বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দণ্ড স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধি ও বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার আবেদনের বিষয়ে আগামীকাল মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক।
সোমবার (১৮ মার্চ) সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ কথা জানান।
খালেদা জিয়ার স্থায়ী মুক্তি ও বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার জন্য পরিবারের আবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘প্রথম কথা হচ্ছে এই চিঠিতেও তারা আগের মতোই স্থায়ী মুক্তি চাচ্ছেন। আমি বুঝলাম না স্থায়ী মুক্তি মানে কী? এবং বিদেশ যাওয়ার জন্য অনুমতি চাচ্ছেন। আমরা কাছে আজকে আমার সচিব সাহেব ফাইলটা দিয়েছেন। ওনারা (খালেদার পরিবার) কী আবেদন করেছেন, সেটা দেখে ভালো করে বিবেচনা করে আমি অতিসত্ত্বর নিষ্পত্তি করবো। আগামীকাল (মঙ্গলবার) নাগাদ হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।’
তিনি বলেন, ‘ফাইলটা আজকেই পেয়েছি। আমাকে বিবেচনা করতে হবে, পড়তে হবে, আমাকে দেখতে হবে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘একটা জিনিস আমি বুঝতে পারছি না। আমি বহুবার আইনের ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছি, যে শর্তে তাকে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে আইনিভাবে আমাদের কিছু করার নেই। কিন্তু এরপরও প্রত্যেকবার দেখছি, প্রথম যেভাবে চিঠি দেওয়া হয়েছিল সেই আকারেই তারা আবেদন করছেন।’
‘আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আমার সচিব সাহেব পেয়েছেন। সেটি আজকে আমাকে হস্তান্তর করা হয়েছে।’
চিঠি যেহেতু একই মতামতও কি একই হবে- জানতে চাইলে বলেন, ‘আপনারা কালকে জানতে পারবেন।’
আনিসুল হক বলেন, ‘আমরা আগের আইনি ব্যাখ্যায় যেটা স্পষ্টভাবে দাঁড়ায় তা হলো- বিদেশে যাওয়ার ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হবে না। তার মানে তিনি বিদেশি যেতে পারবেন না। বিদেশ থেকে ডাক্তার এনে তাকে চিকিৎসার করার অনুমতিও আমরা দিয়েছিলাম। ডাক্তার তাকে চিকিৎসা করেছেন তাকে সুস্থও করেছেন।’
সরকার প্রধান চাইলে খালেদা জিয়া বিদেশে যেতে পারবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে আনিসুল হক বলেন, ‘৪০১ ধারায় সরকার প্রধান মানে প্রধানমন্ত্রী। প্রথমবার তিনি যখন নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন, এখন সেটি পরিবর্তন করার আইনি বিধান নেই। এটির পুনঃনিষ্পত্তি করার কোন অবকাশ নেই।’
‘আইনের বাইরে গিয়ে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) মানবিকতা দেখাতে পারবেন না। প্রধানমন্ত্রী মানবিকতা প্রথমবারই দেখিয়েছেন। এই যে বার বার রিনিউ হচ্ছে, সেটাও মানবিক কারণ থেকেই হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মেয়াদ বাড়ানোর আইনি সুযোগ আছে। অন্য কিছু করার আইনি সুযোগ নেই।’
‘খালেদা জিয়া কিন্তু দুটি শর্তে (বিদেশে যেতে পারবে না ও ঢাকায় থেকে চিকিৎসা) মুক্ত। চলাফেরায় তার কিন্তু কোন অনুমতি নিতে হয় না। তাই তাকে আবার মুক্তির কথা বলাটা মনে হয় অপ্রাসঙ্গিক’ বলেন আইনমন্ত্রী।
গত ৬ মার্চ খালেদা জিয়ার মুক্তির মেয়াদ বাড়াতে তার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার ৬ মার্চ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। আবেদনে তাকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চাওয়া হয়েছে। পরে সেই আবেদনের বিষয়ে মতামত নিতে সেটি আইন মন্ত্রণালয় পাঠানো হয়।
সর্বশেষ গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে খালেদা জিয়ার দণ্ড স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ ছয় মাস বাড়ানো হয়েছিল। সেই মেয়াদ আগামী ২৫ মার্চ শেষ হবে।
খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার, ফুসফুস, চোখের সমস্যাসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন। অসুস্থতা বাড়লে মাঝে মাঝে তাকে হাপাতালে নিতে হচ্ছে।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে স্বাস্থ্যের কিছু পরীক্ষা শেষে গত ১৪ মার্চ গুলশানের বাসায় ফিরেন খালেদা জিয়া। এর আগে ১৩ মার্চ রাতে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।
দুটি মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া কারাবন্দি ছিলেন। নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়ার দণ্ড স্থগিত রয়েছে। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন বকশীবাজার আলিয়া মাদরাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ আদালত। রায় ঘোষণার পর খালেদাকে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে অবস্থিত পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি রাখা হয়। এরপর ৩০ অক্টোবর এই মামলায় আপিলে তার আরও পাঁচ বছরের সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করেন হাইকোর্ট।
একই বছরের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়াকে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন একই আদালত। রায়ে সাত বছরের কারাদণ্ড ছাড়াও খালেদা জিয়াকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানা অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দেন।
২০২০ সালের মার্চে করোনা মহামারি শুরু হলে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাহী আদেশে দণ্ড স্থগিত করে কারাবন্দি খালেদা জিয়াকে সরকার শর্তসাপেক্ষে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দেয়। এরপর পরিবারের আবেদনে দণ্ড স্থগিতের মেয়াদ আটবার বাড়নো হয়।
আরএস