বিশ্বখ্যাত গিনেস বুকের অজানা তথ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: মার্চ ৫, ২০২৪, ০১:১০ পিএম

পৃথিবীজুড়ে এখন পর্যন্ত যেসব ‘বিশ্ব রেকর্ড’ হয়েছে, সেগুলো খোঁজার জন্য সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য বই হচ্ছে ‘গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস’। কোনো ব্যক্তি যদি বিশেষ ক্ষেত্রে পূর্বের সমস্ত রেকর্ড ভেঙে দিয়ে নতুন বিশ্বরেকর্ড গড়তে চান, তাহলে তাকে ‘গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস’ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে স্বীকৃতি নিতে হবে। 

অর্থাৎ এই বইটি বিশ্বরেকর্ডের স্বীকৃতির একটি মানদণ্ড। মূলত ‘গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস’ হচ্ছে একটি বই, যে বইয়ে পৃথিবীর অসংখ্য বিশ্বরেকর্ড লিপিবদ্ধ করা আছে।

গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের যাত্রার শুরুটা বেশ আগ্রহোদ্দীপক। ১৯৫০ সালের দিকে আয়ারল্যান্ডের রাজধানী ডাবলিনে এক বিয়ার প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের নাম ছিল ‘গিনেস’, যার নির্বাহী পরিচালক ছিলেন স্যার হিউ বিভার। একদিন বন্ধুদের সঙ্গে পাখি শিকারে গিয়ে ইউরোপের সবচেয়ে দ্রুতগতির পাখি কোনটি, তা নিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে মতবিরোধ হয় হিউ বিভারের।

বাদানুবাদ চরমে পৌঁছলেও দুই পক্ষই তাদের দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ দিতে পারছিল না। সেইদিনই স্যার হিউ বিভার এমন এক বইয়ের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলেন, যাতে পৃথিবীর সমস্ত বিশ্বরেকর্ড লিপিবদ্ধ করা থাকবে।

কিন্তু ভাবলেও এমন একটি বই বের করা সহজ ছিল না। বইয়ের কাজে নরিস ম্যাকহুইর্থার এবং রস ম্যাকহুইর্থার নামে দুই সাংবাদিক ভাইয়ের দ্বারস্থ হলেন স্যার বিভার। এই দুজন মিলে প্রায় সাড়ে তিন মাস রাত দিন খাটাখাটুনির পরে একটি খসড়া বই প্রস্তুত করলেন। এরপর ১৯৫৫ সালের ২৭ আগস্ট প্রকাশিত হলো ‘গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস’।

বইটি প্রকাশ করা হয়েছিল স্যার বিভারের মালিকানাধীন ‘গিনেস সুপারলেটিভ’ নামের প্রকাশনা সংস্থা থেকে। স্যার বিভারের ধারণা ছিল, হয়তো বইটি খুব বেশি জনপ্রিয়তা লাভ করবে না। কিন্তু তার ধারণা ভুল হতে খুব বেশি সময় লাগল না। মাত্র চার মাসে বইটির এতগুলো কপি বিক্রি হয়েছিল, অল্প কদিনেই ‘গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস’ বইয়ের গায়ে ‘বেস্টসেলার’-এর তকমা লেগে গেল। পুরো ইংল্যান্ডজুড়ে এই বই নিয়ে এত বেশি আলোচনা হলো, প্রথম সংস্করণের সমস্ত বই শেষ হতে খুব বেশি সময় লাগল না।

পরে বছরগুলোতে আরও বেড়ে গেল এই বইয়ের চাহিদা। ফলে আর কখনও পেছনে তাকাতে হয়নি স্যার হিউ বিভারকে। বইটিতে যেসব বিশ্বরেকর্ড লিপিবদ্ধ করা ছিল, সেগুলো সম্পর্কে মানুষের আগ্রহ ছিল তুঙ্গে। ব্রিটেনের মানুষ আগ্রহভরে বিচিত্র সব বিশ্বরেকর্ড সম্পর্কে জানার চেষ্টা করত। তারা আগ্রহভরে সেসব পাঠ করত। শুধু তা-ই নয়, এই বইয়ে নিজের নাম তোলার জন্য অনেকে নিজে থেকে বিশ্বরেকর্ড গড়ার চেষ্টা করে যাচ্ছিল।

বর্তমানে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস একটি আন্তর্জাতিক কর্তৃপক্ষের মর্যাদা লাভ করেছে, যারা পৃথিবীর বিভিন্ন বিশ্বরেকর্ডের স্বীকৃতি প্রদান করে। অসংখ্য অদ্ভুত বিশ্বরেকর্ড রয়েছে বইটিতে। স্যার হিউ বিভার ও তার বন্ধুদের বাদানুবাদ থেকে যে বইয়ের জন্ম, সেই বই আজ পৃথিবীজুড়ে সবচেয়ে বেশি বিক্রিত বইগুলোর একটি।

এইচআর