কেন দ্রুত ছড়াচ্ছে ক্যালিফোর্নিয়ার দাবানল

আন্তর্জাতিক ডেস্ক প্রকাশিত: জানুয়ারি ১১, ২০২৫, ০৭:৪৭ পিএম

যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য ক্যালিফোর্নিয়ায় লস অ্যাঞ্জেলেসের একাধিক অংশে ছড়িয়ে পড়া দাবানলে অন্তত ১০ জন নিহত এবং প্রায় ১০ হাজার বাড়িঘর ও অন্যান্য ভবন পুড়ে গেছে। মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া দাবানল প্রচণ্ড বাতাসের কারণে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় লস অ্যাঞ্জেলেস শহরের বিভিন্ন এলাকার প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

ক্যালিফোর্নিয়া ডিপার্টমেন্ট অব ফরেস্ট্রি অ্যান্ড ফায়ার প্রোটেকশন (ক্যাল ফায়ার) জানিয়েছে, মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১০টার দিকে লস অ্যাঞ্জেলেসের প্যাসিফিক প্যালিসেডস এলাকায় প্রথম অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। তদন্তকারীরা এখনও সাম্প্রতিক স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের সঠিক কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন।

ন্যাশনাল ফায়ার প্রটেকশন অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্রে দাবানলের সূত্রপাত হওয়ার ক্ষেত্রে বড় একটি কারণ হলো বজ্রপাত। তবে ক্যালিফোর্নিয়ার আগুনের ক্ষেত্রে তেমন কিছু হয়নি বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা।

ক্যালিফোর্নিয়ার দাবানলের শুরু হয়েছে লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টির পূর্ব দিক থেকে। সেখানকার প্যালিসেইডস এলাকা বা ইটনের দাবানলকবলিত এলাকার আশপাশে বজ্রপাত হয়েছে বলেও কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। ওই সব এলাকায় দাবানলে শত শত ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে। এরপর আরও দুটি সাধারণ কারণের প্রসঙ্গ চলে আসে। এর একটি হলো ইচ্ছাকৃতভাবে আগুন লাগিয়ে দেওয়া এবং বৈদ্যুতিক লাইনে স্ফুলিঙ্গ হওয়া।

ক্যালিফোর্নিয়ায় সাধারণত জুন ও জুলাই মাসে দাবানল দেখা দেয় এবং তা অক্টোবর পর্যন্ত চলতে পারে। তবে এ বছর জানুয়ারিতে আগুনের সূত্রপাত হয়। যা শীতের মাসগুলোর একটি।

দাবানলের স্থান দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় কয়েক মাস ধরে তেমন বৃষ্টিপাত হয়নি। ইউএস ড্রাট মনিটরের সর্বশেষ মানচিত্রে দেখা যায়, ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ক্যালিফোর্নিয়ার ৪০ দশমিক ৯ শতাংশ এলাকা খরামুক্ত। গত বছর এই সময়ে ২০২৪ সালের ২ জানুয়ারি পর্যন্ত ক্যালিফোর্নিয়ার ৯৬ দশমিক ৬৫ শতাংশ খরামুক্ত ছিল।

যুক্তরাষ্ট্রের এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন এজেন্সির (ইপিএ) এক প্রতিবেদনে বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পারিপার্শ্বিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে। সান্তা আনা (শক্তিশালী, অত্যন্ত শুষ্ক ঢালু বাতাস) বাতাসের সহায়তায় এ অঞ্চলে শুষ্ক এবং গরম বাতাস হয়তো এমন ভয়াবহ দাবানল।

শুষ্ক মরুভূমির বাতাস এই অঞ্চলের অভ্যন্তর থেকে উপকূল এবং অফশোরের দিকে চলে যায়। এটি দাবানলের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলে। কারণ এটি শুষ্ক প্রকৃতির কারণে পরিবেশে আর্দ্রতা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করে। এর ফলে গাছপালা খুব পানিশূন্য হয়ে পড়ে এবং আগুনের জন্য সংবেদনশীল হয়। এমন পরিস্থিতিতে যেকোনো স্ফুলিঙ্গ আগুনের সূত্রপাত করতে পারে। যেমন- সিগারেট, যানবাহন বা বিদ্যুতের লাইন।

অ্যাকুওয়েদারের আবহাওয়াবিদ ড্যানিয়েল এহরেসম্যান জানান, মঙ্গলবার রাতে উচ্চতায় ঘণ্টায় ১০০ মাইল (১৬০ কিলোমিটার) বেগে দমকা হাওয়া রেকর্ড করা হয়েছে। অ্যাঞ্জেলেসে শুকনো গাছপালা, ঝুলন্ত বিদ্যুতের তারের মতো জ্বলনযোগ্য পদার্থ রয়েছে।

লস অ্যাঞ্জেলেসের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জলবায়ু বিজ্ঞানী ড্যানিয়েল সোয়াইন বলেন, আগের মৌসুমের মতো ভেজা মৌসুমের পর আমরা সত্যিই এবারের মতো শুষ্ক মৌসুম দেখিনি।

অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির স্কুল অব লাইফ সায়েন্সেসের এমেরিটাস অধ্যাপক স্টিফেন পাইন বলেন, ব্যাপক বাতাসই দাবানলের মূল চালিকাশক্তি। এগুলো প্রায় ‘হারিকেন’ শক্তির বাতাস। অগ্নিশিখা থামাতে সক্ষম পৃথিবীতে এমন কোনো আগ্নেয়াস্ত্র নেই। আগ্নিকাণ্ডের খবর পাওয়ার পর দমকল কর্মীরা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। যতক্ষণ আগুন না আগুন নির্বাপন হয়।

ক্যালিফোর্নিয়ায় দাবানল খুব কম অংশই নিয়ন্ত্রণে এসেছে। প্যালিসেডস, ইটন এবং সানসেটে আগুন এখনও নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। হার্স্টে ১০ শতাংশ এবং লিডিয়া আগুন  ১০ শতাংশ নিয়ন্ত্রিত। উডলি, অলিভাস ও টাইলারের দাবানল শতভাগ নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে জানিয়েছে ক্যাল ফায়ার।

ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসম বুধবার রাতে এক পোস্টে বলেন, সাড়ে সাত হাজার দমকল কর্মী ঘটনাস্থলে রয়েছেন।

হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, ক্যালিফোর্নিয়ায় দাবানল ছড়িয়ে পড়ার ঘটনায় পুরোপুরি ফেডারেল প্রতিক্রিয়া জানানোর জন্য ইতালি সফর বাতিল করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

বাইডেন তার এক্স হ্যান্ডেলে বলেন, পাঁচটি এয়ার ট্যাঙ্কার এবং ১০টি অগ্নিনির্বাপক হেলিকপ্টার সরবরাহ করেছে। তবে প্রবল বাতাসের কারণে আকাশপথে উদ্ধার তৎপরতা ব্যাহত হচ্ছে।

লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টির দমকল বাহিনীর প্রধান অ্যান্থনি ম্যারোন এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, নেভাদাসহ আরও ছয়টি অঙ্গরাজ্য থেকে দমকল কর্মীদের ক্যালিফোর্নিয়ায় পাঠানো হয়েছে।

লস অ্যাঞ্জেলেসের পানি ও বিদ্যুৎ বিভাগের প্রধান নির্বাহী জ্যানিস কুইনোনস এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, প্যাসিফিক প্যালিসেডস তিনটি ট্যাংকের ওপর নির্ভর করে, যার প্রতিটিতে প্রায় ১০ লাখ গ্যালন (৩৭ লাখ ৮০ হাজার লিটার) পানি রয়েছে। কুইনোনস যোগ করেছেন যে কম উচ্চতায় আগুন নেভানোর জন্য জলের চাহিদা উচ্চতর উচ্চতায় জলের ট্যাঙ্কগুলো পুনরায় পূরণ করতে অসুবিধা তৈরি করছে।

আরএস