এবার গাজা উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চলের রাফা শহরে ইসরাইলের পরিকল্পিত হামলার বিরোধিতা করে আন্তর্জাতিক মহল থেকে কড়া সতর্কবার্তা দিয়েছে রিয়াদ।
গাজায় হামলার ফলে বাস্তুচ্যুত সব মানুষ এখন দক্ষিণের এই শহরে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। এ অবস্থায় ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন ও ডাচ পররাষ্ট্রমন্ত্রী হ্যাঙ্কি ব্রুইন্স স্লোট সতর্কতা দেখিয়ে বলেছেন, ওই এলাকায় গাজার প্রায় অর্ধেক মানুষ বসবাস করেন। সেখানে ইসরাইল অভিযান চালালে বিপুল পরিমাণ মানুষের প্রাণহানি হবে। রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, শনিবার সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এর প্রেক্ষিতে একটি বিবৃতি দিয়েছে। তাতে সতর্কতা দেওয়া হয়েছে। রাফায় হাজার হাজার মানুষ তাদের শেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে বেছে নিয়েছেন। সেই শহরকে টার্গেট করা হবে ইসরাইলি নৃশংসতা। মন্ত্রণালয় থেকে অবিলম্বে একটি যুদ্ধবিরতি আহ্বান করা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, সৌদি আরব রাফায় অভিযান চালানোর ভয়ংকর পরিণতির বিষয়ে তীব্রভাবে সতর্ক করছে এবং একইসঙ্গে তাদের জোরপূর্বক নির্বাসনের কঠোর নিন্দা জানাচ্ছে। আন্তর্জাতিক আইন এবং আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের অব্যাহত লংঘন ইসরায়েলকে একটি আসন্ন মানবিক বিপর্যয় ঘটাতে বাধা দেয়ার জন্যে জরুরিভাবে নিরাপত্তা পরিষদের আহ্বানের প্রয়োজনীয়তা নিশ্চিত করে।
এরই মধ্যে গাজা, পশ্চিমতীর মিলে কমপক্ষে ২৭ হাজার ৯০০ মানুষকে হত্যা করেছে। আহত হয়েছে কমপক্ষে ৬৭ হাজার সাধারণ মানুষ। এসব হামলায় অসংখ্য মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। তারা এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। আশ্রয় নিয়েছেন রাফা শহরে।
ইসরাইল হামাসের বিরুদ্ধে অভিযান আরো বৃদ্ধি করছে। রাফা থেকে বেসামরিক লোকজনকে সরিয়ে নেয়ার জন্য সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। সেই নির্দেশের পর সেনারা প্রস্তুত অভিযানের জন্য। এর প্রেক্ষিতেই আন্তর্জাতিক ওই সতর্কবার্তা এসেছে।
নেতানিয়াহুর অফিস থেকে বলা হয়েছে, হামাসকে নির্মূল না করলে ইসরাইলের লক্ষ্য অর্জন হবে না। রাফা এলাকায় হামাসের চারটি ব্যাটালিয়নকে রেখেও লক্ষ্য অর্জন হবে না। তাই রাফায় তীব্র অভিযান চালানোর জন্য ওই এলাকা থেকে সাধারণ মানুষদের সরিয়ে নেয়ার প্রয়োজন।
তবে হামাসের সর্বশেষ যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন নেতানিয়াহু।ইসরাইলকে সতর্ক করেছে যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, রাফায় আগ্রাসন চালানো হলে তা হবে বিপর্যয়কর। একই বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও জাতিসংঘ। দাতা সংস্থাগুলো বলেছে, মিশর সীমান্তের এই শহর থেকে প্রতিজন মানুষকে উদ্ধার করা অসম্ভব।
পরিস্থিতি মূল্যায়নের জন্য গাজায় অবস্থান করছেন জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক সমন্বয়কারী জেমি ম্যাকগোলড্রিক। তিনি বিবিসিকে বলেছেন, ইসরাইলি সেনারা অভিযান চালালে রাফায় অবস্থানকারীদের যাওয়ার কোনো জায়গা নেই। তিনি আরও বলেন, যেসব এলাকাকে নিরাপদ ঘোষণা করা হয়েছিল, তা আর নিরাপদ নেই। এখন যদি এসব মানুষকে সরে যেতে হয়, তাহলে তারা কোথায় যাবে? প্রশ্ন রাখেন তিনি। বলেন, আমরা শুধু একটি ভয়াবহ পরিস্থিতির আশঙ্কা করছি। এতে অবস্থা শুধু আরও ভয়াবহ হবে।
ওদিকে মিস ব্রইন্স স্লোট রাফা পরিস্থিতিকে অত্যন্ত উদ্বেগজনক বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, গাজার বেশির ভাগ সাধারণ মানুষ দক্ষিণে চলে গেছেন। এত ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় সামরিক অভিযান চালালে তাতে কত সাধারণ মানুষ হতাহত হবে এবং কি বড় আকারের মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হবে- যা অসলেই যৌক্তিক নয়।
বিআরইউ