ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় সোমবার সারা রাত ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। তারা জানিয়েছে, অবরুদ্ধ এলাকায় তারা এ যাবতকালের সবচেয়ে বড় হামলাটি চালিয়েছে। এদিকে ঘোষণা ছাড়াই ইসরাইলি হামলার বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে গাজার প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস। তারা বলেছে, হুঁশিয়ারি না দিয়ে আক্রমণ করা হলে প্রতিটি হামলার জন্য গাজায় বন্দী ইসরাইলিদের একজন করে হত্যা করা হবে।
ইসরাইল গাজা উপত্যকায় অবরোধ আরোপ করার পর কর্তৃপক্ষ বলছে, পণ্য সরবরাহের অনুমতি না দিলে গাজা উপত্যকা নতুন মানবিক সঙ্কটের দ্বারপ্রান্তে চলে যাবে।
বাসিন্দারা বলছেন যে শনিবার থেকে গাজা উপত্যকায় কোন ত্রাণ পৌঁছেনি, এবং সোমবার ইসরাইল এই অঞ্চলে `সম্পূর্ণ অবরোধ` ঘোষণা করেছে– তারা বলেছে যে বিদ্যুৎ, খাদ্য, জ্বালানি এবং পানি সরবরাহ বন্ধ রাখা হবে। গাজায় প্রায় ২৩ লাখ মানুষ বসবাস করে, যাদের ৮০ শতাংশ সাহায্যের উপর নির্ভর করে।
ইসরাইল, গাজার আকাশসীমা এবং এর উপকূল নিয়ন্ত্রণ করে, এবং কারা বা কী ধরণের পণ্য এর সীমানা অতিক্রম করতে পারবে তাও নিয়ন্ত্রণ করে। মিসরও গাজার সীমান্ত দিয়ে মানুষ বা যেকোনো পণ্যের প্রবেশ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করে। শনিবার সকালে হামলা শুরুর পর থেকে ইসরাইল গাজায় খাদ্য ও ওষুধসহ সব ধরনের সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে।
অনেকেই বর্তমানে বিদ্যুৎ এবং ইন্টারনেট সেবা ছাড়াই আছেন এবং এরমধ্যে হয়তো প্রয়োজনীয় খাদ্য ও পানি সরবরাহও বন্ধ হয়ে গেছে। কর্তৃপক্ষ সতর্ক করেছে যে ২৪ থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে গাজা উপত্যকার জ্বালানি শেষ হয়ে যাবে। জাতিসঙ্ঘ মানবিক সংস্থা ওসিএইচএ সতর্ক করে বলেছে যে, অবশিষ্ট জ্বালানি দিয়ে হাতে গোনা কয়েক দিন মাত্র চলা যাবে।
এমনকি সর্বশেষ নিষেধাজ্ঞার আগেও, গাজার বাসিন্দারা আগে থেকেই ব্যাপক খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা, চলাচলে বিধিনিষেধ এবং পানির সঙ্কটে ভুগছিল। সোমবার ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট বলেছেন যে তারা এই অঞ্চলে এখন `সম্পূর্ণ অবরোধ` আরোপ করবে।
তিনি বলেন, `না বিদ্যুৎ, না খাবার, না পানি, না গ্যাস- সব বন্ধ থাকবে,` তিনি বলেন, `আমরা পশুদের সাথে লড়াই করছি এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়েছি।` ইসরাইলি অবকাঠামোমন্ত্রী পরে গাজায় পানি সরবরাহ অবিলম্বে বন্ধ করার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন : `অতীতে যা ছিল তা ভবিষ্যতে আর থাকবে না।`
এই ঘোষণার আগে এক বিবৃতিতে, ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে, ইসরায়েলের পদক্ষেপের কারণে হাসপাতালগুলো ওষুধ, চিকিৎসা সরবরাহ এবং জ্বালানির ঘাটতির মুখে পড়েছে। শনিবার শুরু হওয়া গাজাভিত্তিক ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন এবং ইসরাইলের মধ্যকার যুদ্ধে এখন পর্যন্ত প্রায় ৯০০ ইসরাইলি নিহত হয়েছে।
আর ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে অন্তত ৭০৪ জন। এদের মধ্যে ৯১টি শিশু রয়েছে। এছাড়া ৩,৭২৬ জন আহত হয়েছে। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে। ইসরাইলি সূত্র জানিয়েছে, বিরিতে হামাস যোদ্ধাদের সাথে ইসরাইলি বাহিনীর যুদ্ধের পর শতাধিক লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ইসরাইলে নিহতদের মধ্যে বিদেশী নাগরিকও রয়েছে।
এদিকে শনিবার থেকে গাজা উপত্যকা এবং পশ্চিম তীরে ইসরাইলি হামলায় অন্তত ৭০৫ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ জানায়, গাজায় নিহত হয়েছে ৬৮৭ জন। এদের মধ্যে ১৪০ জন শিশু, ১০৫ জন নারী। এছাড়া আহত হয়েছে প্রায় ৩,৮০০ জন।
অন্যদিকে পশ্চিম তীরে নিহত হয়েছে ১৭ জন। এদের মধ্যে রামাল্লায় দুজন, জেরুসালেমে চারজন, জেরিকোতে দুজন, কালকিলিয়ায় একজন, হেবরনে ছয়জন, নাবলুসে দুজন রয়েছে। হামাস এবং গাজাভিত্তিক আরেক সংগঠন ইসলামিক জিহাদ প্রায় ১৩০ ব্যক্তিকে ইসরাইল থেকে ধরে আনার দাবি করেছে। তারা দাবি করছে, এরা পণবন্দী নয়, বরং যুদ্ধবন্দী। এদের মধ্যে সৈন্য, বেসমারিক নারী, পুরুষ ও প্রবীণ ব্যক্তি রয়েছে।
এদিকে ইসরাইল অব্যাহতভাবে গাজায় বোমা ও গোলাবর্ষণ করে যাচ্ছে। তারা ইতোমধ্যেই গাজাকে পুরোপুরি অবরুদ্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে। গাজায় কোনো ধরনের খাবার, বিদ্যুৎ, পানি সরবরাহ না করার কথা ঘোষণা দিয়েছে।
সূত্র : আল জাজিরা, বিবিসি এবং অন্যান্য
এইচআর