ডিসি সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর ২৫ নির্দেশনা

‘খাদ্য ও চিকিৎসার অগ্রাধিকার দিতে ইভিএম প্রকল্প বাতিল হয়েছে’

মো. মাসুম বিল্লাহ প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৪, ২০২৩, ১২:০৩ পিএম

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আর্থিক কারণে ইভিএম প্রকল্প বাতিল করা হয়নি, জনগণের খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তায় অগ্রাধিকার দিতেই এ প্রকল্প বাতিল করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলের ডিসি সম্মেলনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন। অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার জি এস এম জাফরউল্লাহ, নরসিংদী জেলা প্রশাসক আবু নইম মোহাম্মদ মারুফ খান, বান্দরবানের জেলা প্রশাসক (ডিসি) ইয়াসমিন পারভীন তিবরীজি প্রমুখ।

ডিসিদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্তরিকতা ও সেবার মানসিকতা নিয়ে কাজ করতে হবে। শুধু চাকরি করলেই হবে না, জনসেবাও করতে হবে। দেশের মানুষের প্রতি কর্তব্যবোধ ছাড়া সফল হওয়া যায় না। 

এ সময় জেলা প্রশাসকদের ২৫ দিক নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সরকারপ্রধানের দেওয়া ২৫ দফা নির্দেশনা হচ্ছে—

১. খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা গ্রহণ করতে হবে। পতিত জমিতে ফসল ফলাতে হবে। কোনো জমি যেন অনাবাদি না থাকে সে লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে;

২. নিজেরা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে এবং জনগণকে এ ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।

৩. সরকারি অফিসগুলোতে সাধারণ মানুষ যেন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বিঘ্নে যথাযথ সেবা পায় তা নিশ্চিত করতে হবে। সেবা প্রত্যাশীদের সন্তুষ্টি অর্জনই যেন হয় সরকারি কর্মচারীদের ব্রত;

৪. সরকারি তহবিল ব্যবহারে কৃচ্ছতা সাধন করতে হবে;

৫. এসডিজি স্থানীয়করণের আওতায় নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রাসমূহ অর্জনে তৎপরতা জোরদার করতে হবে;

৬. দেশে একজনও ভূমিহীন ও গৃহহীন থাকবে না। গৃহহীনদের জন্য গৃহনির্মাণ, ভূমিহীনদের কৃষি খাসজমি বন্দোবস্তসহ সকল সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে যেন প্রকৃত অসহায়, দুস্থ ও সুবিধাবঞ্চিত প্রান্তিক শ্রেণির মানুষ সুযোগ পায় তা নিশ্চিত করতে হবে। জমি ও ঘর প্রদানের পাশাপাশি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে;

৭. শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের পাঠদান কার্যক্রমের মানোন্নয়নে উদ্যোগী হতে হবে। অপেক্ষাকৃত দুর্গম এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে;

৮. কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রসমূহ যেন কার্যকর থাকে তা প্রতিনিয়ত তত্ত্বাবধান করতে হবে;

৯. শিশু-কিশোরদের শারীরিক-মানসিক বিকাশের লক্ষ্যে তাদের জন্য প্রত্যেক এলাকায় সৃজনশীল চর্চা, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ও ক্রীড়া সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে;

১০. নাগরিকদের সুস্থ জীবনাচারের জন্য জেলা ও উপজেলায় পার্ক, খেলার মাঠ প্রভৃতির সংরক্ষণ এবং নতুন পার্ক ও খেলার মাঠ তৈরির উদ্যোগ নিতে হবে;

১১. পরিবর্তনশীল বিশ্বের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সর্বোচ্চ সুবিধা নিতে উচ্চ প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন দক্ষ শ্রমশক্তি গড়ে তুলতে কাজ করতে হবে;

১২. সরকারি দপ্তরসমূহের ওয়েবসাইট নিয়মিত হালনাগাদ করতে হবে। নিজ নিজ জেলার সরকারের উন্নয়ন, অগ্রগতি ও সাফল্য ওয়েবসাইটে তুলে ধরতে হবে;

১৩. জনসাধারণের মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি ও ইন্টারনেটের নিরাপদ ব্যবহার নিশ্চিতকরণে কাজ করতে হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহার, গুজব ইত্যাদি রোধে উদ্যোগ নিতে হবে;

১৪. আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির যেন কোনোভাবেই অবনতি না হয় সে লক্ষ্যে নজরদারি জোরদার করতে হবে;

১৫. মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে কেউ যেন সম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে না পারে সে বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে;

১৬. মাদক, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস দূর করতে হবে। নিরীহ ধর্মপ্রাণ মানুষ যাতে জঙ্গিবাদে জড়িত না হয় সে জন্য সচেতনতা তৈরির উদ্যোগ নিতে হবে। যুবসমাজকে মাদক সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ থেকে মুক্ত রাখতে হবে;

১৭. বাল্যবিবাহ, ইভটিজিং, খাদ্যে ভেজাল, নকল পণ্য তৈরি ইত্যাদি অপরাধ প্রতিরোধে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে হবে

১৮. বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখতে, কৃত্রিম সঙ্কট রোধ ও পণ্যমূল্য স্বাভাবিক রাখতে বাজার মনিটরিং কার্যক্রম জোরদার করতে হবে;

১৯. সরকারি জমি, নদী, বনভূমি, পাহাড়, প্রাকৃতিক জলাশয় প্রভৃতি রক্ষায় কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। ভূমির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিতকরণের উদ্দেশ্যে নতুন সরকারি প্রতিষ্ঠান স্থাপনে ভবনের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণকে প্রাধান্য দিতে হবে;

২০. নিয়মিত নদী ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নাব্যতা বৃদ্ধি করতে হবে। সুইচগেট বা অন্য কোনো কারণে যেন জলাবদ্ধতার সৃষ্টি না হয় সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। বিশেষ করে জলাবদ্ধতার জন্য যেন উৎপাদন ব্যাহত না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে;

২১. বজ্রপাতপ্রবণ এলাকায় তালগাছ রোপণ করতে হবে;

২২. পর্যটন শিল্পের বিকাশ এবং রক্ষণাবেক্ষণে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে । নতুন নতুন পর্যটন স্পট গড়ে তুলতে হবে;

২৩. জেলার নিজস্ব ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি রক্ষা এবং জেলাভিত্তিক বিখ্যাত পণ্যসমূহের প্রচার, বিপণন এবং ব্রান্ডিং করতে হবে;

২৪ জনস্বার্থকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে রেখে সেবার মনোভাব নিয়ে যেন সরকারি দপ্তরগুলো পরিচালিত হয় সেলক্ষ্যে মনিটরিং জোরদার করতে হবে;

২৫. জেলার সকল সরকারি দপ্তরের কার্যক্রমসমূহ যথাযথ সমন্বয়ের মাধ্যমে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত, সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ তথা স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে আপনাদের ব্রতী হতে হবে।

টিএইচ