মেয়েরা যে কারণে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়

মো. মাসুম বিল্লাহ প্রকাশিত: আগস্ট ১৪, ২০২২, ০৬:৫৮ পিএম

আত্মহত্যা এমন এক ভয়্ঙ্কর ব্যধি যার কোনো প্রতিশেধক নেই। এই ব্যধির চুড়ান্ত ফলাফল মৃত্যু। সমীক্ষায় দেখা যায় ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা নানা কারণে এই মৃৃত্যুর পথ বেছে নেয়। সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া কয়েকটি আত্মহত্যার ঘটনায় খুঁজ করে জানা গেল আত্মহত্যার নৈপথ্যে যত কারণ।

মেয়ের সাথে মা-বাবার সমন্বয়হীনতা;
আত্মহত্যার কয়েকটি কারণের মধ্যে অন্যতম কারণ হলো পরিবারের সদস্যদের আচরণ। বিশেষ করে মা-বাবার সমন্বয়হীনতা এর পেছনে চরম আকারে দায়ী। মেয়ে হয়তো নিজের মতো স্বাধীনতা খুজেঁ কিন্তু প্রতিটি মা-বাবাই সন্তানের কল্যাণের কথা চিন্তা করে তাতে হস্তক্ষেপ করে। যাতে দিন দিন একাককিত্ববোধ করতে থাকে মেয়ে। সে ভেবে নেই তার চাওয়া,পাওয়া ও চাহিদা এবং আকাঙ্ক্ষা যদি পরিবারই না বুঝে তাহলে এখানে কার আশায় বেচেঁ থাকবে। সম্প্রতি অর্ক প্রিয়া ধর শ্রীজা নামে এক মেয়ের আত্মহত্যার খবর গনমাধ্যমে প্রকাশ হয়। খবরটি শিরোনাম ছিল *বাবা-মায়ের সাথে অভিমান করে শিক্ষার্থীর আত্নহত্যা* সে আত্মহত্যা পূ্র্বে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আত্মহত্যার কারণ শেয়ার করে।
তার স্ট্যাটাসের অংশ বিশেষ তুলে ধরা হলো,  বাবা মার সাথে একটু ঝগড়া হইলেই মইরা যাওয়া লাগে? গিয়ে দেখেন গা এইটা এক দিনের ঝগড়া ছিল না, কি পরিমান মানসিক চাপ দিলে একটা মানুষ মরতে যায় নিজে থেকে। আমি নিজে যতদিন ধরে ট্রাই করতেসি আমি দেখতেসি। ৩ বছর ধরে সুইসাইডাল চিন্তায় ভুইগা আমার এতদিনে সাহস হইসে। তাই, সবাইরেই ভাবসে আর সুইসাইড কইরা ফেলসে এম্নে জাজ করতে যাইয়েই না। কেও হেল্প চাইলে তো বুলি ছাড়া কিছু পারেন না। আবার কিসু করে ফেললে তখন তার দোষ। ভিক্টিম ব্লেম ছাড়া জীবনে কিসু শিখছিলেন? যারা সুইসাইড করে তারা বাপ মা রে মাইরা করে না, বাপ মা ই এদের সুইসাইড এর পথে ঠেইলা দেয়। আপনার মনে হয় আমার খুব ইচ্ছা ছিল মরার? বাধ্য হইসি।
একই কারণে এ বছর জানুয়ারীতেও খুলনায় মারিয়া আক্তার বৃষ্টি নামে এক স্কুল ছাত্রী ঘরের আড়া’র সাথে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে।

 

সম্পর্কের টানাপোড়ন ;
মেয়েদের আত্মহত্যার পেছনে সম্পর্কের টানাপোড়ন বিশেষ একটি কারণ।পৃথিবীতে প্রেমের সম্পর্ক একটি মেয়েকে ভিন্ন একটি জগৎে রূপান্তর করে। প্রেমিককে নিয়ে স্বপ্ন দেখে আমৃত্যু এক সাথে বেচেঁ থাকার। সম্পর্ককে গভীর করতে বিলিয়ে দেয় জীবন যৌবন। কিন্তু হঠাৎ সম্পর্কের টানাপোড়নে আত্মমর্যাদার ভয়ে ভেঙ্গে পড়ে। নিজের সম্মানহানীর ভয়ে বেছে নেয় আত্মহত্যার পথ।সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কয়েকটি আত্মহত্যার খবর প্রকাশিত হয়, যেখানে গত ৩১ শে মার্চ দৈনিক ইত্তেফাকে একটি শিরোনাম হয়*প্রেমিকের সাথে অভিমান করে প্রেমিকার আত্মহত্যা*। তাতে দেখা যায়,সুমাইয়া নামে মাদ্রাসার শিক্ষার্থী গলায় উড়না পেচিয়ে আত্মহত্যা করেন। আত্মহত্যার কারন জানিয়ে সুমাইয়ার বাবা জানান, সুমা্লাইয়া এলাকার একটি মহিলা মাদ্রাসার ছাত্রী। সে সূত্রে শিবপুর গ্রামের লোকমান হোসেনের ছেলে মাদ্রাসাছাত্র মিজানুর রহমানের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। তার ধারণা মিজানের সঙ্গে তার কোন কারণে মনোমালিন্য হয়েছে। আর সে কারণেই তার সঙ্গে অভিমান করে সুমাইয়া আত্মহত্যা করেছে। 
ঠিক একই শিরোনামে দৈনিক জাগরণে একটি খবর প্রকাশিত হয় তাতে দেখা যায়, ভোলায় সাদিয়া নামে এক কলেজ ছাত্রী ছাদ থেকে লাভ দিয়ে আত্মহত্যা করে। সহপাঠিরা জানায় মিজান সাদিয়ার সাথে সম্পর্কের ইতি টানতে চাইলে সাদিয়া আত্মহত্যা করে।
এ ছাড়াও গুলশানে এরশাদ শিকদারের মেয়ে জান্নাতুল নওরিন এশাও প্রেমিকার সাথে মনমালিন্যর জেরে আত্মহত্যা করেছেন বলে খবর পাওয়া যায়।

 

মাত্রাতিরিক্ত জেদ ;
মেয়েদের আত্মহত্যার নৈপথ্যে ভয়ঙ্কর একটি কারণ হলো অতিরিক্ত রাগ। সাধারণত মেয়েদের ধৈর্য্যধারণের সক্ষমতা খুব কম। মাত্রাতিরিক্ত জেদের কারণে আত্মহত্যা করে। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া আলোচিত নারী পুলিশ কর্মকর্তা লাবনীর আত্মহত্যার খবর ছড়িয়ে পরে দেশ ব্যাপি। তাতে ঔ কর্মকর্তার বাবা জানান, মেয়েটা খুব জেদি ছিল। যা বলতো, তাই ছিল শেষকথা। যদি বলতো হবে না, তা কোনোভাবেই হতো না। রেগে গেলে থামানো যেতো না। আমার মনে হচ্ছে, পারিবারিক বিষয় নিয়ে স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া করে আত্মহত্যা করেছে।

 

স্বামী ও শশুরবাড়ীর নির্যাতন;

মেয়েরা বাবার বাড়ির পর নিজের আশ্রয়স্থল হিসেবে বেছে নেয় শ্বশুর বাড়ি। চাওয়া পাওয়া সব কিছুেই নির্ভর করে স্বামীর পরিবারের সদস্যদের ওপর। কিন্তু এমনও পরিবার আছে যারা পরের মেয়ে বলে ছেলে বউয়ের উপর চরম আকারে চড়াও হোন এমনকি মারধরও করেন। অনেক স্বামীও স্ত্রী সাথে এমন করে থাকে। তাতে অনেক  মেয়েরাই এ অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।শরিয়তপুরে এমন একটি ঘটনার খবর পাওয়া যায় দৈনিক জনতায় তাতে দেখা যায়, নড়িয়া উপজেলার বিজারি ইউনিয়নের ফতেজঙ্গপুর গ্রামের ইতালি প্রবাসী জামাল মাদবরে স্ত্রী স্বপ্না বেগম (২৫) বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেছে। মৃত স্বপ্না বেগমের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গত রোববার ইতালি থাকা স্বামী জামাল মাদবরের সাথে মুঠোফোনে ঝগড়ার একপর্যায়ে শ্বশুর-শ্বাশুড়ি ননদের মানসিক অত্যাচারে স্বপ্না বেগম বিকেলে ঘরে রাখা বিষ খেয়ে শ্বশুর বাড়িতেই আত্মহত্যার চেষ্টা করে। স্বপ্না বেগমের বিষ খাওয়ার বিষয়টি সপ্নার মা বাবাকে জানানো হলে তাৎক্ষণিকভাবে সরেজমিনে গিয়ে মেয়েকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে আসে।সদর হাসপাতালে তিনদিন  চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় গত মঙ্গলবার সকাল নয়টার দিকে এক সন্তানের মা স্বপ্না বেগম মৃত্যুবরণ করেন।
এছাড়াও সারাদিন নিউজ নামে এক অনলাইন পোর্টালেও যৌতুকের জন্য পরিকল্পিতভাবে শশুর বাড়ীর নির্যাতনে হবিঞ্জের নবীগঞ্জ পৌর এলাকার পুর্ব তিমিরপুর গ্রামে অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূ আঁখি আক্তার (১৯) আত্মহত্যা করে।    
আত্মহত্যার পেছনে আরোও ভিন্ন ভিন্ন কারণ থাকতে পারে। আমরা শুধু কয়েকটি আলোচিত ঘটনা তুলে ধরে কারণ জানার চেষ্টা করেছি।

আমারসংবাদ/আরইউ