গাজায় বসবাসকারী ফিলিস্তিনিদের অন্য দেশে স্থায়ীভাবে সরিয়ে দিয়ে পুরো উপত্যকা যুক্তরাষ্ট্রের দখলে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) হোয়াইট হাউজে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে সঙ্গে নিয়ে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই ঘোষণা দেন। তার এই প্রস্তাব সামনে আসতেই বিশ্বজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। ট্রাম্পের পরিকল্পনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে সৌদি আরব, চীন, রাশিয়া, তুরস্কসহ বিভিন্ন দেশ ও সংগঠন।
সৌদি আরব
সৌদি আরব ট্রাম্পের পরিকল্পনাকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে এবং ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত করার যে কোনো উদ্যোগের বিরোধিতা করেছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে স্পষ্ট জানিয়েছে, ফিলিস্তিন ইস্যুতে রিয়াদের অবস্থান ‘অপরিবর্তনীয়’ এবং ‘আলোচনার অযোগ্য’। সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানও এই বিষয়ে সুস্পষ্ট বক্তব্য দিয়েছেন যে, পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আগ পর্যন্ত ইসরায়েলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক স্থাপন করবে না সৌদি আরব।
ফিলিস্তিন
ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ গোষ্ঠী হামাস ট্রাম্পের পরিকল্পনাকে ‘বর্ণবাদী’ বলে আখ্যা দিয়েছে এবং একে ফিলিস্তিনি ইস্যুকে ধ্বংস করার প্রচেষ্টা বলে অভিযোগ করেছে। হামাসের মুখপাত্র আবদেল লতিফ আল-কানু এক বিবৃতিতে বলেন, এই মার্কিন বর্ণবাদী অবস্থান ইসরায়েলের চরম ডানপন্থিদের ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত করার পরিকল্পনার সঙ্গে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ।
প্যালেস্টাইন লিবারেশন অরগানাইজেশন (পিএলও) জানিয়েছে, ফিলিস্তিনিদের বিতাড়িত করার যে কোনো পরিকল্পনাকে তারা প্রত্যাখ্যান করছে। সংগঠনটির মহাসচিব হুসেইন আল-শেইখ বলেন, আমরা আবারও ঘোষণা করছি, ফিলিস্তিনি জনগণকে তাদের মাতৃভূমি থেকে সরিয়ে দেওয়ার সব পরিকল্পনার বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান অনড়।
যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী ফিলিস্তিনি
মার্কিন কংগ্রেসের একমাত্র ফিলিস্তিনি-মার্কিন সদস্য রাশিদা তালিব ট্রাম্পের এই পরিকল্পনাকে ‘জাতিগত নির্মূলের খোলাখুলি আহ্বান’ বলে অভিহিত করেছেন। এক্স-এ (সাবেক টুইটার) দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, ‘ফিলিস্তিনিরা কোথাও যাবে না।
যুক্তরাজ্য
যুক্তরাজ্যের পরিবেশমন্ত্রী স্টিভ রিড ট্রাম্পের পরিকল্পনার বিষয়ে কোনো সরাসরি মন্তব্য না করলেও গাজার সাধারণ ফিলিস্তিনিদের নিজেদের ঘরে ফেরার অধিকার নিয়ে কথা বলেছেন। রিড বলেছেন, যুক্তরাজ্য সরকার চায়, ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের অবশ্যই তাদের বাড়িতে ফিরে যেতে এবং তাদের জীবন পুনর্গঠন করতে দিতে হবে।
চীন
চীন গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক স্থানান্তরের বিরোধিতা করেছে এবং দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানকে সমর্থনের আহ্বান জানিয়েছে। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেছেন, গাজা সংকটের পরবর্তী পর্যায়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার সুযোগ কাজে লাগিয়ে দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের পথে ফিরে আসা উচিত।
রাশিয়া
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানিয়েছেন, রাশিয়া দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তি কেবল দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের মাধ্যমেই সম্ভব। তিনি বলেন, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের রেজুলেশনে যে দৃষ্টিভঙ্গি অনুমোদিত হয়েছে, সেটিই একমাত্র বাস্তবসম্মত সমাধান।
তুরস্ক
ট্রাম্পের পরিকল্পনাকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে অভিহিত করেছে তুরস্ক। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান বলেন, গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে নেওয়ার যে কোনো পরিকল্পনা অসম্ভব এবং এটি আরও সংঘাতের জন্ম দেবে।
স্পেন
স্প্যানিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসে ম্যানুয়েল আলবারেস ট্রাম্পের পরিকল্পনার কঠোর বিরোধিতা করে বলেছেন, গাজা গাজার জনগণের ভূমি এবং তারা সেখানেই থাকবে।
ফ্রান্স
ফ্রান্স বলেছে, ট্রাম্পের পরিকল্পনা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন এবং মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতাকে বিপন্ন করতে পারে। ফরাসি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ক্রিস্টোফ লেমোইন বলেন, গাজার জনগণকে জোর করে স্থানান্তর করা হলে তা আন্তর্জাতিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন হবে এবং এটি দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের পথকে বাধাগ্রস্ত করবে।
আয়ারল্যান্ড
আয়ারল্যান্ডের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইমন হ্যারিস ট্রাম্পের পরিকল্পনাকে ‘উদ্বেগজনক’ বলে আখ্যা দিয়েছেন এবং যুদ্ধবিরতি বজায় রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।
স্কটল্যান্ড
স্কটিশ ফার্স্ট মিনিস্টার জন সুইনি বলেছেন, গাজায় জাতিগত নির্মূলের কোনো সুযোগ নেই। ফিলিস্তিনিরা তাদের ভূমিতে থাকার অধিকার রাখে। -সূত্র: দ্য টাইমস
আরএস