বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেন নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেন

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: মার্চ ২, ২০২৫, ১১:৫৭ পিএম

ভারতের নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বাংলাদেশ নিয়ে তার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি তাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে এবং দেশটি ভবিষ্যতে কীভাবে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করবে, তা নিয়ে তিনি চিন্তিত।

পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে নিজের বাড়িতে বার্তা সংস্থা পিটিআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।

বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যক্তিগত সংযোগ

অমর্ত্য সেন উল্লেখ করেন, তার শৈশবের অনেকটা সময় কেটেছে ঢাকায়। সেন্ট গ্রেগরি স্কুলে তিনি আনুষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু করেন এবং পরবর্তীতে শান্তিনিকেতনে পড়াশোনা চালিয়ে যান। বাংলাদেশের সঙ্গে তার পারিবারিক শেকড়ও গভীর। তিনি বলেন, “ঢাকা ছাড়াও আমার পূর্বপুরুষের ভিটা মানিকগঞ্জে আমি প্রায়ই যেতাম। মায়ের দিক দিয়ে আমি বিক্রমপুরের সোনারঙেও গিয়েছি। এ জায়গাগুলো আমার কাছে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।”

বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি

অমর্ত্য সেন বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবেশ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে আমি চিন্তিত, তবে আশাহীন নই। এখানে পরিবর্তনের সুযোগ আছে, এবং আমি চাই দেশের বহুত্ববাদ ও স্বাধীনতার ধারা বজায় থাকুক।”

তিনি উল্লেখ করেন, গত বছরের গণঅভ্যুত্থানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নেন এবং দীর্ঘ ১৬ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা নিয়ে আলোচনা থাকলেও তিনি মনে করেন, কোনো দলকে নিষিদ্ধ করা উচিত নয়। তিনি বলেন, “বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে দলগুলোকে একসঙ্গে কাজ করার সুযোগ থাকতে হবে। আমি আশা করি, ভবিষ্যতের নির্বাচনগুলো সত্যিকার অর্থে নিরপেক্ষ হবে।”

ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্পর্কে মতামত

বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্পর্কে তিনি বলেন, “ড. ইউনূস আমার দীর্ঘদিনের বন্ধু। তার অসাধারণ নেতৃত্ব দেওয়ার সক্ষমতা রয়েছে এবং তিনি বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষতা ও গণতন্ত্র নিয়ে শক্তিশালী বার্তা দিয়েছেন।”

তিনি আরও বলেন, “যখন কেউ হঠাৎ করে দেশের প্রধান হয়ে যান, তখন বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়। ড. ইউনূসও এমন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন, তবে আমি বিশ্বাস করি তিনি সেগুলো সফলভাবে মোকাবিলা করতে পারবেন।”

বাংলাদেশের সেনাবাহিনী ও সংখ্যালঘুদের অবস্থা

বাংলাদেশের সেনাবাহিনী নিয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করে অমর্ত্য সেন বলেন, “অনেক দেশে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করে, কিন্তু বাংলাদেশে তা হয়নি, যা প্রশংসনীয়।”

সংখ্যালঘুদের বিষয়ে তিনি বলেন, “বাংলাদেশ সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রে সচেতন, এবং জামায়াতের মতো দলগুলোকে নজরদারিতে রাখার নজির রয়েছে। তবে ভারতের সংবাদমাধ্যমগুলো অনেক সময় সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে অতিরঞ্জিত প্রচারণা চালায়।”

তিনি বলেন, “ভারতেও মসজিদে হামলার ঘটনা ঘটে, যা উদ্বেগজনক। বাংলাদেশ ও ভারত— উভয় দেশেই এমন ঘটনার অবসান হওয়া উচিত।”

অমর্ত্য সেন মনে করেন, বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে রয়েছে। দেশের ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, ধর্মনিরপেক্ষতা ও গণতন্ত্রের ধারা বজায় রাখা জরুরি। তিনি বলেন, “আমি বাংলাদেশ নিয়ে চিন্তিত, তবে আশাবাদী। দেশটি এগিয়ে যেতে পারে, যদি সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ করা হয়।”

ইএইচ