হঠাৎ জ্বালানি তেলের অতিরিক্ত মূল্যবৃদ্ধিতে শুকবার রাত থেকেই অস্বস্তি দেখা দিয়েছে সাধারণ মানুষের মাঝে। এনিয়ে সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকসহ দেশী ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রচার হচ্ছে নিউজ। এনিয়ে কলকাতার প্রভাবশালী পত্রিকা আন্দবাজার ‘‘তেলে আগুন! রাতারাতি চাপে বাংলাদেশের জনতা, বাস কম, গুনতে হচ্ছে বেশি ভাড়া’’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। নিম্নে তা তুলে ধরা হলো।
‘এক লাফে বাংলাদেশে বিপুল দাম বাড়ল পেট্রোপণ্যের। পেট্রল এবং ডিজেলের লিটার প্রতি দাম বেড়েছে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ টাকা। শুক্রবার রাত ১২টার পর থেকে কার্যকর হয়েছে এই দাম। অকটেন, কেরোসিনেরও দাম বেড়েছে।
বাংলাদেশে এক লিটার পেট্রলের দাম বেড়েছে ৪৪ টাকা। আগে ছিল ৮৬ টাকা। এখন তা বেড়ে হয়েছে ১৩০ টাকা। লিটার প্রতি ডিজেলের দাম বেড়েছে ৩৪ টাকা। আগে এক লিটার ডিজেলের দাম ছিল ৮০ টাকা। এখন তা বেড়ে হল ১২৪ টাকা। অক্টেনের দাম লিটার প্রতি বেড়েছে ৪৬ টাকা। আগে এক লিটার অকটেনের দাম ছিল ৮৯ টাকা। এখন তা বেড়ে হল ১৩৫ টাকা। কেরোসিনের দাম লিটার প্রতি বেড়েছে ৩৪ টাকা। এই দাম বাড়ার কারণে মাথায় হাত সাধারণ মানুষের।
জ্বালানির দামে ভর্তুকি তুলে দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। সে কারণেই আচমকা দাম বৃদ্ধি।
কিন্তু হঠাৎ কেন ভর্তুকি তুলে দিল সরকার? দেশের বিদ্যুৎ, জ্বালানি এবং খনিজ সম্পদ মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, গত ছ’ মাসে পেট্রোপণ্য বিক্রিতে আট হাজার ১৪ কোটি টাকা লোকসান করেছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি)।
ইউক্রেনে যুদ্ধ। তার প্রভাবে আন্তর্জাতিক বাজারেও দাম বাড়ছে জ্বালানির। আমদানি স্বাভাবিক রাখতে বাধ্য হয়েই জ্বালানির দাম বাড়াল সরকার।
জ্বালানি এবং খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নজরুল হামিদ বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম কে জানিয়েছেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার পেট্রোপণ্যের দাম কমানো যায় কি না, সেই বিষয়ে আলোচনা করা হবে। এর আগে ২০১৬ সালে পেট্রোপণ্যের দাম কমেছিল সে দেশে।
এর আগে বাংলাদেশে শেষ বার পেট্রোপণ্যের দাম বেড়েছিল ২০২১ সালের নভেম্বরে। তখন প্রতি লিটার পেট্রল এবং কেরোসিনের দাম বেড়েছিল ১৫ টাকা করে।
বাংলাদেশের গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, শুক্রবার রাতে জ্বালানির দামবৃদ্ধির কথা ঘোষণা হতেই পেট্রল পাম্পে লাইন দেন শয়ে শয়ে সাধারণ মানুষ। ভেবেছিলেন, মাঝরাতে দাম বাড়ার আগে জ্বালানি কিনে নেবেন। কিন্তু দীর্ঘ লাইন থাকায় বেশির ভাগ ক্রেতার পক্ষেই আগের দামে তেল কেনা সম্ভব হয়নি।
দাম বাড়ছে শুনে রাত ১০টায় পেট্রল পাম্পে মোটরবাইকের জ্বালানি অক্টেনের জন্য লাইন দিয়েছিলেন আতাউর শেখ। রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত লাইনে দাঁড়িয়ে পেয়েছেন মাত্র ১০০ টাকার অক্টেন। ‘‘এ ভাবে দাম বাড়ালে গরিবরা মরবে। এখন আমাদের ধুঁকে ধুঁকে মরার পালা।’’
আতাউরের মতো অনেকে শুক্রবার রাতে একটু সস্তায় জ্বালানি কেনার জন্য লাইন দিয়েছিলেন। প্রত্যেক গ্রাহককে ১০০ থেকে ২০০ টাকার বেশি জ্বালানি দেওয়া হয়নি। শুক্রবার রাত ১২টার পর থেকে নতুন দামে তেল বিক্রি শুরু হয় পেট্রল পাম্পগুলিতে। তার পর থেকেই ভিড় কমতে থাকে।
শনিবার সকাল থেকেই ঢাকার রাস্তায় কমে গিয়েছে বাস। দীর্ঘ ক্ষণ দাঁড়িয়ে রয়েছেন, তবু বাস পাচ্ছেন না যাত্রীরা। তাঁদের অভিযোগ, নির্ধারিত ভাড়ার থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।
দিশারী পরিবহণের এক কর্মী গণমাধ্যমে জানিয়েছেন, রোজ ৬০টি বাস চলে। শনিবার ১০টি বাস চলছে। বাসভাড়া ঠিক না করে তেলের দাম বাড়িয়ে দেওয়ার ফলেই এই সমস্যা। ওই কর্মীর দাবি, পেট্রল পাম্পে গিয়ে তেল পাওয়া যাচ্ছে না। তাঁর আশঙ্কা, এ রকম চলতে থাকলে রবিবার যাত্রীদের সঙ্গে বাসচালক, কন্ডাক্টরের মারামারি হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হবে।
জয়নাল আবেদিন নামে এক যাত্রী বলেছেন, ‘‘যে দূরত্ব অতিক্রম করতে শুক্রবার পর্যন্ত বাসভাড়া ছিল ১০ টাকা, শনিবার তা ৩০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালে স্বাস্থ্যপরীক্ষার জন্য যাচ্ছিলাম। রাস্তাঘাটের যা অবস্থা, তাতে আজ আর তা করা হবে না।’’
জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর শনিবার সকাল থেকে চট্টগ্রামে গণপরিবহণ চলাচল কমে গিয়েছে। আনুষ্ঠানিক কোনও পরিবহণ ধর্মঘটের ডাক না দিলেও বিভিন্ন স্থানে বাস চলাচলে বাধা সৃষ্টি করছে পরিবহণ কর্মীরা। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
চট্টগ্রামের একটি বাসমালিক সংগঠনের মহাসচিব গোলাম রসুল বাবুল জানিয়েছেন, এখনই ধর্মঘটের পরিকল্পনা তাদের নেই।
জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর বাংলাদেশের উত্তরের জেলা বগুড়ার বেশির ভাগ বাসমালিকেরা পূর্বঘোষণা ছাড়াই বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ। এতে বগুড়া থেকে আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার বাস চলাচল কমে গিয়েছে। অল্প কিছু বাস চললেও তা চাহিদার তুলনায় অনেক কম। উপরন্তু এই সব বাসে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি টাকা নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা।
পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির ফলে চাপে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির অর্থ, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি। ফলে আম আদমির পকেটে চাপও দ্বিগুণ হবে।
এমনিতেই বিশ্বের অনেক দেশের মতো অতিমারির প্রভাব এখনও পুরোপুরি কাটিয়ে ওঠেনি বাংলাদেশের অর্থনীতি। তার উপর এই হারে পেট্রোপণ্যের দাম বৃদ্ধি সাধারণের কাছে বিপুল চাপ হিসাবেই দেখা দিতে চলেছে বলে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমের দাবি।
কম খরচে গন্তব্যে পৌঁছনোর জন্য বহু নিত্যযাত্রী অন্যের মোটরবাইকে চেপে যাতায়াত করেন। বদলে ভাড়া মিটিয়ে দেন। সেই ‘রাইড শেয়ারিং’ মোটরসাইকেল চালকেরাও বেশি ভাড়া হাঁকাচ্ছেন বলে অভিযোগ যাত্রীদের। শুক্রবার যে রাস্তা যেতে যাত্রীদের ১০০ টাকা দিতে হয়েছিল, শনিবার তার জন্য দিতে হচ্ছে ১৫০ টাকা।’
ইএফ