ইতিহাসে দুটি অসহযোগ আন্দোলনের কথা স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে। একটি মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে।
অসহযোগ আন্দোলন মহাত্মা গান্ধী ও ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস পরিচালিত ভারতব্যাপী অহিংস গণ-আইন অমান্য আন্দোলনগুলির মধ্যে সর্বপ্রথম। ১৯২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ১৯২২ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলা এই আন্দোলন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে “গান্ধী যুগ”-এর সূত্রপাত ঘটায়।
আরেকটি ১৯৭১ সালের মার্চে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পাকিস্তান সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, এই ২৫ দিনেই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে যায়।
মুজিবের অসহযোগ আন্দোলনের স্থায়িত্ব ছিল মাত্র ২৫ দিন। এই ২৫ দিনে শেখ মুজিব অসাধ্য সাধন করেন। তখন পাকিস্তানে সামরিক সরকার পুরোপুরি কার্যকর ছিল। কিন্তু এই ২৫ দিন পূর্ব বাংলা তথা বাংলাদেশের মানুষ মুজিবের নির্দেশেই পরিচালিত হয়েছে। পাকিস্তান সরকারের শাসন ওই সময় সম্পূর্ণ অচল হয়ে যায়। সরকারি-বেসরকারি প্রশাসন থেকে শুরু করে পুলিশ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সামরিক সরকারের নির্দেশ উপেক্ষা করে মুজিবের নির্দেশে চলেছে।
[271035]
পূর্ব বাংলায় সাড়ে সাত কোটি মানুষ ছিল মুজিবের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। একজন নেতার প্রতি এমন আনুগত্য বিশ্বইতিহাসে বিরল। শুধু শেখ মুজিবকে খুশি রাখার জন্য সামরিক গভর্নর জেনারেল টিক্কা খানকে শপথ গ্রহণ করাননি তৎকালীন প্রধান বিচারপতি বিএ সিদ্দিকী। ১৯৭১-এর ৭ মার্চের ভাষণ রিলে করতে না দেওয়ায় বেতার ও টিভি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দুটি ভবন তালা দিয়ে সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়। সামরিক সরকার নতি স্বীকার করতে বাধ্য হয়। ৮ মার্চ সকালে (সাড়ে ৭টায়) ৭ মার্চের ভাষণ রিলে করার মাধ্যমে বেতার-টিভির সম্প্রচার শুরু হয়।
১৫ মার্চ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ঢাকায় আসার পর বাঙালি বাবুর্চিরা তার জন্য রান্না করতে অস্বীকার করেন। অসহায় কর্মকর্তারা ৩২ নম্বরের দ্বারস্থ হন। ৩২ নম্বর বাসভবন থেকে অনুমতির পর বাবুর্চিরা রান্না করতে সম্মত হয়।
অবস্থাটা এমন পর্যায়ে চলে যায় যে, বিশ্বের নামিদামি পত্রপত্রিকা ও প্রচার মাধ্যম শেখ মুজিবের ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর সড়কের বাসভবনকে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটের সঙ্গে তুলনা করে।
[271036]
পাকিস্তানি সামরিক কর্মকর্তাদের লেখা গ্রন্থে তারা লিখেছেন, ওই সময় পূর্ব বাংলার ৭টি সেনানিবাস ছাড়া আর কোথাও পাকিস্তান সামরিক সরকারের কর্তৃত্ব ছিল না। পাকিস্তান বিমানবাহিনীর সাবেক প্রধান পরবর্তীকালে রাজনীতিবিদ এয়ার মার্শাল আসগর খান ১৯৭১-এর মার্চে ঢাকায় এসেছিলেন। ওই সময় তিনি শেখ মুজিবের সঙ্গেও দেখা করেছিলেন।
আসগর খান পাকিস্তানে গিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘পূর্ব পাকিস্তানে সেনানিবাসগুলো ছাড়া সর্বত্র মুজিবের শাসন চলছে।’
এবার বিএনপি নির্বাচন বর্জন ও অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছে। বুধবার দুপুরে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির পক্ষ থেকে নতুন এই আন্দোলনের ডাক দিয়ে দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ৭ জানুয়ারি ডামি ভোটের খেলা বর্জন করুন। ভোটগ্রহণে নিযুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দায়িত্ব পালনে বিরত থাকুন।
তিনি বলেন, সরকারকে সব প্রকার ট্যাক্স, খাজনা, ইউটিলিটি বিল এবং অন্যান্য প্রদেয় স্থগিত রাখুন। ব্যাংকগুলো সরকারের লুটপাটের অন্যতম মাধ্যম, বিধায় ব্যাংকে লেনদেন যথাসম্ভব এড়িয়ে চলুন। রাজনৈতিক নেতাকর্মীসহ মিথ্যা ও গায়েবি মামলায় অভিযুক্তরা মামলায় হাজিরা দেওয়া থেকে বিরত থাকুন।
রিজভী বলেন, জনগণের আন্দোলনের ফলে দেশে সত্যিকারের গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা হলে এসব অসহযোগিতায় ক্ষতিগ্রস্তরা যথাযথ ক্ষতিপূরণ এবং সুবিচার পাবেন।
[271044]
স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে আমাদের অনেক সাথী জীবন দিয়েছেন, গুম হয়েছেন, বন্দি ও আহত হয়েছেন। কিন্তু গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার লড়াই চলছে ও চলবে। জনগণের গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও লড়াইয়ের বিজয় অবশ্যম্ভাবী ও অনিবার্য।
এইচআর