রাজধানীর শাহজাহানপুরে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু ও কলেজছাত্রী সামিয়া আফরান প্রীতিকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় করা মামলায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আশরাফ তালুকদারসহ ৩৩ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। তদন্তে ৩৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। তবে এক্সেল সোহেল নামে এক আসামির পূর্ণাঙ্গ নাম ঠিকানা না পাওয়ায় তাকে অব্যাহতির আবেদন করা হয়েছে। এক্ষেত্রে বিচারের জন্য ৩৩ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। চার্জশিটে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও জাতীয় পার্টির একাধিক পদধারী নেতা আসামির তালিকায় রয়েছেন। সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরও আছেন আসামির তালিকায়।
সোমবার (৫ জুন) মতিঝিল থানার আদালতের সাধারণ নিবন্ধন শাখায় এ চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ইয়াসিন শিকদার। আগামী ১৫ জুন মামলাটির দিন ধার্য রয়েছে।
চার্জশিটভুক্ত উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন- ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা মারুফ আহমেদ মনসুর, বিদেশে পলাতক আন্ডারওয়ার্ল্ডের দুই সন্ত্রাসী জিসান ও ফ্রিডম মানিক, মতিঝিল থানা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক খায়রুল ইসলাম, মতিঝিল থানা জাতীয় পার্টির নেতা জুবের আলম খান রবিন, হাবীবুল্লাহ বাহার কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক আহŸায়ক সোহেল শাহরিয়ার, ১০ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি মারুফ রেজা সাগর, ১১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সভাপতি কামরুজ্জামান বাবুল, ১০ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাবেক সদস্য কাইল্যা পলাশ, একই ওয়ার্ড যুবলীগের সাবেক নেতা আমিনুল, ছাত্রলীগের সাবেক আহŸায়ক ‘ঘাতক’ সোহেল, সুমন শিকদার মুসা, মুসার ভাগনে সৈকত, মুসার ভাতিজা শিকদার আকাশ, ইমরান হোসেন জিতু, মোল্লা শামীম, রাকিব, বিডি বাবু, ওমর ফারুক, ‘কিলার’ নাসির, রিফাত, ইশতিয়াক হোসেন জিতু, মাহবুবুর রহমান টিটু, হাফিজ, মাসুম ও রানা মোল্লা। এদের মধ্যে ২৪ জনই গ্রেপ্তার হয়েছেন। এ হত্যা মামলায় সুমন শিকদার, মুসা, শুটার আকাশ ও নাসির উদ্দিন মানিক সেচ্চায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
মামলার সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালের ২৪ মার্চ দিবাগত রাত সোয়া ১০টার দিকে শাহজাহানপুরে ইসলামী ব্যাংকের পাশে বাটার শো-রুমের সামনে টিপুকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এসময় গাড়ির পাশে রিকশায় থাকা সামিয়া আফরান প্রীতি (১৯) নামের এক কলেজছাত্রী গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। এছাড়া গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন টিপুর গাড়িচালক মুন্না।
ঠিক এক বছর আগে চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকান্ডের পর ওইদিন রাতেই শাহজাহানপুর থানায় নিহত টিপুর স্ত্রী ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর ফারহানা ইসলাম ডলি বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেন। এতে অজ্ঞাতদের আসামি করা হয়।
মামলার এজাহারে টিপুর স্ত্রী অভিযোগ করেন, ২০২২ সালের ২৪ মার্চ রাত সোয়া ১০টার দিকে শাহজাহানপুর থানার ২০২ উত্তর শাহজাহানপুর মানামা ভবনের বাটার শো-রুমের সামনে পৌঁছালে অজ্ঞাতপরিচয় দুর্বৃত্তরা হামলা করে। তারা টিপুকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার উদ্দেশে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি করেন।
মামলার পর হত্যার সন্দেহভাজন মূল পরিকল্পনাকারী ও নির্দেশদাতা সুমন শিকদার ওরফে মুসাসহ ২৪ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তখন আসামি সুমন শিকদারসহ তিনজন হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন। আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের এক বছর দুই মাস ১১ দিন পর দাখিল করা হলো চার্জশিট।
আরএস