ডুবে গেলো বই মেলার শেষ সূর্য

আবু ছালেহ আতিফ প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২৩, ০৮:৩৬ পিএম
  • মোট প্রকাশিত বই ৩৭৩০টি
  • সকল বই ২৫% কমিশনে বিক্রি হয়েছে 
  • বই বিক্রি বাংলা একাডেমি ১ কোটি ৪৬ লাখ 
  • সর্বমোট বিক্রি প্রায় ৪৭ কোটি

অমর একুশে বইমেলা ২০২৩ এর সূর্য অস্তমিত হলো আজ। পহেলা ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয় পাঠক, লেখক, দর্শনার্থীদের এ প্রাণের মেলা।আটাশতম দিনে পূব আকাশের সূর্যের হেলে পরার সাথে যেনো ভাঙ্গনের সুর বেজে উঠলো বাঙালির প্রাণের মেলা।শেষ বেলায় আবেগাল্পুত হয়ে যাচ্ছেন, ক্রেতা, বিক্রেতা ও দর্শনার্থীরা। তারা আশা করছেন এভাবেই  জমুক প্রানের মেলা।

মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) অমর একুশে বইমেলার শেষ দিনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও বাংলা একাডেমি ঘুরে এ দৃশ্য দেখা যায়।

রাজধানীর রামপুরা থেকে পরিবার সহ মেলায় এসেছেন তহমিনা আক্তার। সবাই মিলে মেলার স্টলে স্টলে ঘুরে দেখছেন। পাশাপাশি কিনেছেন অনেক বই।

শেষ দিনের মেলায় আসার অনুভূতি জানতে চাইলে তহমিনা আক্তার বলেন, পুরো মাসে কয়েকবার মেলায় এসেছি। বই ক্রয়ের পাশাপাশি মেলার পরিবেশ এবং বইপ্রেমিদের এই উপস্থিতি আমাদের ভালো লাগে।এবং আশা রাখবো এ বছরের মত যেনো সবসময় মন-মুগ্ধকর পরিবেশে বইমেলার এ আয়োজন আমাদেরকে উজ্জীবিত রাখবে।

অন্যধারা প্রকাশনী থেকে লাইন ধরে সাদাত হোসেনের বই ‍‍`সে এসে বসুক পাশে কিনছেন‍‍` শাম্মী আক্তার।এ বছরের বইমেলা তার কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন বলছেন এ তরুণী।

বইমেলার শেষ দিনের অনুভূতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি সুযোগ পেলে প্রতিদিনই আসি মেলায়। কারণ; বই পড়ার চেয়ে ন্তুন বইয়ের যে একটা গন্ধ সেটা আমাকে মোহিত করে।

অমর একুশে বইমেলার পুরো মাসের বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বই বিক্রির হিসেব  সম্পর্কে বাংলা একাডেমি পরিচালক ও বইমেলার সদস্য সচিব ডা. কে এম মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, অমর একুশে বইমেলা ২০২৩-এ বাংলা একাডেমি-সহ সকল প্রতিষ্ঠানের বই ২৫ শতাংশ কমিশনে বিক্রি 
হয়েছে। ২৭শে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাংলা একাডেমির ১ কোটি ২৪ লাখ টাকার বই বিক্রি করেছে।

তিনি বলেন, ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত স্টল মালিকদের কাছ থেকে  প্রাপ্ত তথ্য এবং আজকের সম্ভাব্য বিক্রি যুক্ত করলে বলা যায় যে প্রায় ৪৭ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছে।

নতুন বই: আজ বইমেলার শেষ দিনে নতুন বই এসেছে ২৬৭টি। তারমধ্যে গল্প ৩৯,উপন্যাস ২৪, প্রবন্ধ
১১, কবিতা ১২১, গবেষণা ৫, ছড়া ৩, শিশুসাহিত্য ২, জীবনী ৯, রচনাবলি ২, মুক্তিযুদ্ধ ৪, নাটক ৬, বিজ্ঞান ১, ভ্রমণ ২, ইতিহাস ৭, রাজনীতি ২, চি:/স্বাস্থ্য ৩, বঙ্গবন্ধু ২, রম্য/ধাঁধা ১, ধর্মীয় ১, অনুবাদ ৫, অভিধান ৩, সায়েন্স ফিকশন ২, অন্যান্য ১২ সহ মোট ২৬৭। এবং পুরো মাস জুরে মোট নতুন বই এসেছে ৩৭৩০টি।

বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের সভাপতিত্বে অমর একুশে বইমেলা ২০২৩-এর সমাপনী অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা ভাষণ প্রদান করেন একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন ‘অমর একুশে বইমেলা ২০২৩ এর সদস্য-সচিব ডা. কে এম মুজাহিদুল ইসলাম।এবং প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের 
প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এমপি।  

এ সময় বক্তারা বলেন, কোভিড মহামারি পরবর্তীকালে এক মাসব্যাপী অমর একুশে বইমেলা ২০২৩ আয়োজন সত্যিই আমাদের জন্য বড়ো একটি সফলতা। বিন্যাস ও আঙ্গিকগত দিক দিয়ে এবারের বইমেলা সবার কাছে প্রশংসিত হয়েছে।

তারা আরও বলেন, বইমেলা কেবল বই বিক্রির জায়গা নয়। দল, মত, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলের প্রাণের মেলা অমর একুশে বইমেলা ২০২৩ সকলের সক্রিয় অংশগ্রহণ ও সহযোগিতায় সাফল্যমণ্ডিত হয়েছে। 
বাংলা একাডেমি আয়োজিত অমর একুশে বইমেলা আমাদের জাতীয় জীবনে বড়ো একটি দিগন্ত। বই পাঠের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের তরুণদের মধ্যে মানবিক দর্শন জাগ্রত হবে এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হবে।

এছাড়াও সমাপনী অনুষ্ঠানে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ সাহিত্য পুরস্কার ২০২২, কবি জসীমউদ্দীন সাহিত্য পুরস্কার ২০২৩ এবং অমর একুশে বইমেলা ২০২৩ উপলক্ষে বিভিন্ন গুনীজন পুরস্কার প্রদান করা হয়।

গুণীজন স্মৃতি পুরস্কার ২০২৩ 
আগামীকাল অমর একুশে বইমেলা ২০২৩-এর সমাপনী অনুষ্ঠানে ২০২২ সালে প্রকাশিত বিষয় ও গুণমানসম্মত সর্বাধিক সংখ্যক বই প্রকাশের জন্য আগামী প্রকাশনী-কে চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার-২০২৩ প্রদান করা হয়।

২০২২ সালে প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে শৈল্পিক ও গুণমান বিচারে সেরা বই বিভাগে আহমদ রফিক রচিত বিচ্ছিন্ন ভাবনা প্রকাশের জন্য জার্নিম্যান বুক্স, মোহাম্মদ হারুন-উর-রশিদ রচিত বাংলা একাডেমি আমার বাংলা একাডেমি বইয়ের জন্য ঐতিহ্য এবং হাবিবুর রহমান রচিত ঠার: বেদে জনগোষ্ঠীর ভাষা প্রকাশের জন্য পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.-কে মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার ২০২৩ প্রদান করা হয়।

২০২২ সালে প্রকাশিত শিশুতোষ বইয়ের মধ্য থেকে গুণমান বিচারে সর্বাধিক গ্রন্থ প্রকাশের জন্য ময়ূরপঙ্খি-কে রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার-২০২৩ প্রদান করা হয়।

২০২৩ সালের অমর একুশে বইমেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্য থেকে নান্দনিক অঙ্গসজ্জায় সেরা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পুথিনিলয় (প্যাভিলিয়ন), নবান্ন প্রকাশনী (২-৪ ইউনিট), উড়কি (১ ইউনিট) -কে শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার ২০২৩ প্রদান করা হয়।

উল্লেখ্য,  টানা দুই বছর করোনার অস্থিরতার কারণে একুশে বইমেলা ঠিকমতো অনুষ্ঠিত হয়নি। করোনার ধকল কাটিয়ে এবারের বইমেলা আগের সেই উজ্জ্বল-আনন্দ মুখর পরিবেশ পেয়েছে। বইমেলার সোহরাওয়ার্দী অংশ এবার অনেক বিস্তৃতি লাভ করেছে। যতদূর সোহরাওয়ার্দী উদ্যাণ ঠিক ততদূরই এবারের একুশে বইমেলার বিস্তৃতি। ছবির মতো সাজানো গোছানো পরিবেশ। সবই ঠিকঠাক শুধু একটা প্রশ্ন, বইয়ের মেলায় বইয়ের বিক্রি আসলে কেমন হলো?এ ব্যাপারে সঠিক অর্থ পাওয়া মুশকিল। একদল প্রকাশক বলছেন, এবার বইয়ের বিক্রি বেশ ভালো। আরেকদলের মন্তব্য, আশাতীত বই বিক্রি হয়নি।  কাগজের মূল্য বৃদ্ধির কারণে ধারণা করা হয়েছিল এবার বইয়ের দাম বাড়বে। কাজেই বই বিক্রি কমতে পারে। এই ধারনা আসলে পুরোপুরি সঠিক প্রমাণিত হয়নি।দাম বাড়লেও যাদের বই কেনার ইচ্ছে ছিলো তারা ঠিকই কিনেছে বলছেন একাডেমি কতৃপক্ষ।

কেএস