পাবনা জেলা মহিলা লীগ নেত্রী

দলের নাম ভাঙ্গিয়ে অর্থ আত্মসাৎ

আবু ছালেহ আতিফ প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২৪, ০৮:৪২ পিএম

পাবনা জেলা যুব মহিলা লীগের সদস্য মীম খাতুন ওরফে আফসানা মীম। অন্য এক সাবেক যুবলীগ নেতার কাছ থেকে ব্যবসার কথা বলে বিভিন্ন সময়ে ১৩ লাখ ১৭ টাকা আত্মসাৎ করেন। ভুক্তভোগী বাদী মনিরুজ্জামান বাবুও পাবনার আটঘড়িয়া উপজেলার একজন সাবেক যুবলীগ নেতা। 

গতবছরের নভেম্বর মাস থেকে শুরু করে, পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে সম্পূর্ণ টাকা নেন এ যুবলীগ নেত্রী আফসানা মীম ও তার স্বামী ওবায়দুল্লাহ। একপর্যায়ে,টাকা পাওয়ার পরে যখন বাদীদ্বয় তালবাহানা করতে থাকে তখন,টাকা ফেরত চান বাদী । পরবর্তীতে টাকা ফেরত চাওয়ায় বাদীকে দেওয়া হয় বিভিন্নভাবে প্রাণ নাশ সহ ভয়-ভীতি ও হুমকি। পরে বাদী উপায় না পেয়ে গুলশান থানায় এসে অর্থ আত্মসাৎকারী দম্পতির বিরুদ্ধে এজাহার দায়ের করেন। 

এ ব্যাপারে মনিরুজ্জামান বাবু আমার সংবাদ প্রতিবেদককে বলেন, আমি বিশ্বাস করে কোনো দলিল ছাড়াই তাদেরকে সম্পূর্ণ টাকাটা দেই। পরবর্তীতে যখন দলিল করতে বলি,তখনই তারা তালবাহানা শুরু করে এবং আমাকে হুমকি দেয়। বিবাদী যুব এ মহিলা লীগের টাকা আত্মসাতের সাহস সম্পর্কে বাদী যুবলীগ নেতা বলেছেন,দলকে ব্যবহার করছেন তিনি। মনিরুজ্জামান বাবু বলেন,সে (আফসানা মীম)দলকে বিক্রি করে,দলের এবং প্রশাসনের বিভিন্ন নাম বলে।এবং এটা পাবনার অনেকেই জানে। এবং এর (মীমের) কাজই যার কাছ থেকে যেভাবে পারে প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নেয়া। এবং এরা যে দল বিক্রি করে এটা আমি শতভাগ নিশ্চিত। তাই এদের বিচার হওয়া  উচিত।

প্রসঙ্গত ,প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে পাবনা জেলা যুব মহিলা লীগের সদস্য মিম খাতুন ওরফে আফসানা মিম ও তার স্বামী ওবায়দুল্লাহকে একদিনের রিমান্ডে নেয়ার আদেশ দিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিনা হকের আদালতে আসামিদের উপস্থিত করে পাঁচদিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার উপ-পরিদর্শক মো. রোমেন মিয়া। শুনানি শেষে আদালত আসামিদের একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।  

মামলার সূত্রে জানা গেছে, ওবায়দুল্লাহ নামে এক ব্যক্তিকে দুলাভাই হিসেবে মামলার বাদী মনিরুজ্জামানের সঙ্গে পরিচয় করে দেন আসামি মিম। পরে বিভিন্ন সময়ে ব্যবসার কথা বলে ১৩ লাখ ১৭ হাজার টাকা নেন মিম ও ওবায়দুল্লাহ। বিশ্বাস করে দলিল ছাড়া লেনদেন হলেও পরে দলিল করতে চাইলে তারা টালবাহানা শুরু করেন। পাওনা টাকা ফেরত দেবেন না বলে হুঁশিয়ারি দেন এবং তাকে বিভিন্ন রকমের ভয়ভীতি ও হুমকি দেখান। এ ঘটনায় আটঘড়িয়া উপজেলার যুবলীগ নেতা ও ব্যবসায়ী মনিরুজ্জামান বাবু বাদী হয়ে রাজধানীর গুলশান থানায় মামলা দায়ের করেন। এ মামলার পর তাদেরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

গুলশান থানায় করা মামলার এজাহার থেকে আরও জানা যায় বাদী মো. মনিরুজ্জামান বাবু  গুলশান, ঢাকা থানায় হাজির হয়ে বিবাদী ১। মোসা. মীম খাতুন (২৬), ও স্বামী- মো. ওবাইদুল্লাহ, ২।  সহ আরো কয়েকজন বিবাদির বিরুদ্ধে এজাহার দায়ের করেন। যেখানে তিনি বলেন,সে একজন ঠিকাদার ব্যবসায়ী   আসামি মীম খাতুন বাদীর পূর্ব পরিচিত এবং একই জেলায় বাড়ি হওয়ায় তার সাথে যোগাযোগ ছিল। এক পর্যায়ে মীম তার স্বামীর সাথে বাদীকে পরিচয় করিয়ে দেয় । এবং তার সাথে ব্যবসা করার প্রস্তাব দেয়। যার প্রেক্ষিতে গত  ২০২৩ সালের নভেম্বরের ২২ তারিখ তারিখ বিকালে গুলশান থানাধীন এবিএস নামক বাদীর  ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে আসে। সেখানে বসে বিবাদীদ্বয় বাদীকে জানায় পাবনা শহরে অবস্থিত রবিউল মার্কেটে শো-রুম ও দোকান ভাড়া নিয়ে কাপড়ের ব্যবসা করবে এ জন্য তার নিকট  (পনেরো লক্ষ) টাকা চায়। এবং উক্ত ব্যবসার পাটনার হিসাবে তাকে রাখবে বলে জানায়। এরপর বাদী মনিরুজ্জামান বাবু বিশ্বাস করে তাদের প্রস্তাবে রাজি হয়। এবং ঐদিনই তাদেরকে নগদ(এক লক্ষ) টাকা প্রদান করে।

পরবর্তীতে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসের ২০ তারিখ বাদীর ডাচ-বাংলা ব্যাংক গুলশান শাখা হতে মীম আক্তারের ব্রাক ব্যাংক পাবনা সদর শাখায় (এক লক্ষ) টাকা এবং পরবর্তীতে ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন সময়ে(পঞ্চাশ হাজার) টাকা,(তিন লক্ষ) টাকা ব্যাংক ট্রান্সফার করে। পরবর্তীতে তারা যখন বাদীর কাছে  আরো টাকা চায় তখন বাদী তার ডাচ-বাংলা ব্যাংক গুলশান শাখা হতে ১নং বিবাদির দেওয়া হিসাব নম্বর অনুযায়ী সিটি ব্যাংক লি. পাবনা সদর শাখায়  আবার(পঞ্চাশ হাজার) টাকা, পরে আবার ভিন্ন তারিখে(এক লক্ষ) টাকা, (এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার) টাকা, (এক লক্ষ) টাকা, (এক লক্ষ) টাকা, (এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার) টাকা ব্যাংক ট্রান্সফার করে। এছাড়াও ১নং আসামির বিকাশ অ্যাকাউন্ট  এর মাধ্যমে  বাদীর কাছ থেকে  বিভিন্ন সময়ে মোট (তেরো লক্ষ সতেরো হাজার পাঁচশত নব্বই) টাকা নেয়।

কিন্তু  টাকা পাওয়ার পর তাদের সাথে ব্যবসার বিষয়ে যোগাযোগ করলে বিবাদিদ্বয় বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কথা- বার্তা বলে। ব্যবসা করছে কি না জানতে চাইলে তারা তালবাহনা করতে থাকে। একপর্যায়ে সে স্বামী ও স্ত্রীর প্রতারণার বিষয় বুঝতে পারে। পরবর্তীতে প্রদানকৃত টাকা তাদের নিকট চাইলে তারা টাকা ফেরত দিবে না এবং বাদীকে ব্যবসার পার্টনার হিসাবে রাখে নাই বলে জানায়।  পরবর্তীতে টাকা চাইলে প্রাণ নাশ সহ বিভিন্ন প্রকার ভয়-ভীতি প্রদান করে। এরপরে ঘটনার বিষয় তিরি তার আত্মীয় স্বজনদের সাথে আলোচনা করে থানায় এসে এজাহার দায়ের করে।

আরএস