করোনা মহামারিতে স্থবির হয়ে পড়া অর্থনীতি ফের চাঙা করতে এবার ভিসানীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছে চীন। পরিবর্তিত নীতি অনুযায়ী, এখন থেকে যেসব বিদেশি নাগরিক বাণিজ্য আলোচনা, উৎপাদিত পণ্য প্রদর্শন, বাণিজ্য সম্মেলন ও বিনিয়োগের জন্য চীনে আসবেন, তারা ‘অন অ্যারাইভাল ভিসা’ সুবিধা ভোগ করবেন।
এর আগে, চীনে প্রবেশের ক্ষেত্রে সব বিদেশি যাত্রীকে নিজ নিজ দেশের চীনা দূতাবাসে যোগাযোগ করে ভিসা নিতে হতো। পরিবর্তিত নীতি অনুসারে, এখন থেকে অর্থনৈতিক উদ্দেশ্যে চীনে আসতে ইচ্ছুক বিদেশি নাগরিকদের আর নিজ দেশের দূতাবাসে গিয়ে ভিসার আবেদন করতে হবে না। চীনের বিমানবন্দরে নেমেই তারা ভিসা নিতে পারবেন।
বৃহস্পতিবার দেশটির জননিরাপত্তা মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া বিবৃতিতে নিশ্চিত করা হয়েছে এসব তথ্য।
সম্প্রতি চীনের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কিত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে চীনের অর্থ মন্ত্রণালয়। সেই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত তিন মাসে চীনের অর্থনীতির সার্বিক প্রবৃদ্ধি ঘটেছে মাত্র দশমিক ৮ শতাংশ এবং একই সময়সীমায় দেশটিতে বেকারত্বের হার বেড়েছে ২০ শতাংশ।
তারপরই শুক্রবার ভিসা নীতিতে এই পরিবর্তন ঘোষণা করল জননিরাপত্তা মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা এ প্রসঙ্গে বার্তাসংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘আমরা চীনে বিভিন্ন দেশের লোকজন, যানবাহন, তথ্য এবং ডেটার অবাধ ও মুক্ত চলাচল দেখতে চাই। এজন্যই ভিসা নীতিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে।’
উল্লেখ্য, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হিসেবে পরিচিত চীনের বর্তমান এই অর্থনৈতিক ধীরগতির প্রধান কারণ হিসেবে দেশটির করোনা বিষয়ক কঠোর নীতিকে দায়ী করেছেন আন্তর্জাতিক অর্থনীতি বিশ্লেষকরা।
২০২০ সালের মার্চে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনাকে বৈশ্বিক মহামারি হিসেবে ঘোষণা করার পর বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো চীনও দিনের পর দিন লকডাউন, কোয়ারেন্টাইন, বাধ্যতামূলক কোভিড টেস্ট প্রভৃতি কঠোর সব নীতি গ্রহণ করেছিল। ২০২১ সালের শুরু থেকে মাঝামাঝির মধ্যে অধিকাংশ দেশ এসব বিধিনিষেধ শিথিল করলেও চীন ছিল একমাত্র ব্যতিক্রম।
পরে ২০২২ সালের নভেম্বরে সাধারণ জনগণ সরকারের কঠোর কোভিডনীতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু করলে সেসব নীতি বাতিল করে চীনের সরকার।
আন্তর্জাতিক অর্থনীতিবিদদের মতে, চীনের অর্থনীতিতে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলেছে দীর্ঘ প্রায় তিন বছরের কঠোর করোনা বিধিনিষেধ। এটি একদিকে যেমন শিল্পোৎপাদনের গতি কমিয়ে দিয়েছে, তেমনি অন্যদিকে হ্রাস করেছে সাধারণ ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতাও।
অর্থনীতিকে ফের গতিশীল করতে তাই এখন বিদেশি বিনিয়োগ ব্যাপকভাবে চাইছে চীন। এ কারণেই ভিসানীতিতে আনা হয়েছে এই পরিবর্তন।
এইচআর