আমাদের পিঠ ঠেকে গেছে

দেশবাসীকে ধৈর্য ধরতেই হবে: জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী

মো. মাসুম বিল্লাহ প্রকাশিত: আগস্ট ৬, ২০২২, ০৩:০০ পিএম

বিশ্ববাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে বাংলাদেশে সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে সরকার। জিজেল ও কেরোসিনের দাম ৩৪ টাকা বাড়িয়ে ১১৪ টাকা। অকটেন ৪৬ টাকা বাড়িয়ে ১৩৫ টাকা এবং পেট্রোল ৪৪ টাকা বাড়িয়ে ১৩০ টাকা নির্ধারণ করেছে সরকার। হঠাৎ করে সব ধরনের তেলের দাম বাড়ানোর কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। তবে কী কারণে সরকার জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে, এবিষয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন,  আমাদের পিঠ ঠেকে গেছে, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে তেলের দাম বাধ্য হয়েই বাড়িয়েছে সরকার। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলে দেশেও তেলের দাম কমানো হবে।

শনিবার (৬ আগস্ট) সকালে সময় সংবাদকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন তিনি।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনকে ব্যাপক লোকসানের হাত থেকে বাঁচাতেই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। যত্রতত্র ডিজেল ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা ছাড়া উপায় নেই। দেশবাসীকে ধৈর্য ধরতেই হবে। জ্বালানি তেলের নতুন দাম সমাজের সবার কাছে সহনীয় হবে না। অর্থনীতির স্বার্থেই সরকারের কাছে মূল্যবৃদ্ধি ছাড়া উপায় ছিল না।

তিনি বলেন, এই মুহূর্তে কলকাতায় ডিজেলের বাজারমূল্য ১১৪ টাকা প্রতি লিটার, যদি ৯৪ টাকা করে ডলার হয়। এখন ডলারের দাম তো আরও বেড়ে গেছে, সেখানে আমরা ডিজেল বিক্রি করেছি ৮০ টাকায়। এই বিরাট ব্যবধানের কারণে বিশাল পরিমাণ তেল অবৈধভাবে পাচার হওয়ার একটা সম্ভাবনা থাকে। বিজিবিকে বলা হয়েছে এবং সীমান্ত কড়া পাহারা বসানো হয়েছে।

নসরুল হামিদ বলেন, সব দেশেই দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। আরব আমিরাতের কথা যদি বলি সেখানে ডিজেলের এখনকার দাম ১২২ টাকা করে। আমাদের অবস্থা হয়েছে জাহাজের দাম বেড়ে গেছে, তেলের দাম লাগামহীন হয়ে গেছে। কিছুটা সীমিত হলেও আরেকটু যদি বেশি কমত তাহলে আমাদের এই পর্যায়ে যেতে হতো না, আমাদের পিঠ ঠেকে গেছে।

জ্বালানী প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমি বার বার বলে আসছি আপনারা সাশ্রয়ী হন, তেল কম ব্যবহার করেন, গাড়ি কম ব্যবহার করেন। কারণ, যানবাহন সেক্টরে সবচেয়ে বেশি ডিজেল ব্যবহার করা হয়। মাত্র ১০ শতাংশ ডিজেল ব্যবহার হতো বিদ্যুতে। আমি মনে করি, এখনো যানবহন নিয়ন্ত্রণ করার সময় আছে।  

তিনি বলেন, বিশ্বে দামের যে ঊর্ধ্বগতি এর সঙ্গে আমাদের সমন্বয় না থাকলে কিন্তু বিপিসির আরও অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে। কারণ, বিপিসি এখন উচ্চমূল্যের ডলার কিনে তাকে তেল আমদানি করতে হচ্ছে। তেলের এই অবস্থাটা বেশিদিন থাকবে না যদি ডলারের দাম কমে আসে কারণ, বিপিসির সর্বনিম্ন খরচ যদি ৭৯-৮০ ডলারের মধ্যে থাকে তাহলে সমস্যা হয় না। সবশেষ বিপিসি তেল কিনেছে ১৩৫ ডলারের মতো দিয়ে। তার আগে ১৪০ ছিল এমনকি ১৬০-১৭০ ও হয়ে গিয়েছিল। তখন আমরা দাম বৃদ্ধি করিনি কারণ আমরা বাজার পর্যবেক্ষণ করছিলাম, আমরা দেখতে চাচ্ছিলাম আমরা নিজেদের অর্থ কতটুকু খরচ করতে পারি।

আমি মনে করি, যদি বিশ্ববাজারে দাম কমে আসে তাহলে আমরাও কমাব আমরা সেই সিদ্ধান্তই নিয়েছি। অ্যাডজাস্টমেন্ট দুই দিকেই থাকা উচিত। বৃদ্ধি সময় থাকা উচিত, কমার সময়ও থাকা উচিত। সবাইকে আমি অনুরোধ করব এত নার্ভাস হওয়ার কিছু নেই।

বিশ্ববাজারে তেলের দাম কম এই ট্রেন্ডের মধ্যেও বাংলাদেশে কেন বাড়ানো হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, দামের ট্রেন্ডটা কম, তবে আমাদের বৃদ্ধিটাও ওরকমভাবে বৃদ্ধি হয়নি। ১৪০ বা ১৭০ ডলারে আমাদের যেভাবে বৃদ্ধি করার কথা ছিল সেটা তো আরও অনেক বেশি ছিল। কিন্তু আমি চিন্তা করছি যে সহনীয় পর্যায়ে রাখা যায় কিনা। কিন্তু আমি মনে করি, এটা তারপরও সবার জন্য এটা সহনীয় না। কিন্তু আমাদের এখন এ ছাড়া কোনো উপায় নেই।

তিনি আরও বলেন, এখন যদি এই দাম আমাদের দামের কাছে চলে আসে তাহলে আমরা আবার কমিয়ে দেব। এখন যে দাম আছে সেটা একটা স্থিতিশীল দাম আছে বলে আমি মনে করি। কারণ আমরা অনেক দিন থেকেই তো এটা পর্যবেক্ষণ করছি। পার্শ্ববর্তী দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমরা দামটা ঠিক করেছি। ভারতে ১১৪ টাকা করে ডিজেল বিক্রি করে আমরাও ১১৪ টাকা নির্ধারণ করেছি। ডিজেলটাই হচ্ছে সব থেকে বড় বিষয় কারণ, ডিজেলটা অতিমাত্রায় ব্যবহার করা হয়।


ইএফ