কনটেইনার খালাসে কঠোর অবস্থান নিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে বন্দরে ধারণক্ষমতার ৭২.২৫ শতাংশ পণ্যবাহী কনটেইনারের স্তূপ রয়েছে। মূলত রোজা ঘিরে ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়াতেই ব্যবসায়ীরা ধীরগতিতে বন্দর থেকে পণ্য খালাস করছে। বিদ্যমান পরিস্থিতি সামাল দিতে রোজায় ভোগ্যপণ্য দ্রুত খালাস না নিলে চারগুণ বাড়তি চার্জ আরোপের ঘোষণা দিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। তারপরও ব্যবসায়ীরা ধীরগতিতে পণ্য খালাস করছে।
ব্যবসায়ীদের অজুহাত, বর্তমানে পরিবহন খরচ ১০০ শতাংশের ওপরে বাড়ায় পণ্য ধীরগতিতে পণ্য খালাস হচ্ছে। আর পরিবহন মালিকদের দাবি, কনটেইনারের চাপ বাড়লে অটোমেটিকভাবে ভাড়াও বেড়ে যায়। চট্টগ্রাম বন্দর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ডে ৫৩ হাজার ৫১৮ টিইইউএস (২০ ফুট দৈর্ঘ্যরে একক কনটেইনার) কনটেইনার রাখার ধারণক্ষমতা রয়েছে। বর্তমানে বন্দর ইয়ার্ডে ধারণক্ষমতার ৭৫ শতাংশের বেশি কনটেইনার রয়েছে। পাশাপাশি জেনারেল কার্গো বার্থ (জিসিবি) ও ন্যাশনাল কনটেইনার টার্মিনালেও (এনসিটি) বিপুলসংখ্যক খালি কনটেইনার পড়ে রয়েছে।
মূলত প্রতিবছরই রোজায় সড়কপথে কনটেইনার পরিবহনের চাপ বাড়ে। বন্দর থেকে আমদানি করা কনটেইনার ঢাকায় যায় সবচেয়ে বেশি। স্বাভাবিক সময়ে একটি পণ্যবাহী ট্রাকের ভাড়া থাকে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকা হলেও বর্তমানে ট্রাক ভাড়া সর্বোচ্চ ৩৫ হাজার টাকায় দাঁড়িয়েছে। আর চট্টগ্রাম থেকে একটি কাভার্ড ভ্যানের ভাড়া সর্বোচ্চ ১৯ হাজার টাকা হলেও এখন নেয়া হচ্ছে ৩৩ হাজার টাকা।
তাছাড়া প্রাইমমুভার ও ফ্ল্যাটবেডের মধ্যে পাঁচ ক্যাটাগরির পরিবহন রয়েছে। ওসব পরিবহনে বাণিজ্যিক পণ্য পরিবহন করা হয়। ওসব গাড়ির গড় ভাড়া ১২.৫ শতাংশ বেড়েছে। আগে ছিল ৪০ হাজার টাকা। এখন তা ৪৫ হাজার টাকায় উঠানামা করছে।
সূত্র জানায়, পরিবহন ভাড়া মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা কনটেইনার খালাস করতে চাইছে না। কনটেইনার পরিবহন ভাড়া এখন একশ শতাংশের ওপরে বেড়ে গেছে। ফলে ব্যবসায়ীদের মধ্যে বন্দর থেকে কনটেইনার খালাসে ধীরগতি দেখা দিচ্ছে। বন্দর থেকে ট্রেইলার, ট্রাক কাভার্ড ভ্যান, প্রাইমমুভার, ফ্ল্যাটবেডসহ অনেক গাড়িতে পণ্য পরিবহন হয়ে থাকে। একেক পরিবহনের ভাড়া একেক রকম। আর তা কনটেইনারের চাহিদা অনুসারে বাড়ে আর কমে। এখন কনটেইনার বেড়ে যাওয়ায় পরিবহনের সংকট রয়েছে।
এদিকে এ বিষয়ে কনজিউমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন জানান, প্রতিবছর দেখা যায় ব্যবসায়ীরা রোজার পণ্যগুলো খালাস না করে বন্দরকে আড়ত বানায়। এবারও তারা একই পদ্ধতি নিচ্ছে। কারা কারা ভোগ্যপণ্য নিয়ে এসে খালাস নিচ্ছে না তা প্রকাশ করলে দাম বাড়ানোর আসল কারিগর বের হবে। ফলে প্রকৃত ব্যবসায়ীরাও মুনাফালোভী তকমা থেকে মুক্তি পাবে।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক জানান, অধিকাংশ ব্যবসায়ী রোজা এলে বন্দর থেকে পণ্য খালাস করতে সময় নেন। এবারও একই পরিস্থিত সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে। ফলে একদিকে বন্দরে পণ্যবাহী কনটেইনার জট দেখা দিয়েছে, অন্যদিকে ওদিকে বাজারে পণ্যের সংকটের আশঙ্কা বাড়ছে। ওই সুযোগে ব্যবসায়ীরা ভোক্তার বাড়তি অর্থ হাতিয়ে নেবে। এবার কনটেইনার খালাসে চট্টগ্রাম বন্দর কঠোর হয়েছে। ১০ মার্চ থেকে কনটেইনার খালাস না নিলে অতিরিক্ত চার গুণ হারে চার্জ নেওয়া হবে। এরই মধ্যে বিষয়টি বন্দর ব্যবহারকারীদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।