হেলিকপ্টার থেকে গুলি

এবার শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে শিশুহত্যা মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: আগস্ট ১৫, ২০২৪, ০৩:০৩ পিএম

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের দারুন্নাজাত ইসলামিয়া মাদরাসার চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র জোবাইদ হোসেন ইমনকে (১২) র‌্যাবের হেলিকপ্টার থেকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৬ জনের নামে মামলা করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) নিহত ইমনের মামা আব্দুল্লাহ আবু সাঈদ ভুইয়া ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রাজেশ চৌধুরীর আদালতে এ মামলা করেন।

আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে মোহাম্মদপুর থানাকে এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্যে পদত্যাগ করে ভারতে যাওয়ার পর শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের করা এটি চতুর্থ মামলা।

ইমন হত্যা মামলার অপর আসামিরা হলেন- সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়নমন্ত্রী তাজুল ইসলাম, সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক সংসদ সদস্য মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন, অতিরিক্ত আইজিপি ও র‍্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ব্যারিস্টার হারুন অর রশীদ, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার ড. খ মহিউদ্দিন, ডিবির সাবেক প্রধান হারুন আর রশীদ, যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার এবং হেলিকপ্টার টহল টিমের অজ্ঞাতনামা সদস্যরা।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, গত ১৯ জুলাই আসামিদের নির্দেশে র‍্যাব সদস্যরা হেলিকপ্টার থেকে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালায়। এসময় ভিকটিম জোবাইদ হোসেন ইমনের বাম কানের ওপর দিয়ে গুলি প্রবেশ করে ডান কানের নিচ দিয়ে চোয়াল ভেদ করে বেরিয়ে যায়। গুলির আঘাতে ঘটনাস্থলেই ভিকটিম জোবাইদ হোসেন ইমন মাটিতে পড়ে গেলে স্থানীয় লোকজন, মামলার বাদী ও অন্যান্য সাক্ষী তাকে দ্রুত উদ্ধার করে ধানমন্ডির ইবনে সিনা হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

অভিযোগে আরও বলা হয়, আসামিরা শেখ হাসিনার অবৈধ স্বৈরশাসনকে নিরঙ্কুশ ও দীর্ঘয়িত করার প্রয়াসে পরস্পরের সঙ্গে পরামর্শক্রমে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতাকে নির্মূল ও হত্যার পরিকল্পনা গ্রহণ করে। শেখ হাসিনার সর্বময় কর্তৃত্ব ও নেতৃত্বে অন্যান্য আসামিরা তাদের অধস্তন পুলিশ, বিজিবি (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) এবং র‍্যাবসহ অন্যন্য বাহিনীকে দিয়ে নির্বিচারে হত্যাকাণ্ড সংঘটনের মাধ্যমে আন্দোলনরত নিরস্ত্র ছাত্র-জনতাকে নির্মূল করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। সেই আলোকে পুলিশ, বিজিবি ও র‍্যাব সদস্যরা নীলনকশা বাস্তবায়নের নিমিত্তে পৈশাচিক হত্যাকাণ্ড শুরু করে। নির্বিচারে গুলি চালিয়ে অসংখ্য ছাত্র, শিশু, সাধারণ খেটে-খাওয়া মানুষকে হত্যা ও আহত করে।

এছাড়াও বিভিন্ন উঁচু ভবনের ছাদে অবস্থান নিয়ে আসামিদের অনুগত বাহিনীর সদস্যরা স্নাইপার রাইফেলের মাধ্যমে দূর থেকে গুলি করে অনেক ছাত্র এবং সাধারণ মানুষকে হত্যা করে। আসামিরা কর্তৃক নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর ভূমি থেকে, উঁচু ভবনের ছাদ থেকে এবং আকাশপথ থেকে উন্নত মরণাস্ত্রের মাধ্যমে অবিরাম গুলি বর্ষণের মাধ্যমে নির্বিচারে হত্যাকাণ্ড চালিয়ে অজস্র মানুষকে খুন ও আহত করা হয়। হত্যাকারী বাহিনীগুলো খুন এবং আহত করেই ক্ষান্ত হয়নি, বরং আহতদের পার্শ্ববর্তী হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যেতে বাধা দেয় এবং হাসপাতালে ডাক্তারদের ভয়ভীতি দেখিয়ে গুরুতর আহতদের চিকিৎসা প্রদানে বিঘ্ন সৃষ্টি করে।

এছাড়াও আসামিদের নির্দেশে হত্যাকারী বাহিনীগুলো হাসপাতালগুলোতে ঢুকে নিহতদের অনেকের মৃতদেহ জোরপূর্বক নিয়ে গিয়ে গুম করে ফেলে। ফলে নিহতদের প্রকৃত সংখ্যা নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি। অনেক মৃতদেহ পুলিশ জোরপূর্বক নিয়ে কোনো রকম ময়নাতদন্ত ছাড়াই অজ্ঞাত পরিচয় হিসেবে বিভিন্ন কবরস্থানে গোপনে দাফন করে হত্যাকাণ্ডের প্রমাণ বিনষ্ট করার চেষ্টা করে। একইভাবে তারা আমার ভাগ্নে জোবাইদ হোসেন ইমনের মৃতদেহ ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন করতে বাধ্য করে বলে উল্লেখ করেন বাদী।

আরএস