বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর

সৈনিক ও মুক্তিযোদ্ধা বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ: জীবন ও কর্ম’ শীর্ষক সেমিনার

আমার সংবাদ ডেস্ক প্রকাশিত: অক্টোবর ২৭, ২০২৪, ০৭:৫৪ পিএম

বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে আজ ‘সৈনিক ও মুক্তিযোদ্ধা বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ: জীবন ও কর্ম’ শীর্ষক সেমিনার ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ও বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মো. আতাউর রহমান। প্রধান বক্তা হিসেবে ছিলেন বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখের পুত্র এস.এম. গোলাম মোস্তফা কামাল।

আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক স্কুল এণ্ড কলেজের প্রিন্সিপাল লেফটেনেন্ট কর্ণেল মো. আবু সাঈদ।

সভাপতিত্ব করেন জাদুঘরের সচিব গাজী মো. ওয়ালি-উল-হক। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন জাদুঘরের জনশিক্ষা বিভাগের কীপার আসমা ফেরদৌসি।

প্রধান বক্তার বক্তব্যে বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখের পুত্র এস.এম. গোলাম মোস্তফা কামাল তার পিতার জীবনের নানাদিক নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন।

তিনি বলেন, ছোট বেলায় বাবার আদর ভালবাসা না পেলেও, লাল সবুজের পতাকা পেয়েছি। স্বাধীন সার্বভৌম সোনার বাংলাদেশ পেয়েছি। বাবা অত্যন্ত উদার মনের মানুষ ছিলেন। তিনি ১৯৩৬ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি নড়াইল জেলার মহেষখোলা গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। ১৯৫৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন ইস্ট পাকিস্তান রাইফেল্স (ইপিআর) এ যোগ দেন এবং মুক্তিযুদ্ধের সময় ৮ নম্বর সেক্টরের যশোর জেলার ঝিকরগাছা থানার গোয়ালহাটি গ্রামে স্থাপিত একটি ক্যাম্পের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৭১ সালের ০৫ সেপ্টেম্বর দুজন সঙ্গী নিয়ে গোয়ালহাটি গ্রামের ছুটিপুর ঘাঁটি টহল দেয়ার সময় পাকবাহিনী তাঁদের আক্রমণ করে। তিনি তাঁর টহল দলটিকে রক্ষার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করেন। হঠাৎ শত্রুর দুই ইঞ্চি মর্টারের আঘাতে তাঁর হাঁটু ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়। তাঁর সঙ্গীরা যেন প্রতিরক্ষা ঘাঁটিতে পৌঁছাতে পারেন সেজন্য মারাত্মক আহত অবস্থায়ও গুলি চালাতে থাকেন এবং এক সময় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। এভাবেই তিনি তাঁর জীবনকে মুক্তিযুদ্ধের সময় উৎসর্গ করেছেন। আমি গর্বিত তাঁর মতো বীরের সন্তান হতে পেরে।

আলোচকের বক্তব্যে লেফটেনেন্ট কর্ণেল মো. আবু সাঈদ, পিএইচডি বলেন, বীর শ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ বাল্যকালেই বাবা-মাকে হারান। ফলে শৈশবেই ডানপিটে হয়ে পরেন। স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের লেখাপড়া শেষ করে উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সপ্তম শ্রেণির পর আর পড়াশোনা করেননি। কৈশোরে নাটক থিয়েটার খুব পছন্দ করতেন নূর মোহাম্মদ। মাত্র ১৬ বছর বয়সে বিয়ে করেন, স্ত্রীর বয়স তখন মাত্র ১২ বছর। অত্যন্ত সাহসি ও আদর্শ সৈনিক ছিলেন বলেই তিনি বীর শ্রেষ্ঠ হতে পেরেছিলেন। বাংলাদেশের জন্য যারা যুদ্ধ করেছিলেন তাঁদের সকলকে স্মরণ করা এবং শহীদদের সপ্ন বাস্তবায়ন করা আমাদের কর্তব্য।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মো. আতাউর রহমান বলেন, বীর শ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ ছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি নিজের প্রাণের বিনিময়ে সহযোদ্ধাদের জীবন রক্ষা করেছিলেন। তাঁর এই অপরিসীম বীরত্ব, সাহসিকতা ও দেশপ্রেমের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাঁকে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সম্মান ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ খেতাবে ভূষিত করে। স্বাধীনতা অর্জনে এই মহান বীরের আত্মত্যাগ চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

সভাপতির বক্তব্যে গাজী মো. ওয়ালি-উল-হক বলেন, বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী খেতাবে প্রাপ্ত সাত জন বীরশ্রেষ্ঠের একজন শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা নূর মোহাম্মদ শেখ। মহান এই বীর সৈনিকের দেশ প্রেম, বীরত্বগাথা, অজানা কাহিনী নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার জন্য বিস্তর গবেষনার প্রয়োজন। যাঁদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা মাতৃভূমি পেয়েছি তাঁদের এই অবদান ভোলার না। তাঁদের চেতনাকে ধারণ করে নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে।

ইএইচ