আল-আকসা মসজিদে ইসরায়েলের বর্বর হামলা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক প্রকাশিত: এপ্রিল ৫, ২০২৩, ১১:৩১ এএম

রাতের আঁধারে ফিলিস্তিনের অধিকৃত জেরুজালেমের পবিত্র আল আকসা মসজিদে মুসল্লিদের ওপর হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি পুলিশ। বর্তমানে পবিত্র রমজান মাস চলছে এবং বুধবার (৫ এপ্রিল) ভোরের আগে সেখানে এই হামলার ঘটনা ঘটে।

অবশ্য মাত্র কয়েকদিন আগে মুসলিমদের তৃতীয় সর্বোচ্চ ধর্মীয়স্থান আল আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে এক ফিলিস্তিনি যুবককে দিনে-দুপুরে গুলি করে হত্যা করেছিল ইসরায়েলি পুলিশ। বুধবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জেরুজালেমের পবিত্র আল আকসা মসজিদ ও এর প্রাঙ্গণে ইবাদতরত কয়েক ডজন মুসল্লির ওপর হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি পুলিশ। রাতের আধাঁরে হওয়া এই হামলায় সাতজন আহত হয়েছেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।

অবশ্য বুধবার ভোরের আগে ইসরায়েলি পুলিশ দাবি করে, তারা আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে ‘দাঙ্গার’ জবাব দিচ্ছে এবং এ কারণে সেখানে অভিযান চালানো হয়।

এদিকে ইসরায়েলি পুলিশের হামলায় ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট মুসল্লিদের আহত হওয়ার খবর দিয়েছে। তবে ঠিক কতজন আহত হয়েছেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানায়নি তারা। এক বিবৃতিতে সংস্থাটি বলেছে, ইসরায়েলি বাহিনী তাদের চিকিৎসকদের আল-আকসায় প্রবেশ করতে বাধা দিচ্ছে।

আল-আকসা মসজিদে ইসরায়েলি পুলিশের হামলার শিকার হয়েছেন এক বয়স্ক নারী। পরে মসজিদের বাইরে বসে তিনি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন। এসময় তার শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল।

বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে বয়স্ক ওই নারী বলেন, ‘আমি একটি চেয়ারে বসে (কোরআন) তেলাওয়াত করছিলাম। একপর্যায়ে তারা (ইসরায়েলি পুলিশ) স্টান গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। ওই গ্রেনেডের মধ্যে একটি আমার বুকে আঘাত করেছে।’

এসময় তিনি কাঁদতে শুরু করেন।

ইসরায়েলি পুলিশ এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘মুখোশধারী আন্দোলনকারীরা’ আতশবাজি, লাঠি এবং পাথর নিয়ে মসজিদের ভেতরে অবস্থান নেওয়ায় তারা জোর করে মসজিদ কম্পাউন্ডে প্রবেশ করতে বাধ্য হয়েছিল।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘মসজিদ প্রাঙ্গণে পুলিশ প্রবেশ করার পর তাদের দিকে পাথর ছুড়ে মারা হয় এবং মসজিদের ভেতর থেকে আতশবাজি নিক্ষেপ করা হয়। এতে একজন পুলিশ কর্মকর্তা আহত হয়েছেন।’

ফিলিস্তিনের অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেম ও পশ্চিম তীরে কয়েক মাস ধরে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এছাড়া মুসলিমদের পবিত্র রমজান মাস এবং ইহুদি পাসওভারের (ইহুদিদের বাৎসরিক ইভেন্ট) মতো গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় উৎসব একসঙ্গে হওয়ায় আরও সহিংসতার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

এদিকে পবিত্র আল আকসা মসজিদে মুসল্লিদের ওপর হামলার সর্বশেষ এই ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে ফিলিস্তিনি দলগুলো। এছাড়া হামলার ঘটনাকে তারা অপরাধ হিসেবেও বর্ণনা করেছে।

ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের মুখপাত্র নাবিল আবু রুদেইনেহ বলেছেন, ‘আমরা পবিত্র স্থানগুলোতে রেড লাইন অতিক্রম করার বিরুদ্ধে দখলদার ইসরায়েলকে সতর্ক করছি। এই ধরনের ঘটনা ব্যাপকভাবে ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটাবে।’

অন্যদিকে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার ক্ষমতাসীন দল হামাস সর্বশেষ এই অভিযানকে ‘অভূতপূর্ব অপরাধ’ বলে নিন্দা করেছে। একইসঙ্গে পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনিদের ‘আল-আকসা মসজিদে ব্যাপকভাবে যাওয়ার’ আহ্বানও জানিয়েছে দলটি।

এদিকে পৃথক প্রতিবেদনে বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, আল আকসা মসজিদে মুসল্লিদের ওপর ইসরায়েলি পুলিশের হামলার এই ঘটনাটি অধিকৃত পশ্চিম তীরজুড়ে বিক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। একইসঙ্গে এই ঘটনার জেরে গাজা থেকে ইসরায়েলের দিকে নয়টি রকেট নিক্ষেপ করা হয়েছে বলেও জানিয়েছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলেছে, গাজা থেকে ইসরায়েলের দিকে নয়টি রকেট নিক্ষেপ করা হয়েছে। যার মধ্যে অন্তত চারটি ধ্বংস করা হয়েছে এবং আরও চারটি খোলা জায়গায় পড়েছে।

আরএস