গত কয়েক দশকের মধ্যে ভয়াবহতম ভূমিকম্প পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে তুরস্ক। গত কয়েকদিনে হাজার হাজার মানুষের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে ভূমিকম্প উপদ্রুত এলাকাগুলোর বিভিন্ন অ্যাপার্টমেন্ট ভবনের ধ্বংসাবশেষ থেকে।
এসব ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে কোনো গাফিলতি ছিল কিনা— নিশ্চিত হতে ভবন নির্মাতাদের বিরুদ্ধে বিচারবিভাগীয় তদন্ত শুরু করেছে তুরস্কের আইন ও বিচার বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী বেকির বোজদাগ শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের চিফ পাবলিক প্রসিকিউটরের দপ্তর কাহরামানমারাশ ও অন্যান্য উপদ্রুত প্রদেশের ভবন নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে। যদি সরকারি নির্দেশনা মেনে ভবনগুলো নির্মাণ করা হতো, তাহলে নিশ্চিতভাবেই এত প্রাণহানি আমাদের দেখতে হতো না।’
‘এক্ষেত্রে দোষ-ঘাটতি বা অবহেলা যারই থাকুক, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হবে— তাদের সবার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
আইন ও বিচারবিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তদন্ত পরিচালনা করতে ইতোমধ্যে তুরস্কের বিভিন্ন আদালতের ২০৬ জন পাবলিক প্রসিকিউটরকে নিয়োগ করা হয়েছে।
১৯৯৯ সালে তুরস্কের দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলে ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিল। সেই দুর্যোগে নিহত হয়েছিলেন ১৪ হাজারেরও বেশি মানুষ। তারপর দেশজুড়ে ভূমিকম্প সহনশীল ভবন নির্মাণের আদেশ জারি করেছিল তুরস্কের কেন্দ্রীয় সরাকর। ভবন নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ সম্পর্কিত নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছিল।
সোমবার স্থানীয় সময় ভোর ৪টা ১৭ মিনিটে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে তুরস্ক ও তার প্রতিবেশী দেশ সিরিয়া। ওই ভূমিকম্পের ১৫ মিনিট পর ৬ দশমিক ৭ মাত্রার আরও একটি বড় ভূমিকম্প এবং পরে অনেকগুলো আফটারশক হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএসের তাৎক্ষণিক এক বিবৃতিতে বলা হয়, তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলীয় কাহরামানমারাস প্রদেশের গাজিয়ানতেপ শহরের কাছে ভূপৃষ্ঠের ১৭ দশমিক ৯ কিলোমিটার গভীরে ছিল ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল।
ভূমিকম্পে ইতোমধ্যে তুরস্ক ও সিরিয়ায় উদ্ধারকৃত মৃতদেহের সংখ্যা পৌঁছেছে ২২ হাজার ৭০০ জনে, শুধু তুরস্ক থেকেই এ উদ্ধার করা হয়েছে ১৯ হাজারেরও বেশি মৃতদেহ। এই সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে বলে জানিয়েছেন উদ্ধারকর্মীরা; কারণ বিভিন্ন ভবনের ধ্বংসাবশেষের তলায় এখনও চাপা পড়ে আছে শত শত মরদেহ।
এছাড়া দুই দেশে আহত হয়েছেন আরও প্রায় ৮০ হাজার মানুষ।