পাকিস্তানের ফেডারেল রাজধানী ইসলামাবাদে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। সেইসঙ্গে দেখামাত্র গুলি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তা সূত্রের বরাত দিয়ে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম জিও নিউজের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সমর্থকেরা রাজধানীতে পৌঁছে বিক্ষোভ করতে পারে এই আশঙ্কায় দেশটির সরকার এই নির্দেশ দিয়েছে।
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল তেহরিক-ই-ইনসাফ পার্টির (পিটিআই) নেতাকর্মীদের ইসলামাবাদে পৌঁছানোর জন্য নির্ধারিত দিন ছিল গত ২৪ নভেম্বর। তবে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা গাড়িবহরের আকার এবং পথে ব্যাপক ব্যারিকেড থাকায় তারা নির্ধারিত সময়ে পৌঁছাতে পারেননি। তবে দলটি জানিয়েছে, তারা শান্তিপূর্ণভাবে যেকোনো মূল্যে ইসলামাবাদে তাদের সমাবেশের জন্য ঘোষিত স্থান ডি-চকে পৌঁছাতে চায়।
এই অবস্থা মোকাবিলায় পাকিস্তান সরকার দেশটির সংবিধানের ২৪৫ অনুচ্ছেদের আওতায় রাজধানীতে সেনাবাহিনী মোতায়েন করেছে। নিরাপত্তা বাহিনীর এক সূত্র জানিয়েছে, সেনাবাহিনীকে অনুচ্ছেদ ২৪৫-এর আওতায় মাঠে নামানো হয়েছে। পাশাপাশি পরিস্থিতি মোকাবিলায় কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যাতে অস্থিতিশীলতা এবং সশস্ত্র হামলাকারীদের শক্ত হাতে দমন করা হয়। এ ছাড়া, ‘দেখামাত্র গুলি’ করার নির্দেশও জারি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সূত্রটি।
বাড়তে থাকা নিরাপত্তা উদ্বেগের কারণে ইসলামাবাদে পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৪৫-এর অধীনে মোতায়েন করার ঘোষণা দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এক বিবৃতিতে কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তা বাহিনীকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার এবং দাঙ্গাবাজ ও দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে। এমনকি চরম পদক্ষেপ হিসেবে দাঙ্গাকারীদের দেখামাত্র গুলি করারও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার প্রয়োজনে পাকিস্তান সেনাবাহিনী যেকোনো এলাকায় কারফিউ জারি করতে পারে। এ ছাড়া, ইসলামাবাদজুড়ে নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে এবং কিছু সদস্য গুরুত্বপূর্ণ ভবনের ছাদে অবস্থান নিয়েছেন।
ইসলামাবাদের খুব কাছে ইমরান খানের ‘আপসহীন’ সমর্থকেরা, পরিস্থিতি থমথমেইসলামাবাদের খুব কাছে ইমরান খানের ‘আপসহীন’ সমর্থকেরা, পরিস্থিতি থমথমে
গত সপ্তাহে ইসলামাবাদ হাইকোর্টের এক রায়ে বলা হয়েছিল যে, পিটিআইয়ের পরিকল্পিত বিক্ষোভ অবৈধ এবং সরকারকে জনজীবন ব্যাহত না করে ইসলামাবাদে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছিল। অপর দিকে, গতকাল দিনভর পিটিআইয়ের গাড়িবহর চলমান থাকার মধ্যেই পাঞ্জাব সরকার ও পুলিশ জানিয়েছে, হাকলা ইন্টারচেঞ্জ বা মোড়ে বিশৃঙ্খলাকারীদের হাতে এক কনস্টেবল নিহত হয়েছেন।
পিটিআই নেতা শওকত ইউসুফজাই আটকের বুরহান ইন্টারচেঞ্জ থেকে ডনকে বলেছেন, গাড়িবহরগুলো ইসলামাবাদের উদ্দেশে রওনা হয়ে গেছে। তবে বহরের আকার ও সড়কে থাকা ব্যারিকেডের কারণে ধীরে ধীরে এগোতে হচ্ছে। তিনি দাবি করেছেন, ‘বিশাল মিছিল’ দেখে পুলিশ পিছু হটেছে। ইউসুফজাই আরও বলেছেন, খাইবার পাখতুনখাওয়ার মুখ্যমন্ত্রী গান্দাপুর শান্তিপূর্ণভাবে কিন্তু যেকোনো মূল্যে ডি-চকে পৌঁছাতে চান।
ইউসুফজাই বলেছেন, ‘নিরপরাধ রাজবন্দীদের- যার মধ্যে ইমরান খানও আছেন- মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত মিছিল বন্ধ হবে না।’ তিনি বলেন, ‘সরকার অদক্ষ এবং তাদের লক্ষ্য কেবল জনগণের ওপর লাঠিপেটা করা এবং রাস্তা অবরুদ্ধ করা। সরকারের একমাত্র লক্ষ্য পিটিআইকে দমন করা। তারা রাজনৈতিক লোক নয়। আমরা ধীরে ধীরে আমাদের গন্তব্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। আল্লাহর ইচ্ছায়, সত্যই বিজয় লাভ করবে।’
বিআরইউ