জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় ১০ বছরের কারাদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে হাজী সেলিমের করা লিভ টু আপিল আগামী ২৩ অক্টোবর শুনানির জন্য নির্ধারণ করে তার জামিন আবেদনটি নথিভুক্ত করেছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত।
সোমবার (১ আগস্ট) প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
হাজি সেলিমের জামিন আবেদন পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ সাঈদ আহমেদ রাজা। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান।
দুদকের এই আইনজীবী পরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘হাজি সেলিমের জামিন আবেদনের ওপর আদালত শুনানি নিলেও কোনো আদেশ দেননি। জামিন আবেদনটি নথিভুক্ত করে রেখেছেন। আর আগামী ২৩ অক্টোবর দণ্ড বাতিল চেয়ে হাজি সেলিমের করা লিভ টু আপিলের শুনানির তারিখ রেখেছেন। ’
উচ্চ আদালতের নির্দেশে গত ২২ মে ঢাকার ৭ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করে হাজি সেলিম জামিন আবেদন করেন। বিচারক শহীদুল ইসলাম তা নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
পরে তাকে কেরানীগঞ্জ কারাগারে পাঠানো হয়। পরদিন স্বাস্থ্যগত কারণ দেখিয়ে তাকে কারা তত্ত্বাবধানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
পরে গত ২৪ মে অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় ১০ বছরের সাজার বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি (লিভ টু আপিল) চেয়ে আবেদন করেন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হাজি সেলিম।
তার সঙ্গে জামিন চেয়েও আবেদন করেন তিনি। সে আবেদনের শুনানির পর তা আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে আদেশ দেন চেম্বার আদালত। তারই ধারাবাহিকতায় আজ আবেদনটি শুনানির জন্য ওঠে।
সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে জরুরি অবস্থার মধ্যে ২০০৭ সালের ২৪ অক্টোবর হাজি সেলিমের বিরুদ্ধে লালবাগ থানায় অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করে দুদক।
২০০৮ সালের ২৭ এপ্রিল বিশেষ আদালতের রায়ে তাকে মোট ১৩ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। আর জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনে ‘সহযোগিতার’ দায়ে হাজি সেলিমের স্ত্রী গুলশান আরা বেগমকে দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় দেওয়া হয় তিন বছরের কারাদণ্ড।
এ রায়ের বিরেুদ্ধে ২০০৯ সালের ২৫ অক্টোবর হাজি সেলিম ও তার স্ত্রী গুলশান আরা বেগম হাইকোর্টে আপিল করেন। ২০১১ সালের ২ জানুয়ারি হাইকোর্ট ১৩ বছরের সাজা বাতিল করে রায় দেন।
হাইকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করে দুদক। ওই আপিলের শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ১২ জানুয়ারি হাইকোর্টের রায় বাতিল হয়ে যায়। সেই সঙ্গে হাজি সেলিমের আপিল পুনরায় হাইকোর্টে শুনানির নির্দেশ দেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত।
সে নির্দেশনার আলোকে ২০২০ সালের ৯ নভেম্বর দুদক হাজি সেলিমের আপিল দ্রুত শুনানির জন্য আবেদন করে। সে আবেদনের শুনানি করে হাইকোর্ট ১১ নভেম্বর এ মামলার বিচারিক আদালতের নথি তলব করেন। নথি আসার পর আপিলের শুনানি করে গত বছর ৯ মার্চ ফের রায় ঘোষণা করেন উচ্চ আদালত।
রায়ে হাজি মোহাম্মদ সেলিমের আপিল সংশোধন করে (আংশিক গ্রহণ ও আংশিক খারিজ) দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ২৬(২) ধারা সংক্রান্ত আপিল গ্রহণ অর্থাৎ তাকে খালাস দেওয়া হয়। আর একই আইনের ২৭(১)-এ আপিলের অংশ খারিজ করে ১০ বছরের কারাদণ্ড বহাল রাখেন।
আমারসংবাদ/টিএইচ