তীব্র গরমে হিটস্ট্রোক: লক্ষণ, চিকিৎসা ও প্রতিরোধের উপায়

নাগরপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি: প্রকাশিত: এপ্রিল ২৩, ২০২৪, ০১:৪৫ পিএম

হিট স্ট্রোক (Heat stroke) বা সান স্ট্রোক (sun stroke) এক ধরনের অসুস্থতা, যা অত্যধিক গরমের কারণে হয়ে থাকে। এই অসুখে শরীরের তাপমাত্রা ১০৪ᱸফারেনহাইট-এর বেশি এবং সাথে শারীরিক ও মানসিক ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়। হিটস্ট্রোক সাধারণত হঠাৎ করেই দেখা দেয়। এই সমস্যা একটি জরুরি কেস দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। হিটস্ট্রোক ভয়াবহতা শিশু এবং বয়োবৃদ্ধদের বেলায় সাধারণত বেশি হয়।আমাদের দেশেও এই রোগ এখন প্রায়ই দেখা দেয় কারণ প্রতিনিয়তই পরিবেশের তাপমাত্রা বেড়েই চলেছে।

 

হিট স্ট্রোকের কারণ:

হিট স্ট্রোক কয়েকটি কারণে হতে পারে- পারিপার্শ্বিক উচ্চ তাপমাত্রা শরীরে পানিশূন্যতা বা মিনারেলস (minerals)- এর অভাব কিছু ওষুধের প্রতিক্রিয়ায়, যেমন- ডাই-ইউরেটিক্স (diuretics), বিটা ব্লকারস (beta blockers), অ্যালকোহল (alcohol)হার্ট (heart)-এর বা স্কিন (skin)-এর অসুখে।

 

হিট স্ট্রোকের লক্ষণ:

হিট ক্র্যাম্প হওয়া (এক্ষেত্রে শরীরের মাংসপেশিতে ব্যথা হয়), শরীর দুর্বল লাগে, প্রচণ্ডপিপাসপায়, দ্রুতশ্বাসপ্রশ্বাস, মাথাব্যথা, ঝিমঝিম করা, বমিভাব, অসংলগ্ন আচরণ, শরীর অত্যন্ত ঘামতে থাকে, শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি হওয়া, ঘাম বন্ধ হয়ে যায় ত্বক শুষ্ক ও লালচে হয়ে যায়, নাড়ির স্পন্দন ক্ষীণ বা দ্রুত হয়, রক্তচাপ কমে যায়,প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যায়, রোগী শকেও চলে যায়। এমনকি অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে।

 

হিট স্ট্রোকে বেশি ঝুঁকিতে যারা:
শিশু,বয়স্ক ব্যক্তি,প্রতিবন্ধী ব্যক্তি,শ্রমজীবী ব্যক্তি রিকশাচালক, নির্মাণশ্রমিক, কৃষক],যাদের ওজন বেশিযারা শারীরিকভাবে অসুস্থ বিশেষ করে যাদের হৃদ্‌রোগ বা উচ্চ রক্তচাপ আছে।

 

হিটস্ট্রোক করার মুহূর্তের কাজ:

হিটস্ট্রোক রোগীকে গরম স্থান থেকে দ্রুত শীতল স্থানে নিয়ে আসতে হবে। এরপর পরিধানের কাপড় যথাযথ খুলে ফেলে ভেজা কাপড় দিয়ে রোগীর শরীর ঢেকে দিতে হবে। কাপড় ঠান্ডা পানি ঢেলে এটাকে ভেজে রাখুন। পাশাপাশি পাখা দিয়ে রোগীর গায়ে বাতাস করার ব্যবস্থা করতে হবে।রোগীর দেহে তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট না নামা পর্যন্ত উক্ত প্রক্রিয়া চালিয়ে যেতে হবে।যখন রোগীর  দেহের তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইটে নেমে আসবে তখন ভেজা কাপড় সরিয়ে একটি শুকনো কাপড় দিয়ে রোগীকে ঢেকে দিতে হবে। যদি তাপমাত্রা পুনরায় বেগে যায় তখন তাপমাত্রা কমানোর জন্য আগের পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে।

হিটস্ট্রোক প্রতিরোধ ও চিকিৎসা:
দিনের বেলায় বাইরে কম বের হওয়ার চেষ্টা করুন। সরাসরি রোদ এড়িয়ে চলুন।বাইরে বের হলে সঙ্গে ছাতা রাখুন। এছাড়া টুপি, পাগড়ি বা কাপড় দিয়ে মাথা ঢেকে রাখার চেষ্টা করুন।হালকা রঙের ঢিলেঢালা সুন্নতি ও সুতি পোশাক পরিধান করুন।প্রচুর পরিমাণে পানি/শরবত/ স্যালাইন পান করুন।দিনের বেলা একটানা শারীরিক পরিশ্রম থেকে বিরত থাকুন।সম্ভব হলে একাধিকবার পানির ঝাপটা দিন বা গোসল করুন।ঘরের পরিবেশ যেন অতিরিক্ত গরম বা ভ্যাপসা না হয় সেদিকে লক্ষ রাখুন। বেশি বেশি দুয়া ও ইস্তিগফার পড়ুন।সালাতুল হাজত ও সালাতুল ইস্তিসকা আদায় করুন। বিদ্যুৎ না থাকলে হাতপাখা ব্যবহার করে শরীর শীতল রাখুন।

এছাড়াও স্ট্রোক প্রতিরোধের জন্য সচেতনতা অত্যাবশ্যক। ঝুঁকি এড়াতে রক্তের কোলেস্টেরল, রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ধূমপান, জর্দা, গুল, মাদক ও অ্যালকোহল গ্রহণের অভ্যাস বর্জন করতে হবে। নিয়মিত শরীরচর্চা করতে হবে। স্ট্রোক প্রতিরোধের কার্যকর পন্থা হলো নিয়মিত ব্যায়াম করা। নিয়ম করে প্রতিদিন ৩০ মিনিট এবং সপ্তাহে অন্তত পাঁচ দিন হাঁটার অভ্যাস করতে হবে। পর্যাপ্ত সবুজ শাকসবজি ও সতেজ ফলমূল খাওয়ার মাধ্যমে স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেকটাই এড়ানো সম্ভব। 

পাশাপাশি খাদ্যতালিকায় চর্বি ও শর্করাজাতীয় খাবারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। পাশাপাশি স্ট্রোক হওয়ার পরে তা বুঝতে পারা এবং সে অনুযায়ী হোমিওপ্যাথিক রেজিস্টার্ড  চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী লক্ষ্মণ ভিত্তিক মেডিসিন সেবন করলে হিটস্ট্রোক থেকে আরোগ্য সম্ভব, ইনশাআল্লাহ। 

বিআরইউ