ্য উপস্থাপন করেছেন।
দেশটির সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি পিডি নিত্যের গবেষণা প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে গতকাল বুধবার এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে। গবেষণা প্রতিবেদনে পুলিশ সুপার পিডি নিত্য লিখেছেন, `বর্তমানে কারাকোরাম পাস থেকে চুমুর পর্যন্ত ৬৫টি টহল পয়েন্ট (প্যাট্রোলিং পয়েন্ট বা পিপি) রয়েছে; যেখানে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর (আইএসএফ) সদস্যরা নিয়মিত টহল দেন। ৬৫ টহল পয়েন্টের মধ্যে ২৬টিতে আমাদের উপস্থিতি হারিয়ে গেছে। যেমন, পিপি ৫-১৭, ২৪-৩২, ৩৭ এ ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর টহল সীমিত হয়েছে অথবা কোনো টহলই নেই।
গত সপ্তাহে রাজধানী নয়াদিল্লিতে ভারতের শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তাদের বার্ষিক এক সম্মেলনে এ প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। ওই সম্মেলনে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল উপস্থিত ছিলেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “পরবর্তীতে চীন আমাদের এই সত্য মেনে নিতে বাধ্য করেছে যে, এসব এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী অথবা ভারতের বেসামরিক নাগরিকদের উপস্থিতি দেখা যায়নি; যে কারণে ওই অঞ্চলে চীনারা উপস্থিত হয়েছে। এর ফলে আইএসএফের নিয়ন্ত্রণে থাকা সীমানা ভারতের দিক থেকে সরে গেছে এবং এ ধরনের সব পকেটে একটি `বাফার জোন` তৈরি হয়েছে; শেষ পর্যন্ত এই অঞ্চলগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ হারাতে পারে ভারত। চীনের সামরিক বাহিনীর (পিএলএ) ইঞ্চি ইঞ্চি করে জমি দখলের এই কৌশল `সালামি স্লাইসিং` নামে পরিচিত।”
ভারতীয় এই পুলিশ কর্মকর্তা লিখেছেন, পিএলএ উত্তেজনা প্রশমনের আলোচনার সময় বাফার এলাকার সুযোগ নিয়ে লাদাখের সর্বোচ্চ চূড়ায় ক্যামেরা স্থাপন করে আমাদের বাহিনীর গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছে। এমনকি তারা বাফার জোনেও আমাদের চলাফেরায় আপত্তি জানায় এবং সেটি তাদের অপারেশন এলাকা বলেও দাবি করে। শুধু তা-ই নয়, সেখানে আরও বাফার এলাকা তৈরি করার জন্য আমাদের ফিরে যাওয়ারও আহ্বান জানায় চীনা সামরিক বাহিনী।
তিনি বলেন, ২০২০ সালে পালওয়ান উপত্যকায় প্রাণঘাতী সংঘর্ষে ২০ ভারতীয় সৈন্য ও চার চীনা সৈন্য নিহত হওয়ার পর চীনা এই কৌশল দেখা গিয়েছিল। সে সময় লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় দুই দেশের সৈন্যদের হাতাহাতি ও পাথর নিক্ষেপের ঘটনায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছিল।
পিডি নিত্য বলেন, এলাকাগুলোকে সীমান্তের বাইরের হিসাবে চিহ্নিত করা এবং সেগুলো ফেলে রাখাটা সৈন্যদের মনোবলকেও প্রভাবিত করে। ভারতের জ্যেষ্ঠ এক পুলিশ কর্মকর্তার সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন তিনি। ওই পুলিশ কর্মকর্তা লাদাখের সম্মুখসারির একটি এলাকার দায়িত্ব রয়েছেন।
আলাপচারিতার সময় নিত্য বলেন, যদি ৪০০ মিটার পিছিয়ে গিয়ে আমরা চার বছরের জন্য পিএলএর সাথে শান্তি স্থাপন করতে পারি, তাহলে সেটি মূল্যবান। তবে ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার এখনও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
ভারতের ইংরেজি দৈনিক দ্য হিন্দুর সাথে আলাপচারিতায় দেশটির একটি প্রতিরক্ষা সূত্র পাল্টা দাবি করে বলেছে, সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে উত্তেজনা প্রশমনে নেয়া ব্যবস্থার কারণে কোনো অঞ্চলেরই নিয়ন্ত্রণ খোয়া যায়নি। ভারতের এই দৈনিক লাদাখের টহল পয়েন্টে দেশটির সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ হারানোর বিষয়ে প্রথম খবর প্রকাশ করে।