তীব্র তাপদাহ ও ভ্যাপসা গরম অতিষ্ঠ জনজীবন। এ অবস্থায় গরম থাকে বাঁচাতে বৃষ্টির জন্য রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ নামাজ বা ইস্তিস্কার (পানির জন্য প্রার্থনা) নামাজ আদায় করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রাজধানীর পূর্ব রামপুরার সালামবাগ জামে মসজিদ ও জামিয়া আনওয়ারুল উলূম মাদরাসা প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত এ বিশেষ নামাজে অংশ নেন এলাকার মুসল্লিরা।
ইস্তিস্কার নামাজ আদায় করে গরম থেকে রক্ষা পেতে বৃষ্টি চেয়ে মোনাজাত করা হয়। আল্লাহর কাছে চাওয়া হয় পানাহ।
প্রায় একই সময়ে রাজধানীর আফতাবনগরে আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের আয়োজনে বিশেষ ইস্তিস্কার নামাজ আদায় করা হয়। শায়খ আহমাদুল্লাহ হুজুরের ইমামতিতে এ নামাজ আদায় করা হয়। এ সময় নিজেদের গুনাহ প্রতি ক্ষমা চেয়ে আল্লাহ কাছে মাফ ও বৃষ্টি দেওয়ার জন্য দোয়া করা হয়।
রামপুরার সালামবাগ জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত এ বিশেষ নামাজে অংশ নেওয়া মহিউদ্দিন আহমেদ নামের একজন বলেন, কয়েকদিন ধরে প্রচণ্ড গরম পড়ছে। বাসা থেকে বাইরে বের হওয়া কষ্টকর হয়ে পড়েছে। রুমে সারাক্ষণ ফ্যান চালিয়েও স্বস্তি পাওয়া যাচ্ছে না।গরম থেকে বাঁচতে বৃষ্টি জন্য ঢাকায় বিশেষ নামাজতিনি বলেন, বৃষ্টি না হওয়ায় কারণে এবার এমন গরম পড়ছে। তাই এ গরম থাকে রক্ষা পেতে এবং বৃষ্টির জন্য আল্লাহর রহমত পেতে আজ আমরা ইস্তিস্কার নামাজ আদায় করেছি। আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা ও বৃষ্টির জন্য দোয়া করেছি। আশাকরি আল্লাহ আমাদের এ পরিস্থিতি থেকে রেহাই দেবেন।
ইস্তিস্কার নামাজ আদায় করা মো. মামুন নামের আর এক মুসল্লি বলেন, বৃষ্টির জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করার লক্ষ্যে ইস্তিস্কার নামাজ আদায়ের বিধান ইসলাম ধর্মে রয়েছে। কয়েক দিনের অতিরিক্ত গরমে মানুষের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। বৃষ্টিও হচ্ছে না। তাই ইস্তিস্কার নামাজ আদায় করে গরম থাকে মুক্তি পাওয়া ও বৃষ্টির জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আজ সকালে মসজিদ থেকে মাইকে ঘোষণা দেওয়া হয় বৃষ্টির জন্য ইস্তিস্কার নামাজ আদায় করা হবে। এ ঘোষণা শুনে মসজিদে যাই। সেখানে আমার মতো অনেকেই এ বিশেষ নামাজ আদায় করেন এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। আল্লাহ ছাড়া আমাদের রক্ষা করার কেউ নেই।
এদিকে বুধবারও দিনের তাপমাত্রা বাড়ার পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। তাপমাত্রা বেড়ে ফের দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ শুরু হতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।গরম থেকে বাঁচতে বৃষ্টি জন্য ঢাকায় বিশেষ নামাজগত শনিবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছিল যশোরে। এটিই ছিল চলতি মৌসুমে সবচেয়ে বেশি সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। ওইদিন দিনের তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায় ৪২ দশমিক ৪ ও পাবনার ঈশ্বর দিতে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়েছিল।
ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দুদিন কমার পর সোমবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল খুলনা, যশোর ও চুয়াডাঙ্গায়। ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এখনো দেশের বড় একটি অংশ জুড়ে মৃদু থেকে তীব্র তাপপ্রবাহ বইছে। মানুষের দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। তাপমাত্রা কিছুটা কমলেও তা জনজীবনে স্বস্তি আনতে পারেনি।
গরম থেকে বাঁচতে বৃষ্টি জন্য ঢাকায় বিশেষ নামাজআবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, কোনো বিস্তৃত এলাকাজুড়ে নির্দিষ্ট সময় ধরে তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি থাকলে মৃদু, ৩৮ থেকে ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি থাকলে মাঝারি ও ৪০ থেকে ৪১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে তীব্র এবং ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি থাকলে তাকে অতি-তীব্র তাপপ্রবাহ বলা হয়।
মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে আগামী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে আবহাওয়াবিদ মো. হাফিজুর রহমান জানান, সিলেট বিভাগের দু`এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলা বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
এ সময়ে সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বিরাজ করতে পারে বলেও জানান তিনি।
হাফিজুর রহমান আরও জানান, রাজশাহী, পাবনা, খুলনা, বাগেরহাট, যশোর, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। ময়মনসিংহ, মৌলভীবাজার ও রাঙ্গামাটি জেলাসহ ঢাকা, রংপুর ও বরিশাল বিভাগ এবং রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের অবশিষ্টাংশের উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।
বুধবার চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু`এক জায়গায় ঝড়-বৃষ্টি হতে পারে জানিয়ে এ আবহাওয়াবিদ বলেন, বুধবার সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বিরাজ করতে পারে।
আরএস