আব্দুল গণি শেখ হত্যা

শেখ হাসিনাসহ ৪০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা

আমার সংবাদ ডেস্ক প্রকাশিত: এপ্রিল ১৯, ২০২৫, ০৪:৩২ পিএম

রাজবাড়ী সদর উপজেলার খানখানাপুর এলাকার বাসিন্দা মো. আব্দুল গণি শেখ (৪৫) বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে গত বছরের ১৯ জুলাই ঢাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। ওই ঘটনায় গত ২৭ সেপ্টেম্বর তার বাবা মো. আব্দুল মজিদ শেখ বাদী হয়ে ঢাকার গুলশান থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

ওই মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ১ নম্বর আসামি করে ৪২ জনের নাম উল্লেখ করে ও ৩৫০ থেকে ৪০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়। এরপর গত ৬ এপ্রিল রাত সাড়ে ১০টার দিকে সাবেক সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলী গ্রেপ্তার হওয়ার পর এই মামলার বিষয়টি সামনে আসে।

মামলার আসামিরা হলেন- সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক পরিবেশমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডা. মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, সাবেক আইসিটি মন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত, সাবেক তথ্যমন্ত্রী ও জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, সাবেক রেলমন্ত্রী ও রাজবাড়ী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মো. জিল্লুল হাকিম, সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ও রাজবাড়ী-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলী, সাবেক বিচারক ও যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের কো-অর্ডিনেটর মোহাম্মদ শামসুল হক, ঢাকা-১১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ওয়াকিল উদ্দিন, সাবেক এমপি শাহজাহান খান, আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আতিকুল ইসলাম আতিক, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য খন্দকার এনায়েতুল্লাহ, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, ডিএমপির সাবেক যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার, গুলশান থানার সাবেক ডেপুটি কমিশনার মো. আব্দুল আহাদ মিয়াসহ ৪২ জন। এ ছাড়া মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ৩৫০ থেকে ৪০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গত ১৯ জুলাই বেলা ১১টার দিকে মো. আব্দুল গণি শেখ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মিছিলে অংশগ্রহণ করে গুলশান থানার শাহজাদপুর বাঁশতলা ফুটওভার ব্রিজের পশ্চিম পাশে রাস্তার ওপর অবস্থানকালে তার মাথার ডান ও বামে গুলিবিদ্ধ হন। এরপর পথচারীরা দ্রুত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক বেলা সাড়ে ১২টার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

মামলার এজাহারে উল্লেখ আছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে এবং বর্ণিত অন্যান্য আসামিদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ নির্দেশনায় এবং তাদের অনুসারী আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সন্ত্রাসীরা তাদের কাছে থাকা অবৈধ অস্ত্র দ্বারা এলোপাতাড়ি গুলি করে গণিকে হত্যা করে। পুলিশ মরদেহের সুরতহাল ও অন্যান্য কার্যক্রম শেষে গত ২১ জুলাই দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে। ওইদিন বাদ আসর রাজবাড়ী সদর উপজেলার খানখানাপুর নিজ বাড়িতে তার মরদেহ দাফন করা হয়

মামলার বিষয়ে জানতে মোবাইলে রাজধানীর গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহমুদুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় আব্দুল গণি শেখ হত্যার ঘটনায় তার বাবা আব্দুল মজিদ শেখ বাদী হয়ে গুলশান থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটি র‍্যাব তদন্ত করছে।

রাজবাড়ী কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক (ওসি) মো. জসিম উদ্দিন বলেন, বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় রাজিব মোল্লার দায়ের করা মামলায় সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ও সাবেক সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলীকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। এ ছাড়া গোয়ালন্দ মোড়ে গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় রাজবাড়ী থানায় জিসান খানের দায়ের করা মামলার তদন্তেও প্রাপ্ত আসামি হিসেবে তাকে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো হয়েছে।

এর আগে, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় রাজবাড়ীতে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার মামলায় গত ৬ এপ্রিল রাত সাড়ে ১০টার দিকে বিশেষ অভিযান চালিয়ে রাজধানীর ঢাকার মহাখালী থেকে সাবেক সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলীকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। তাকে দুই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে রাজবাড়ীতে আনা হয়। পরদিন ৭ এপ্রিল দুপুর পৌনে ১২টায় তাকে আদালতে তোলা হয়। এ সময় রাজবাড়ী সদর আমলি আদালতের বিচারক জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. তামজিদ আহমেদ তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

আরএস